কবি মেহেরুননেসা, তাঁর মা ও ভাইকে টুকরো করে হত্যা করে কাদের মোল্লা-যুদ্ধাপরাধী বিচার-মামা বাহিনী প্রধানের সাক্ষ্য

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় সাক্ষী মামা বাহিনীর প্রধান সৈয়দ শহিদুল হক ওরফে মামা জবানবন্দী ও সাক্ষ্য প্রদান করেছেন।


জবানবন্দীতে তিনি বলেন, একাত্তরের ২৭ মার্চ কবি মেহেরুন নেসা, তাঁর মা ও ভাইকে টুকরা টুকরা করে হত্যা করেন কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা। এ ছাড়া বাঙলা কলেজের পল্লব হত্যাকা-ে জড়িত ছিলেন কাদের মোল্লা। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ে তাঁর ভূমিকা ছিল। মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নানা কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন কাদের মোল্লা। মঙ্গলবার বিচারপতি এটিএম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তে তিনি জবানবন্দীতে এ কথা বলেছেন।
অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আটক জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তার বাসা থেকে রান্না করা খাবার ও বই সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।একই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের ৬ষ্ঠ সাক্ষী শহীদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মাকে আসামি পক্ষের আইনজীবী দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেছেন। আজ আবারও তাকে জেরা করা হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জেরা অনুষ্ঠিত হয়।
মামার জবানবন্দী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে জবানবন্দী প্রদান করেছেন দ্বিতীয় সাক্ষী মামা বাহিনীর প্রধান সৈয়দ শহিদুল হক মামা তার জবানবন্দী প্রদান করেছেন। মঙ্গলবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃতে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ তিনি জবানবন্দী দেন। সৈয়দ শহিদুল হক মামা তার জবানবন্দীতে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ মিরপুরে কবি মেহেরুন নেসা, তাঁর দুই ভাই ও মাকে টুকরা টুকরা করে হত্যা করেছে আব্দুল কাদের মোল্লা, হাশেম হাশমী, আব্বাস চেয়ারম্যান, আক্তার গু-া, হাক্কা গু-া ও নেহারসহ অনেকে। সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা আমি শুনতে পাই। আরেকটি ঘটনা হলোÑ ২৯ মার্চ ঢাকার ঠাটারিবাজার (কাপ্তানবাজার) থেকে পল্লব ওরফে টুনটুনিকে ধরে নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর মুসলিমবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর প্রথম তাঁর আঙ্গুল কাটা হয়। পরে তাঁকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে ৫ এপ্রিল হত্যা করা হয়। এ হত্যার সঙ্গে কাদের মোল্লা, আক্তার গু-াসহ আগে যাদের নাম বলেছি তারা ছিল।
জবানবন্দীতে তিনি বলেন, একাত্তর সালে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা হয়। সে মামলায় যারা আমার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন ২৫ মার্চ ভয়াল রাতে তাদের নির্মমভাবে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে কাদের মোল্লা, আফসার, নেহার, হাশমী, আব্বাস চেয়ারম্যানসহ বিহারী ও জামাতীরা, যারা একই মায়ের সন্তান।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় এ্যাডভোকেট জহির উদ্দিনকে জাতীয় পরিষদের প্রার্থী করা হয়। এ প্রার্থীর স্বপক্ষে নৌকা প্রতীক নিয়ে আমরা ভোট চেয়েছি। নির্বাচনে অপজিশন প্রার্থী হিসেবে কুখ্যাত গোলাম আযম দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছে। আঞ্জুমান মহাজেরীর পক্ষে এ্যাডভোকেট দেওয়ান বারাসাত হাতি মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। এক পর্যায়ে দেওয়ান সাহেব গোলাম আযমের পক্ষে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।
এ সময় কাদের মোল্লাসহ জামায়াতী ও বিহারীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে, ‘গলি গলি মে শোর হে শেখ মুজিব পাকিস্তানকা দুশমন হে গাদ্দার হে’ সেøাগান দিতে থাকে। তিনি আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও ৩১ জানুয়ারি মিরপুর শত্রুমুক্ত হয়নি। ১৭ ডিসেম্বর আমি রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে যাই এবং সেখা থেকে বুদ্ধিজীবীর অনেক লাশ ও এক বস্তা চোখ উদ্ধার করি। পরে তা পাশে কবর দিয়ে দিই।
মিরপুরের নূর ডেকারেটরের ভেতরে এর মালিক নূর হোসেনের পরিবারের সদস্যদেরও একই কায়দায় হত্যা করে। নূর হোসেনের ৮০ বছরের বৃদ্ধা শাশুড়ি, যিনি নড়তে চড়তে পারতেন না, তিনিও এসব নরপশুর নৃশংসতা থেকে রেহাই পাননি। হাতের আঙুল কেটে, নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এরা তারপর গুলি করে হত্যা করে কলেজ ছাত্র পল্লবকে।’
তবে কাদের মোল্লা অসুস্থ বিধায় আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইবু্যুনাল মঙ্গলবার থেকে তাকে হাজির না করলেও চলবে বলে আদেশ দিয়েছিল। এ কারণে কাদের মোল্লার অনুপস্থিতিতে তার নৃশংসতা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের বর্ণনা দেন শহিদুল হক মামা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ‘মিরপুরের জল্লাদ বা কসাই’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিরপুর, রায়েরবাজার, কেরাণীগঞ্জ, সাভারসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নৃশংসতা চালিয়েছেন।
২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে তিনি বিহারী ও অবাঙালীদের সঙ্গে নিয়ে বাঙালীদের নিধনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে মিরপুর ও মোহাম্মদপুর ছিল তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা। মিরপুর ছাড়াও শিয়ালবাড়ী ও রূপনগরে অনেক মানুষকে তার প্রত্যক্ষ মদদে মাটি চাপা দেয়া হয়। কেরানীগঞ্জের শহীদনগরেও তিনি অনেক গণহত্যা চালিয়েছেন।
দ্বিতীয় সাক্ষী শহিদুল হক মামা জবানবন্দীতে বলেন, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে জামায়াত, ইসলামী ছাত্র সংঘ, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর পাশাপাশি অবাঙালী বিহারীদের নিয়ে কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে নেতৃত্ব দেন। ওই দুই এলাকায় যে সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনা ঘটেছে তা থেকে আব্দুল কাদের মোল্লা কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ছিলেন না।”
২৮ মে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, ষড়যন্ত্র ও উস্কানিসহ ৬টি অভিযোগ এনে কাদের মোল্লার বিরদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩ (২) (এ), ৩ (২) (জি), ৩ (২) (এইচ), ৩ (১), ৩ (২) (এ) (এইচ) অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২। গত ২০ জুন তার বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট (সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী ও সুলতান মাহমুদ। তারা ৯৬ পৃষ্ঠার এ সূচনা বক্তব্যে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ৬টি অভিযোগ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ৬টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, কবি মেহেরুন নেসাসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা, পল্লবীর আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জনকে হত্যা, খন্দকার আবু তালেবকে হত্যা, বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবসহ সাত জনকে হত্যা, কেরানীগঞ্জের শহীদনগর গ্রামের ভাওয়াল খানবাড়ি ও খাটারচরসহ পাশের আরও দুটি গ্রামের অসংখ্য লোককে হত্যার ঘটনা।
মুক্তিযুদ্ধকালে গোলাম মোস্তফা নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলাটি করেছিলেন কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষী মোস্তফার কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ খান। ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরও একটি মামলা হয় কাদের মোল্লাসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে। ওই মামলার অভিযোগে ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে গত বছরের ১ নবেম্বর জমা দেওয়া তদন্ত পুঁতিবেদনে হত্যা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। ২৮ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৬ এপ্রিল আব্দুল কাদের মোল্লার মামলাসহ তিনটি মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হয়।
সাঈদী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তার বাসা থেকে রান্না করা খাবার ও বই সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ আদেশ দেয়।
এর আগে ২ জুলাই ট্রাইব্যুনাল এ সংক্রান্ত একটি আদেশ দেয়। পরে ৩ জুলাই ওই আদেশকে রিকল করে ট্রাইব্যুনাল। মঙ্গলবার আবার সাঈদীকে খাবার বিষয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে ট্রাইবু্যুনাল এ আদেশ দেয়। আদেশে বলা হয়, বাসা থেকে রান্না করা খাবার জেল কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরবরাহ করা যাবে। তবে খাবার খেয়ে কোন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হলে বা শারীরিক কোন ধরনের ত্রুটি বা স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলে দায়ী হবে তার পরিবার। এতে জেল কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করা যাবে না বলেও আদেশে বলা হয়।
সাকা চৌধুরী ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের ৬ষ্ঠ সাক্ষী শহীদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট নির্মল চন্দ্র শর্মাকে আসামি পক্ষের জেরা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো আসামি পক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা তাকে জেরা করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ তাকে জেরা করা হয়।
সাক্ষ্য দানকালে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে ও নেতৃত্ব দিয়ে সাকা চৌধুরীর হাতে মা, কাকা, ভাই, ভাগিনাসহ ৫ স্বজনকে গুলি করে হত্যার বর্ণনা দেন নির্মল শর্মা। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৩ এপ্রিল তার চোখের সামনে সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী সেনারা ব্রাশফায়ার (গুলি) করে হত্যা করে নির্মল চন্দ্র শর্মার মা পঞ্চবালা শর্মা, বড় কাকা জ্যোতি লাল শর্মা, ছোট কাকা ডা. মাখন লাল শর্মা, ছোট ভাই সুনীল শর্মা ও ভাগিনা দুলাল শর্মাকে। গুলিবিদ্ধ হয়েও বেঁচে যান তার বাবা জয়ন্ত কুমার শর্মা। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো তাকে যে জেরা করা হয় তা কিছু অংশ নিম্নে দেয়া হলো।
প্রশ্ন : উঠানের ওপর কয়টা ঘর ছিল?
উত্তর : ২/৩টা।
প্রশ্ন : বিপুলাকের বাড়িটি কোন্ দিকে? বিপুলাকে চেনেন?
উত্তর : একটি মেয়ে হবে। আমাদের বাড়ি থেকে পূর্ব দিকে।
প্রশ্ন : কোন্ দিকে।
উত্তর : আনুমানিক ২ মাইল পূর্ব দিকে।
প্রশ্ন : আপনার সঙ্গে গত দুদিনে প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহের টেলিফোনে কথা হয়েছে।
উত্তর : কথা হয়েছে।
প্রশ্ন : চন্দ্রঘোনা আপনার বাড়ি থেকে কতদুর।
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : রাঙ্গুনিয়ার থানায় চন্দ্রঘোনা।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : রাঙ্গুনিয়ার পর রাউজান জানা আছে?
উত্তর : জানি।
প্রশ্ন : আপনারা ভারতে গেলেন? আপনার বাবাকে কে দেখাশোনা করত
উত্তর : শহীদ দুলালের মা।
প্রশ্ন : আপনার পিতাকে চিকিৎসা করানো হয়েছিল?
উত্তর : গ্রাম্য ডাক্তার করেছিল। অন্যত্র চিকিৎসা করানো যায়নি। কারণ সেই সময় হিন্দুদের পক্ষে চলাচল করা ঝুকিপূর্ণ ছিল। তবে স্থানীয়ভাবে কিছু ওষুধ খেয়েছে।
প্রশ্ন : ভারত থেকে আসার পর ডাক্তার দেখিয়েছিলেন?
উত্তর : না। কারণ উনি পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন : এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ি ও আলী চৌধুরীর বাড়ি।
উত্তর : এটা ঠিক নয়।
প্রশ্ন : বিমলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। সওদার জন্য কোথায় গিয়েছিল।
উত্তর : কিছু সওদার জন্য দক্ষিণ দিকে দোকানে গিয়েছিল।
প্রশ্ন : দোকানের নাম জানা আছে।
উত্তর : জানা নেই।
প্রশ্ন : বিমল বাড়িতে ছিল।
উত্তর : ইহা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি গহিরা গ্রামের বাড়িতে ভোটার আছেন।
উত্তর : আগে ছিলাম। এখন নাই।
প্রশ্ন : আপনি শেষবারের মতো গহিরাতে কবে গেছেন।
উত্তর : ১৯৭৮ সালে।
প্রশ্ন : বিমলকে গ্রামের লোক পছন্দ করত । সত্যবাদী ছিল।
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : ১৩ এপ্রিল কতগুলো পাক সেনাকে দেখেছেন।
উত্তর : ৫ জন আমার বাড়িতে।
প্রশ্ন : সব মিলিয়ে কত জন।
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি থেকে মাখন লাল শর্মার বাড়ি কোন দিকে।
উত্তর : আমাদের ঘর ও মাখন লালের ঘর একই। মধ্যে একটা বেড়া।
প্রশ্ন : দুই ঘরের মধ্যে উঠান আছে।
উত্তর : বেড়া আছে। উঠান নেই।
প্রশ্ন : বেড়াটা কয় ফিট।
উত্তর : অনুমান ৬ হাত।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি থেকে মাখন লালের বাড়ি দেখা যায় না।
উত্তর : ঘর থেকে মাখন লালের বেড়া দেখা যায় না। বারান্দা থেকে দেখা যায়।
প্রশ্ন : যখন সেনাবাহিনী এলো তখন আপনি বারান্দায আসেন নি।
উত্তর : তখন বারান্দায় আসিনি। কারণ ভাত খাচ্ছিলাম। পরে সামনে আসি।
প্রশ্ন : মাখন লালের কোন চিকিৎসা হয়েছিল।
উত্তর : জানামতে হয়নি।
প্রশ্ন : উনার স্ত্রী কোথায়।
উত্তর : দ্বিতীয় বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়ি গেছে।
প্রশ্ন : ১৩ তারিখের পর কতদিন পর বিয়ে হয়েছিল।
উত্তর : ঘটনার ৪/৫ বছর পরে।
প্রশ্ন : এখন ডাক্তার হরলাল বাবুর বাড়িতে কে থাকেন।
উত্তর : বর্তমানে ভাইপো থাকে। তার নাম স্মরণে নেই।
প্রশ্ন : আপনি যে মসজিদের পাস দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঐ মসজিদ কাদের।
উত্তর : এ্যাডভোকেট রফিক সাহেবের বাড়ির মসজিদ।
প্রশ্ন : সে সময় গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
উত্তর : দেখা হয়নি।
প্রশ্ন : আইলের কথা বললেন ঐ জমিটা কার।
উত্তর : সেই জমিটি এককালে আমাদের ছিল। বর্তমানে কার বলতে পারি না।
প্রশ্ন : জমিতে কি ছিল।
উত্তর : তখন জমিতে কিছুই ছিল না।
প্রশ্ন : এই সময়ের মধ্যে আপনার সঙ্গে বসা থাকা অবস্থায় কারও সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
উত্তর : না।
প্রশ্ন : আইল থেকে বাড়ি আসলেন কয়টায়।
উত্তর : আনুমানিক রাত সাড়ে সাতটায়।
প্রশ্ন : আপনার বাবাকে ঐ রাতে চিকিৎসা করেছিলেন।
উত্তর : করিনি।
প্রশ্ন : শ্মশানঘাট শীল পুকুর ঘাটে।
উত্তর : বড় পুকুর পাড়ে ছিল।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি থেকে কোন দিকে কত দূর।
উত্তর : দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। ৫০/৬০ গজ দূরে।
প্রশ্ন : ভাগ্নে দুলাল হাটহাজারী থেকে আপনাদের বাড়িতে আসা এবং ১৩ তারিখে মৃত্যুবরণ করার কথা সত্য নয়।
উত্তর : ইহা সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি শেষ বারের মতো ভারতে কবে গেছেন।
উত্তর : সম্ভবত: ১৯৮৮ সালে।
প্রশ্ন : একাত্তরের ১২ এপ্রিল আপনি হাটহাজারীর বড় পুকুর পাড়ে গিয়েছিলেন।
উত্তর : গেছি । ১২ এপ্রিলের আগে। সে দিন যাইনি।
প্রশ্ন : আপনার বড়ি থেকে যেতে হলে ঐ রাস্তা দিয়ে যেতে হয়।
উত্তর : ঐ রাস্তা দিয়েও যাওয়া যায়, ভিন্ন রাস্তা দিয়েও যাওয়া যায়।
প্রশ্ন : একাত্তরের ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীতে প্রতিরোধ সেন্টার ছিল। এ কথা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেননি।
উত্তর : স্মরণে নেই।
প্রশ্ন : হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে পাকবাহিনী আসছে শুনে বিচলিত হয়ে পড়ি। কার কাছ থেকে শুনেছেন।
উত্তর : গহিরার চৌমুহনীতে লোকমুখে শুনেছি। সঠিকভাবে বলতে পারব না।
প্রশ্ন : ওখানে ঐ দিন কোন গণ্যমান্য লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল।
উত্তর : মনে নেই।
প্রশ্ন : তখন আমি আমার ছোট ভাই সুনীল চন্দ্র শর্মা, দুলাল চন্দ্র শর্মা, আস্বস্ত হয়ে ভাত খেতে বসলাম। মা পরিবেশন করছিল। এ কথা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেননি।
উত্তর : বলেছি।
প্রশ্ন : সশস্ত্র সৈন্যদের মধ্য থেকে একজন বলল, ভয় নেই। তোমাদের মারব না। বাইরে আস। এরপর বাইরে আসি। এ কথা তদন্ত কারী কর্মকর্তাকে বলেন নি।
উত্তর : বলেছি।
প্রশ্ন : সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৩ এপ্রিল আপনার দেখা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
উত্তর : ঠিক নয়। দেখেছি।
প্রশ্ন : কুচক্রী মহল এটা আপনাকে শিখিয়েছে।
উত্তর : ঠিক নয়।
প্রশ্ন : বাইরে আসার সঙ্গে সঙ্গে হ্যান্ডস আপ। ভয়ে কাঁপতে থাকি। তিন জন সৈন্য এগিয়ে আসে। এ কথা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : ৩ জনের মধ্যে ২ জন অস্ত্র হাতে আমার দিকে আসায় আমি মাথা না নেড়ে চোখে তাদের অবস্থান দেখলাম। এ কথা তদন্ত কারী কর্মকর্তাকে বলেননি।
উত্তর : বলেছি।
প্রশ্ন : আপনারা বসেছিলেন।
উত্তর : আমার কাকার পরে বাবা, এর পর মা, মা ভাগিনা দুলালকে জড়িয়ে ধরেছিল। ভাই সুনীল শর্মা পাশে ছিলেন।
প্রশ্ন : আপনাদের বসার পিছনে পাক আর্মি ছিল।
উত্তর : পাক আর্মি পশ্চিম দিকে ৭/৮ গজ দূরে ছিল।
প্রশ্ন : বসা অবস্থায় কতদূর ফাকা ছিল।
উত্তর : বলতে পারি না।
প্রশ্ন : কয়টা ব্রাশ ফায়ার হয়েছিল।
উত্তর : ২ বার।
প্রশ্ন : কয়জন সেনা ফায়ার করেছিল।
উত্তর : একজন।
প্রশ্ন : ম্যাগাজিন চেঞ্জ করেছিল।
উত্তর : বলতে পারব না।
প্রশ্ন : পাক সেনাদের আপনাদের ব্রাশ ফায়ার করা কথা সত্য নয়।
উত্তর : ইহা সত্য নয়।
প্রশ্ন : ব্রাশ ফায়ার কতক্ষণ পর পর হয়েছিল।
উত্তর : বেশি সময় নেয়নি।
প্রশ্ন : আপনি এসে মাটিতে গুলির দাগ দেখেছেন।
উত্তর : অন্ধকারের জন্য দেখিনি।
প্রশ্ন : আপনি নিজে ভাই সুনীল, ভাগ্নে দুলাল এরা ভারতে চলে গেছিলেন ঘটনার আগে। ঐ দিন পাক সেনারা হত্যা করেনি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার পিতা, কাকা, মা স্বাধীনতার পর স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : সেই কারণে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ডেথ সার্টিফিেিকট তুলেননি।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : যতীন্দ্র লাল শর্মার ঘর সংলগ্ন।
উত্তর : সংলগ্ন।
প্রশ্ন : যতীন্দ্রলাল কি কাজ করতেন।
উত্তর : টেইলারিং-এ কাটার মাস্টার ছিল ।
প্রশ্ন : নরসুন্দরদের বেশির ভাগই শীল সম্প্রদায়ের।
উত্তর : বলতে পারব না।

No comments

Powered by Blogger.