পুলিশ এবং তদ্বির

পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় পুলিশের প্রধান কাজ হলো অপরাধীকে দমন করা ও সর্বস্তরে আইনের শাসন নিশ্চিত করা। কিন্তু সেই পুলিশবাহিনীতে যদি দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে যায়, তবে মানুষ যাবে কোথায়? সমাজবিরোধী ও অপরাধীদের কবল থেকে আশ্রয় পাওয়ার জন্য মানুষ কার কাছে আশ্রয় নেবে?


পুলিশবাহিনীর অন্যতম আদর্শ হলো, সর্বক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে আইনের প্রতি অনুগত থাকা। সর্বক্ষেত্রে পুলিশবাহিনী নিয়ম মেনে চলবেÑএটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু পুলিশবাহিনীতে সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক তদ্বির একটি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সর্বস্তরে পুলিশের নিয়োগ থেকে শুরু করে বদলি-পদোন্নতি প্রভৃতি হচ্ছে রাজনৈতিক তদ্বিরে। এমনকি কেউ কেউ যদি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যেতে চানÑসেজন্যে দরকার রাজনৈতিক তদ্বির। অবশ্য বাংলাদেশে যখন যে দল ক্ষমতায় আসে, তার একটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে লক্ষ্য করা যায়। এ নিয়ে পত্রিকায় দু’ একবার খবর ছাপা হয়েছে; তবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকরা খুব বেশি সচেতন বলে মনে হয় না। হয়ত পুলিশ বাহিনীর সর্বস্তরে ‘রাজনৈতিক তদ্বির’ চালু নেই; কিন্তু একটি সুনির্দিষ্ট পর্যায়ে যে আছেÑতা অনেকেই স্বীকার করেছেন। তবে দেশ ও জাতির স্বার্থে এই অতিশয় জনগুরুত্বপূর্ণ বাহিনীতে সর্বপ্রকার রাজনৈতিক তদ্বির বন্ধ হওয়া উচিত। পুলিশ বাহিনী দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সঙ্গে সমান আচরণ করবেÑএটাই সবার প্রত্যাশা। অপরাধী যে দলেরই হোক না কেনÑতাকে দমন করাই পুলিশের কাজ। কারণ অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন; সে দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। অনেক সময় অনেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এবং রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নেয়। বিশেষ করে পুলিশবাহিনীতে যখন রাজনীতিকদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়, তখনই এমনটা হয়। ‘রাজনৈতিক তদ্বির’ অবশ্যই পুলিশ বাহিনীতে দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম বাড়িয়েছে। কিছুকাল আগে পুলিশবাহিনীতে কিছু উপপরিদর্শক (এসআই) নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষার আগেই কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক তাদের নিজ নিজ প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করেন। এ ধরনের সুপারিশের প্রবণতা বাংলাদেশে সর্বত্র বহুকাল ধরে নানা স্তরে লক্ষ্য করা গেছে; কিন্তু তা যদি একটি প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা অবশ্যই ক্ষতিকর ও নিন্দনীয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে রাজনীতিকদের এই সংশ্লিষ্টতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে বাহিনীর নিরপেক্ষতা বিনষ্ট হতে বাধ্য। পুলিশবাহিনী তখন আর জনগণের সেবক থাকবে না; তারা একটি সুনির্দিষ্ট গ্রুপের আজ্ঞাবহে পরিণত হবে। ফলে দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এমন অভিযোগও শোনা যাচ্ছে যে, থানার কিছু ওসি এখন তাঁদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কথা শুনছেন না; বরং তাঁরা শুনছেন রাজনীতিকদের কথা। তাই সংশ্লিষ্ট সবারই উচিত পুলিশবাহিনীর সর্বস্তরে নিয়ম ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিকদেরও দেশের স্বার্থে নিজেদের আচরণ নিয়ে ভাবতে হবে। পুলিশবাহিনীতে তাদের প্রভাব কখনও দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না; বরং তা দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে নষ্ট করবে। এ কথা সংশ্লিষ্ট সবারই মনে রাখা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.