কাঁচপুরে শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে অবৈধ দোকানপাট by মনিরুজ্জামান

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা ও দোকানপাট কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সাম্প্রতিক পুলিশের গোপনীয় প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।


গত ১১ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই প্রতিবেদনে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন-অর-রশিদ উল্লেখ করেন, কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানা ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, জয়া গ্রুপসহ ছোট-বড় অনেক শিল্পকারখানা রয়েছে। ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে সওজের জায়গা দখল করে দোকানপাট ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় নেতারা। তাঁরা জোট করে সড়কের পাশের দোকানপাট ও অবৈধ স্থাপনা থেকে চাঁদাবাজি করে আসছেন। তাঁদের চাঁদাবাজির কারণে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়। চাঁদাবাজিতে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করা হয়। এসব সন্ত্রাসী নানা কারণে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনমুখী করে তোলার নেপথ্যে থাকে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ মে শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষসহ চারজন শ্রমিকনেতাকে সওজের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কলাপট্টিতে সন্ত্রাসীরা মারধর করে শ্রমিকদের আন্দোলনমুখী করে তোলে। তাই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা একান্ত প্রয়োজন।
সোনারগাঁ থানা সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে পুলিশ অবৈধ দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করেছে। দখলদারদের মধ্যে জাতীয় শ্রমিক লীগ কাঁচপুর শিল্পাঞ্চলের সভাপতি আবদুল মান্নান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ-সমর্থক আবুল খায়ের, বাবু ওমর, বাবুল মিয়া, আকমল হোসেন, জামান মিয়া, আক্তার হোসেন, বিএনপি-সমর্থক মতিন খান, মজিদ খান, আবেদ আলী, কাঁচপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও বিএনপি-সমর্থক আবদুল বারেক, আবদুর রহমানসহ ২০ জনের নাম রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনুসন্ধানে জানতে পেরেছি, কাঁচপুরে সওজের জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা থেকে মাসে ২০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। এই টাকা জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগবাঁটোয়ারা হয়।’
সোনারগাঁ থানার ওসি হারুন-অর-রশিদ জানান, কাঁচপুরের অবৈধ এসব স্থাপনার কারণে শ্রমিক অসন্তোষ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হচ্ছে। অনেক সন্ত্রাসী পোশাক কারখানার পরিত্যক্ত কাপড় (ঝুট) কিনতে না পেরে সুযোগবুঝে শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা অশান্ত করে তোলে। এ জন্য এসব স্থাপনা উচ্ছেদে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া দুটি মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনার কারণে যানজট সৃষ্টি হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েন।
অবৈধ দখলদার আবদুল মান্নান, আবুল খায়ের ও আবদুল বারেক দাবি করেন, ‘এই জায়গা উত্তরাধিকার সূত্রে আমাদের। সওজ কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করেছিল। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে দোকানপাট করে ব্যবসা করে আসছি।’
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দায়িত্ব গ্রহণের এক সপ্তাহ পর কাঁচপুরে মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে মহাসড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য সওজ ও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রী ফের মহাসড়ক পরিদর্শনে এসে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় ম্যাজিস্ট্রেট না পাওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাগরিকা নাসরিন জানান, কাঁচপুরে মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। স্থানীয় সাংসদ আবদুল্লাহ আল কায়সার বলেন, ‘অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলে আমরা দলীয়ভাবে সহযোগিতা করব।’

No comments

Powered by Blogger.