জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি-ড. আনিসুজ্জামান : একজন সফল শিক্ষাবিদের প্রতিকৃতি by মাহমুদুল বাসার

১৮ ফেব্রুয়ারি ড. আনিসুজ্জামানের জন্মদিন। ১৯৩৭ সালের এই দিনে তিনি পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এ টি এম মোয়াজ্জেম। তিনি ছিলেন বিখ্যাত হোমিও চিকিৎসক। ড. আনিসুজ্জামানের পিতামহ শেখ আবদুর রহিম উনিশ শতকের প্রতিষ্ঠিত বাঙালি মুসলিম গদ্যলেখক। তাঁর মধ্যে ছিল মুক্তচিন্তা। ড. আনিসুজ্জামান ছিলেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন। ভর্তি হয়েছিলেন ১৯৫৩ সালে, বাংলা বিভাগে; তখন বিভাগীয় প্রধান জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন শহীদ মুনীর চৌধুরীকে। মুনীর চৌধুরী তাঁকে কতটা প্রভাবিত করেছিলেন, তার স্বাক্ষর আছে 'মুনীর চৌধুরী' গ্রন্থে।
১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে স্নাতক সম্মান এবং এমএতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। অনার্সে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৃতিত্বস্বরূপ 'নীলকান্ত সরকার' বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫৮ সালে ড. আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য যোগদান করেন। তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন মুহম্মদ আবদুল হাই। বিষয় ছিল 'ইংরেজ আমলের বাংলা সাহিত্যে বাঙালি মুসলমানের চিন্তাধারায় ১৭৫৭-১৯১৮'। ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। গবেষণার বিষয় ছিল 'উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস : ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল'। তিনি প্রত্যক্ষভাবে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে ১৯৫০ সাল থেকে তাঁর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। মুজিবনগরে তিনি তাজউদ্দীনের বিচক্ষণ কর্মকাণ্ড সরেজমিনে কাছ থেকে দেখেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্র উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। ড. আনিসুজ্জামানের হাতে বাংলা গদ্যের প্রমিত এবং উৎকর্ষমণ্ডিত আদর্শ রূপের একটি মানদণ্ড দাঁড়িয়েছে। অন্নদাশঙ্কর রায়ের পর ড. আনিসুজ্জামান শ্রেষ্ঠ বাংলা গদ্য লেখকদের একজন। তিনি আমাদের মুক্তচিন্তার সর্বজনগ্রাহী সারথি। তাঁর চেতনা আগাগোড়া মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মিশ্রিত।
'মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য' তাঁর প্রথম গবেষণার অভিসন্দর্ভ। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গবেষকরা এ অভিসন্দর্ভের পরীক্ষক ছিলেন। তাঁর প্রিয় শিক্ষক ছিলেন শহীদ মুনীর চৌধুরী। তাঁকে ফুটিয়ে তুলেছেন 'মুনীর চৌধুরী' গ্রন্থে। ড. আনিসুজ্জামান অনুসন্ধান করেছেন প্রাক উনিশ শতকি বাংলা গদ্যের নিদর্শন। 'পুরোনো বাংলা গদ্য' অসামান্য গবেষণাগ্রন্থ। মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লিখেছেন 'আমার একাত্তর' বইটি। তাতে আছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাই শুধু নয়, বাঙালির সংগ্রামের পটভূমি। জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই।
মাহমুদুল বাসার

No comments

Powered by Blogger.