সড়ক দুর্ঘটনার পর ক্যামব্রিয়ান ছাত্রের মৃত্যু, ব্যাপক ভাঙচুর-এ্যাপোলোর বিল ব্যবসা?

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক কলেজছাত্রের এ্যাপোলো হাসপাতালে প্রাণহানির পর বেসরকারি ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্ররা গতকাল মঙ্গলবার সড়ক অবরোধ করে যানবাহনে ভাঙচুর চালিয়েছে। গতকাল সকালে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ চলার সময় অন্তত ৩০টি বাস ও প্রাইভেট কার ভাঙচুর করা হয়।


ওই সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এদিকে নিহত শিক্ষার্থী আসিফের স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালে মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরও তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রেখে বকেয়া বিলের জন্য চাপ দেওয়া হয়।
গত ১ জুলাই প্রগতি সরণির নদ্দা বাসস্ট্যান্ডের পাশে ক্যামব্রিয়ান কলেজের (ব্যবসায় শিক্ষা) ২ নম্বর ক্যাম্পাসের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আসিফ হোসেন (২০) পিকআপের ধাক্কায় আহত হন। এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করার পর এত দিন আসিফ সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার রাত ৯টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আসিফের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে।
জানা গেছে, আসিফের মৃত্যু এবং এ্যাপোলো হাসপাতালের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ গতকাল সকালে ক্যামব্রিয়ান ক্যাম্পাসে পৌঁছালে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আসিফের জানাজায় যাওয়ার পথে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। ভাঙচুর চালানোর সময় ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ সাজারুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করেছে। সাজারুল উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পুলিশ জানায়, সড়ক দুর্ঘটনায় আসিফের প্রাণহানি এবং গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা ও পাঁচটি জিডি হয়েছে।
জানা গেছে, দুর্ঘটনার দিন পিকআপ ভ্যানটি আসিফকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। চালক সগিরসহ পিকআপটি আটক করে পুলিশ। এদিকে আসিফকে উদ্ধার করে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করে সহপাঠীরা।
আসিফের স্বজনদের অভিযোগ, সোমবার পযর্ন্ত এ্যাপোলোতে বিল দাঁড়ায় চার লাখ ৪৮ হাজার টাকা। পরে আরো কিছু বিল যোগ করা হয়। শেষ পর্যন্ত পরিবার সোমবার গভীর রাতে সব অর্থ হাসপাতালকে বুঝিয়ে দেয়। এর মধ্যে আসিফের পরিবার দুই লাখ ২০ হাজার, ক্যাব্রিয়ান কলেজ কর্তৃপক্ষ দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকা এবং আসিফের সহপাঠীরা ৪০ হাজার টাকা দিয়েছে। সোমবার রাত দেড়টার দিকে পুরো টাকা হাতে পেয়ে এ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে ছাড়পত্র দেয়। তবে ময়নাতদন্ত, পুলিশের ছাড়পত্রসহ কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল সকাল ১১টার দিকে লাশ বাসায় নেওয়া হয়। বিকেলে আজিমপুর কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এ ঘটনার পর কালের কণ্ঠ থেকে এ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
আসিফের স্বজনরা বলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সোমবার বিকেলে জানায়, আসিফকে আরো এক দিন লাইফ সাপোর্টে রাখা হবে। এর মধ্যেই পাওনা টাকা পরিশোধ করতে হবে। আসিফের বড় ভাই আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠের কাছে অভিযোগ করে বলেন, 'সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গতিবিধি দেখে আমাদের ধারণা জন্মেছে, আসিফ আগেই হয়তো মারা গেছে। বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় আরো এক দিন লাইফ সাপোর্টে রাখার অজুহাতে তারা আমার ভাইয়ের লাশ আটকে রাখে।' আমজাদ হোসেন জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায়। ঢাকায় তাঁদের বাসা মালিবাগের মধুবাগ এলাকায়।
এদিকে আসিফের মৃত্যুর খবর এবং এ্যাপোলো হাসপাতালের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ জানাজানি হলে গতকাল সকাল ১১টার দিকে ক্যামব্রিয়ানের ২ ও ৪ নম্বর ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হঠাৎ ক্যামব্রিয়ানের ছাত্ররা নদ্দা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সামনের প্রধান সড়ক পর্যন্ত প্রায় ২০-২২টি গাড়ি ভাঙচুর করে। তারা ক্যামব্রিয়ান কলেজের একটি গাড়ি থেকে নেমে এসে গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে বলে জানা গেছে। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্র ও বিক্ষুব্ধ জনতার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে ইটের আঘাতে মাইশা আক্তার (১৫) নামে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বসুন্ধরা শাখার নবম শ্রেণীর এক ছাত্রী আহত হয়। তাকে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা মেট্রো-গ-১১-৯৪২২ নম্বরের একটি টয়োটা গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর সময় শিশুসহ একজন নারী মারাত্মক আহত হন। গাড়ি চলে যাওয়ায় আহতদের পরিচয় জানা যায়নি। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিএসবি ফাউন্ডেশন ও ক্যামব্রিয়ান কলেজের চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, আসিফের জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য তাঁর সহপাঠীরা কলেজের একটি গাড়িতে করে যাচ্ছিল। যাওয়ার পথে তারা বাস থেকে নেমে নদ্দা থেকে বসুন্ধরা গেট পর্যন্ত গাড়ি ভাঙচুর করে। সেখানে স্থানীয় কিছু লোক তাদের উসকানি দেয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, 'ক্যামব্রিয়ান কলেজ কর্তৃপক্ষ সকালেই পুলিশকে সতর্ক করেছিল। সকালে কলেজ ছুটি দেওয়া হয়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। কলেজের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'
ভাটারা থানার ওসি সৈয়দ জিয়াউজ্জামান বলেন, 'পিকআপ চালককে আটক করা হয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়ে গুলশান থানায় একটি এবং গতকালের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ভাটারা থানায় পাঁচটি ডায়রি হয়েছে। সব ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে।'

No comments

Powered by Blogger.