গাজীপুর-৪ আসনে উপনির্বাচন-অংশ নিতে চায় বিএনপি, প্রার্থী সংকটে আ.লীগ

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ উপনির্বাচনকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের উপায় হিসেবে দেখছে দলটি। তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রার্থী সংকটে পড়েছে। উভয় দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।


আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ পদত্যাগ করায় ৭ জুলাই গাজীপুর-৪ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। সংবিধান অনুসারে তিন মাসের মধ্যে এখানে উপনির্বাচন করতে হবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। উপনির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোহেল তাজ গত ২৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাহকের মাধ্যমে সংসদ থেকে পদত্যাগের পত্র পাঠান। এর কয়েক দিন পর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে মত আসে। ওই দিনই সিদ্ধান্ত হয়, খালেদা জিয়া গাজীপুর-৪ নির্বাচনী এলাকায় একটি সমাবেশ করবেন। গত ১০ মে তিনি কাপাসিয়ায় সমাবেশ করেন। তিনি আগামীতে ওই আসনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে হান্নান শাহকে পরিচয়ও করিয়ে দেন। দলের ওই সদস্য বলেন, বড় কোনো ঘটনা না ঘটলে এই উপনির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর বিএনপির নেতা এম এ মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে এমন নিশ্চয়তা থাকলে বিএনপির তাতে অংশ নেওয়াটা ভালো হবে। বিএনপি প্রায় সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এখানে দলের জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
কাপাসিয়ায় ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি সোহেল তাজের কাছে প্রায় ৪৪ হাজার ভোটে পরাজিত হন। আর হান্নান শাহ ঢাকা-১৭ আসন থেকে নির্বাচন করেন। তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছে পরাজিত হন।
জানতে চাইলে আ স ম হান্নান শাহ বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে বিএনপির প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত। সরকারের ব্যর্থতায় মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছে। তিনি প্রার্থী হবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটা দল সিদ্ধান্ত নেবে।’
সংকটে আওয়ামী লীগ: অনেক নাটকের পর সোহেল তাজের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ায় আওয়ামী লীগ এমনিতেই বিব্রত। এখন উপনির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়বে দলটি। দলীয় নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, সরকারের সাড়ে তিন বছরের মাথায় এই উপনির্বাচন দলের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত সংকট।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোহেল তাজ জাতীয় সংসদ বা মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করুন, তা দলের উচ্চপর্যায় চায়নি। দুই বছর ধরে এ নিয়ে অনেক নাটকীয়তা হয়েছে। স্পিকার প্রথম দফায় পদত্যাগ নাকচ করায় সোহেল তাজ দেশে ফিরে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করে তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানান। পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রিসভা ও সংসদ থেকে পদত্যাগের বিষয়টির সমাপ্তি ঘটান।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, সরকারের এ সময়ে উপনির্বাচনে জয়-পরাজয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের বড় মানদণ্ড হিসাবে বিবেচিত হবে। তা ছাড়া ১৫ বছর ধরে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করছেন। সুতরাং এটা দলের জন্য অনেকটা মর্যাদার লড়াই। আর জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে হিসেবে এলাকায় সোহেল তাজের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে তাঁর বিকল্প ভালো কোনো প্রার্থী দলের কাছে নেই। নীতিনির্ধারকেরা যোগ্য প্রার্থীর সন্ধান করছেন।
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে।

No comments

Powered by Blogger.