সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা by ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর

আমাদের সংবিধানের ৭৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ কর্তৃক সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী এই কমিটি অবশ্য গঠনীয়। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২৩৩ ধারা অনুযায়ী এই কমিটি অনধিক ১৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।


এই কমিটি সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী (১) সরকারের ব্যয় নির্বাহকল্পে সংসদ কর্তৃক মঞ্জুরিকৃত অর্থের নির্দিষ্টকরণ সংবলিত হিসাব, (২) সরকারের বার্ষিক আর্থিক হিসাব এবং (৩) কমিটি কর্তৃক সমীচীন বিবেচিত সংসদে উত্থাপিত অন্যান্য আর্থিক হিসাব পরীক্ষা এবং অনুরূপ পরীক্ষাকালে শনাক্তকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম ও ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ সংসদে পেশ করবে। সংবিধানের (১২৭-১৩২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রককে প্রজাতন্ত্রের সকল মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিরীক্ষণের ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে কার্যপ্রণালি বিধির ২৩৩ (২) ধারা অনুযায়ী এই কমিটি রাষ্ট্রের সকল ব্যয়ের (১) আইনানুগ অনুমোদন, (২) আইনানুগ নিয়ন্ত্রণকারীর ক্ষমতা অনুগামী ব্যয়ন, (৩) আর্থিক ব্যয়ের যথাবিধি পুনর্নির্দিষ্টকরণ, (৪) রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন ও সংস্থাসমূহের আয়-ব্যয়ের হিসাব, স্থিতিপত্র ও লাভ লোকসানের সমীক্ষণ এবং (৫) সংসদ কর্তৃক মঞ্জুরিকৃত অর্থ অপেক্ষা অধিক অর্থ ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিরূপণ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। এ সকল ক্ষেত্রে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক যে নিরিখ প্রতিবেদন তৈরি ও উপস্থাপন করেন তার ভিত্তিতে সংসদীয় হিসাব কমিটি এই দায়িত্ব পালন করে। এর বাইরে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃক প্রজাতন্ত্রের অনুকূলে প্রাপ্ত যে কোন অর্থ, ভা-ার বা সম্ভার বিষয়ে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের নিরিখ প্রতিবেদন এই কমিটি পর্যালোচনা করে সরকার বা সংসদের কাছে যথা প্রয়োজন সুপারিশ করবে বলে অনুজ্ঞা দেয়া আছে।
সংবিধান অনুযায়ী (১৩২ অনুচ্ছেদ) প্রজাতন্ত্রের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক তাঁর নিরিখ প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেন এবং রাষ্ট্রপতি তা সংসদে উপস্থাপন করার ব্যবস্থা নেন। সংসদে উপস্থাপিত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের সব প্রতিবেদন সংসদীয় হিসাব কমিটির কাছে পর্যালোচনা ও যথাযথ সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সংসদীয় হিসাব কমিটি যথা প্রথা আলোচনা ও বিবেচনার পর উত্থাপিত নিরিখ প্রতিবেদনের মন্তব্য, আপত্তি ও অনুশাসন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয় এবং সময়ান্তরিক প্রতিবেদনের আকারে তা সংসদে উপস্থাপন করে। এই ভাবে উপস্থাপনের পর সংসদ ইচ্ছা করলে তা আলোচনা এবং সে বিষয়ে যথাপ্রয়োজন ভিন্নতর সিদ্ধান্ত দিতে বা মন্তব্য করতে পারে। প্রায় সবসময়ই সংসদ সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদন বিষয়ে কোন আলোচনা না করেই তা রেকর্ডকৃত তথা গ্রহণ করে। অনুরূপ গৃহীত বা রেকর্ডকৃত হলে প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সকল সিদ্ধান্ত, অনুশাসন ও মন্তব্য সংসদের সিদ্ধান্ত, মন্তব্য ও অনুশাসন বলে বিবেচিত হয় এবং সেই প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রতিপালনীয় হিসাবে বাস্তবায়িত হয়।
ভারতে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত কমিটি রাজ্যসভার ৭ এবং লোকসভার ১৫ একুনে ২২ সদস্যসহ প্রতিষ্ঠিত। এই কমিটি ১ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। এই কমিটির চেয়ারম্যান স্পীকার কর্তৃক বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ১৫ জন সদস্য নিয়ে ৫ বছর বা পুরো সংসদ কালের জন্য নির্বাচিত হয়। বাংলাদেশে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সংসদ কর্তৃক সরকারী দলের নেতার মনোনয়ন অনুযায়ী নির্বাচিত হন। ভারত ও বাংলাদেশের সংসদীয় হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিদিত কার্যাবলী প্রায় একই প্রকার। অবশ্য ভারতে গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি ১৯৫২ থেকে প্রচলিত ও অনুসৃত থাকায় সেখানকার সংসদীয় হিসাব কমিটির মর্যাদা ও তাৎপর্য অনেক বেশি বিস্তৃত। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে সংসদীয় হিসাব কমিটি বিস্তৃত, গভীরতর ও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসছে বলে এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য এর আগের বছরগুলোর তুলনায় অধিকতর দীপ্তিমান হয়ে এসেছে। ভারতে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত কমিটি বিশেষ এলাকা ও অধিক্ষেত্র বিষয়ে বিশেষ পর্যালোচনা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সরেজমিন তদন্ত করার রীতি ও প্রথা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে এই রীতি ও প্রথা এখনও সৃষ্টি করা যায়নি। বলা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশে সংবিধান কিংবা সংশ্লিষ্ট আইন বা বিধানাবলীতে এই ধরনের বিশেষ পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান বা সরেজমিন তদন্ত করার প্রতিকূলে কোন বিধান বা অনুজ্ঞা দেয়া নাই।
বাংলাদেশ এশীয় অঞ্চলের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ও সমকালীন সভাপতি। এই সমিতির মাধ্যমে এই এলাকার দেশগুলোর সংসদীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ দেশভিত্তিক অভিজ্ঞতা আলোচনা ও বিনিময়করণে এবং ক্ষেত্র ও অধিক্ষেত্র বিশেষে এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে ফলপ্রসূ পদ্ধতি গ্রহণ ও অনুসরণ করার চেষ্টা করে থাকেন। কার্যকরণ সূত্র অনুযায়ী এই সমিতি পশ্চিম আফ্রিকার সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সমিতি বা সংগঠনের অনুরূপ।
বাংলাদেশের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সাধারণত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার আয়-ব্যয়ের ওপর কর্তৃক প্রণীত এবং সংসদে উপস্থাপিত নিরিখ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে। ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সর্বমোট ৯৩৯টি এই ধরনের নিরিখ প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯ পর্যন্ত অষ্টম সংসদে সর্বমোট ৩৩২টি নিরিখ প্রতিবেদনের ওপর সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি তার পর্যালোচনা প্রযুক্ত করেছে এবং যথাপ্রয়োজন মোতাবেক সিদ্ধান্ত ও অনুশাসন দিয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ শুরু হওয়ার সময়ে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃক উপস্থাপিত মোট ৪৯০টি নিরিখ প্রতিবেদন অপর্যালোচিত ও অপরীক্ষিত অবস্থায় বিদ্যমান ছিল। এসব নিরিখ প্রতিবেদনে সর্বমোট ১২,৭৬৫টি নিরিখ আপত্তি উল্লেখিত ছিল। এসব আপত্তির বিপরীতে আদায় বা সাজুয করণীয় অঙ্ক ছিল ১৭৫.১৩ বিলিয়ন টাকা। ২০০৯ এর পর অদ্যাবধি ১১৭টি নিরিখ প্রতিবেদন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃক সংসদে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য কথায় নবম সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বিবেচনার জন্য অদ্যাবধি সর্বমোট ৬০৭টি নিরিখ প্রতিবেদন উত্থাপিত হয়েছে। এসব নিরিখ প্রতিবেদনের মধ্যে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ৩০৫টি প্রতিবেদন ১৯৬টি বৈঠকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে যথাপ্রয়োজন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনে উত্থাপিত ১২,৭৬৫টি নিরিখ আপত্তির মধ্যে কমিটি ৫,৫৫০টি (৪৩%) আপত্তি পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা ও মতামত বিবেচনায় এনে ৩,২০০টি (২৫%) আপত্তি নিষ্পত্তি করেছে। অবশিষ্ট ৭,২১৫টি আপত্তি মন্তব্যের ক্ষেত্রে হয় কমিটি মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের আপত্তি মন্তব্য গ্রহণ করেছে কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বা মুখ্য হিসাব কর্মকর্তা মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের সাথে আলোচনাক্রমে আপত্তি বা মন্তব্যসমূহ প্রত্যাহৃত বা সংশোধিত হয়েছে। এই নিষ্পত্তিকরণ প্রক্রিয়ায় উত্থাপিত অনিয়ম ইত্যাদি দূর বা সংশোধন করে কমিটি ৯.২৫ বিলিয়ন টাকা সরকারী কোষাগারে ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছে। অনুরূপ ফেরত দেয়া বা উদ্ধারকৃত অর্থ এসব প্রতিবেদনে উল্লেখিত সকল আপত্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিবিধ অপব্যবহার বা অপচয়ের মোট অঙ্ক ১৭৫.১৩ বিলিয়নের মাত্র শতকরা ৫ ভাগ। উদ্ধার বা সাযুজ্যকৃত এ অর্থের পরিমাণ শতকরা হিসাবে কম হলেও কমিটির তরফ থেকে এই রকম তৎপরতা সংশ্লিষ্ট সকল পর্যায়ে জনগণের সম্পদ ব্যবহারে সকল নির্বাহীকে অধিকতর সাবধান এবং যতœবান হওয়ার প্রয়োজন সম্পর্কে চেতনাবোধ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। কমিটির এই রূপ তত্ত্বাবধান ও পর্যালোচনা দুটি প্রতিবেদন আকারে চূড়ান্ত অবয়বে নবম সংসদের কাছে ইতোমধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। তৃতীয় প্রতিবেদনটি প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। সংসদ এই কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত ২টি প্রতিবেদনে উল্লেখিত সিদ্ধান্ত, মন্তব্য ও অনুশাসনাদি বিনা আলোচনায় গ্রহণ করেছে। ফলত কমিটির সকল সিদ্ধান্ত ও অনুশাসন ও মন্তব্য সংসদের সিদ্ধান্ত, অনুশাসন ও মন্তব্য হিসাবে আইনি মর্যাদা ও গুরুত্ব লাভ করেছে।
নবম সংসদের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উপরোক্ত কার্যাবলি ও তৎপরতা এভাবে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে। সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিকতা ও শক্তিশালী সংসদীয় কার্যক্রমের অনুকূলে অকুণ্ঠ সমর্থন আগের সংসদসমূহের কার্যাবলির আপেক্ষিকতায় ইতিবাচক ফল দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও কানাডীয় সাহায্য সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এই কমিটির কার্যাবলি পর্যালোচনা করে একে আগের সংসদীয় হিসাব কমিটির তুলনায় অধিকতর কর্মানুরাগী ও শক্তিশালী কমিটি হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। ফলত কমিটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশসমূহের সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির স্বীকৃতিমূলক দৃষ্টি আর্কষণ করতে সমর্থ হয়েছে।
এসব ক্ষেত্রে কৃতবিদ্যতা ও স্বীকৃতি পাওয়া সত্ত্বেও কতিপয় ক্ষেত্র ও বিষয়ে কমিটি এখন ঈপ্সিত মনোযোগ দিতে সমর্থ হয়নি?
(১) কমিটি এখনও সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি মোতাবেক আর্থিক ও নির্দিষ্টকরণ বিষয়ক হিসাবসমূহ যথাযথভাবে পর্যালোচনা করতে সমর্থ হয়নি। বস্তুত ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে এসব হিসাবাদি অনেকাংশে সংসদীয় সরকারী হিসাব কমিটির মনোযোগ ও কর্মের বাইরে ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।
(২) কমিটির পর্যালোচনায় এখন পর্যন্ত মূলত সরকারের ব্যয়-সম্পর্কিত প্রতিবেদন তথা আর্থিক নিরিখ প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। ব্যয়-সম্পর্কিত নিরিখের আপেক্ষিক প্রাধান্য কমিয়ে ক্রমান্বয়ে সরকারের আয়-সম্পর্কিত নিরিখ প্রতিবেদন কমিটি কর্তৃক যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা কর্মানুগ হবে। বিশেষত সরকারের ঋণগ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নিরিখ এবং কর্মসম্পাদন বিষয়ক পর্যালোচনা সাম্প্রতিককালে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধানের দাবিদার হয়ে উঠেছে। এদিকে এখন পর্যন্ত মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারী হিসাব-সম্পর্কিত কমিটি যথাঈপ্সিত মনোযোগ দিয়েছে বলা চলে না।
(৩) মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের দফতরকে লোকবল ও অনুষঙ্গ দিয়ে এবং একটি সুনির্দিষ্ট নিরিখ আইন বা অডিট এ্যাক্টের ভিত্তিতে অধিকতর শক্তিশালী ও কর্মক্ষম করা প্রয়োজন। কমিটির সমকালীন আলোচনায় স্থান পাওয়া নিরিখ প্রতিবেদনাদির গুণগত উৎকর্ষ বাড়ানোর পরিধি যথেষ্ট বিস্তৃত বলে সদস্য ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদের আগামী অধিবেশনে খসড়া নিরিখ আইন বা অডিট এ্যাক্টটি উপস্থাপিত ও অনুমোদিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
(৪) একইভাবে কমিটিকে বিশ্লেষণভিত্তিক সহায়তা দেয়ার জন্য যথাযোগ্য গবেষক ও বিশ্লেষককে আকর্ষিত করা সময়ের প্রেক্ষিতে অতীব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে, ব্রিটিশ পার্লামেন্ট বা ভারতীয় লোকসভায় লভ্য বিষয় জ্ঞানভিত্তিক এই ধরনের বিশ্লেষণ করার কাঠামো সৃষ্টি করা বিধেয় বলে মনে হচ্ছে।
(৫) সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি যথাযথভাবে সংশোধন করে সংসদীয় সরকারী হিসাব কমিটির বৈঠক জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং কমিটির বৈঠকে সকল অভ্যাগত ব্যক্তির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করার প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। কমিটির উন্মুক্ত বৈঠক জনগণের কাছে জনপ্রতিনিধিসহ সকল নির্বাহীর জবাবদিহিত্ব জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এসব প্রয়োজন যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে মেটানোর মাধ্যমে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে অধিকতর কর্মক্ষম ও শক্তিশালী করে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের আয় আহরণ ও ব্যয়ন বিষয়ক সকল কার্যক্রমের ওপর সংসদীয় ও তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহিত্ব বিস্তৃত করা বিধেয় হবে।
লেখক : সংসদ সদস্য এবং নবম সংসদের সংসদীয় সরকারী হিসাব কমিটির চেয়ারম্যান

No comments

Powered by Blogger.