প্রথম আলোকে জোয়ে নাকানো-বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়বে by রাহীদ এজাজ

সামাজিক সূচকের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে। তাই বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আগামী দিনে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা বাড়াবে জাপান। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চার দশক পূর্তিতে আগামী দিনের অগ্রাধিকারের কথা জানাতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কাছে এ মন্তব্য করেন জাপানের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী জোয়ে নাকানো।


জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জাপান-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন জোয়ে নাকানো। ১৯৭২ সালের ১০ জুন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় জাপান।
নাকানো বলেন, ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক মিল আছে। দুই দেশের পতাকার দিকে তাকালেই সাযুজ্যের বিষয়টি চোখে পড়ে। গভীর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে আমরা গর্ব করি।’
অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আগামী দিনের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জোয়ে নাকানো বলেন, ‘জাপান সরকার বর্তমানে মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আমরা শিক্ষা-স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলোতে অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। তাই বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমরা শিক্ষা-স্বাস্থ্যে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। তা ছাড়া কয়েক বছর ধরে এসব খাতে সহায়তা দিয়ে আসছি।’
আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করে জোয়ে নাকানো বলেন, ‘নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হলে অর্থনীতির অগ্রযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই এ ক্ষেত্রেও আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চাই। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা জাপানের খ্যাতনামা পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানা বাংলাদেশে স্থাপন করেছি। এতে নারীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ড আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছে। এর সুফল পাবে বাংলাদেশ।’
ফুকুশিমার পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর জাপানের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় বৈদেশিক উন্নয়ন-সহায়তা কমবে কি না, জানতে চাইলে জাপানের পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন দেশে বৈদেশিক উন্নয়ন-সহায়তা কমিয়ে এনেছিলাম। অন্য খাতে আমরা সহযোগিতায় মনযোগী ছিলাম। কিন্তু এ বছর উন্নয়ন-সহায়তা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে, এটি বলতে দ্বিধা নেই। তার পরও আমরা এ খাতে সহযোগিতা বাড়াব।’
অর্থনীতির ওপর ভূমিকম্পের প্রভাবের কথা জানাতে গিয়ে জোয়ে নাকানো বলেন, ‘ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ওই বিপর্যয়ের পর ওই অঞ্চলে পর্যটকের সংখ্যা এক বছরে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমেছে। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে এখনো দেশের বাইরে ভীতি আর উৎকণ্ঠা কাজ করছে। তবে জাপানের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে আমাদের বার্তা হলো, পরিস্থিতি সেখানে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। খাবার ও পারমাণবিক বিকিরণ নিয়ে যে ভীতি রয়েছে, এ মুহূর্তে তা অমূলক।’

No comments

Powered by Blogger.