১২ মার্চ সামনে রেখে উত্তেজনা-ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগ by জাহাঙ্গীর আলম

আগামী ১২ মার্চ বিরোধী দলের মহাসমাবেশের সরাসরি পাল্টা কর্মসূচি না দিয়ে রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় অবস্থান নেবে আওয়ামী লীগ। ওই দিন নগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থান নিতে দলের নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, মহাসমাবেশ ঘিরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারেন, সে জন্য এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।


ক্ষমতাসীন দলটির ঢাকা মহানগর শাখার দায়িত্বশীল এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ১২ মার্চ মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো বিক্ষোভ মিছিল বা সমাবেশ কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ওই দিন নগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ও পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেকোনো বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ১ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে দিয়ে মাসব্যাপী কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। একেক দিন একেক সহযোগী সংগঠনকে কর্মসূচি পালনের দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তা রয়েছে। এই হিসেবে ১২ মার্চ কোনো একটি সংগঠনের কর্মসূচি থাকতে পারে। এই ব্যাপারে আগামী রোববার সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আ.লীগের যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি দেবে না। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ফেব্রুয়ারি ও মার্চ টানা দুই মাসব্যাপী যে কর্মসূচি রয়েছে, তা পালন করা হবে। তিনি বলেন, ১২ মার্চের কর্মসূচিতে বিরোধী দল নাশকতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ তা প্রতিহত করবে।
দলীয় সূত্র জানায়, নিয়মতান্ত্রিক সভা-সমাবেশ কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। বিশেষ করে, বিরোধী দল আন্দোলনমুখী হয়ে ওঠায় দলীয়ভাবে এ অবস্থান নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দেড় মাসব্যাপী কর্মসূচি দেওয়া আছে। ৪ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে চলতি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসজুড়ে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই দুই মাস দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতেও কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন, ৭ মার্চ গণমিছিলের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। সাধারণত ওই দিন আলোচনা সভা করা হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মিসভা ও বর্ধিত সভা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের সময় ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচন ও ওই বছরের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়ার পদত্যাগ দিবস উপলক্ষেও নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র দাবি করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ায় নানা রকম বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে সরকারের কাছে তথ্য আছে। সরকার মনে করছে, বিরোধী দল আন্দোলনের নামে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে মনে করেন, গত ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকায় বিএনপি ওই দিন গণমিছিল থেকে বিশৃঙ্খলা করতে পারেনি। রাজপথ ফাঁকা পেলে বিরোধী দল অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই ১২ মার্চ রাজধানীতে মহানগর আওয়ামী লীগের অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি ওই দিন সহযোগী সংগঠন বা অন্য কোনো উপায়ে কোনো কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও দলীয় নীতিনির্ধারকেরা চিন্তা-ভাবনা করছেন। আগামী রোববার সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় বিরোধী দলের কর্মসূচির ব্যাপারে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
বিএনপির প্রতি আহ্বান: গতকাল ধানমন্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ১২ মার্চের কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১২ মার্চের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে এসেছেন। বিএনপির নেতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবি তুলেছেন। এ অবস্থায় ১২ মার্চের কর্মসূচি অর্থহীন। তিনি জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে যোগ দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়টি উপস্থাপন করার জন্য বিরোধী দলকে পরামর্শ দেন।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) কাউন্সিলে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কিছু অংশের প্রতিবাদে গতকাল এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। লিখিত বক্তব্যে মাহবুব উল আলম দাবি করেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল হিংসাশ্রয়ী, বিদ্বেষপ্রসূত, লাগামহীন, মনগড়া ও কুৎসিত।

No comments

Powered by Blogger.