জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তিন আবাসন প্রকল্প-লটারি না করে জামানতের ২০৭ কোটি টাকার লভ্যাংশ ভোগ by ভূঁইয়া নজরুল,

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কাছে প্লট-ফ্ল্যাটের আবেদন করে বিপাকে পড়েছেন দেশের ১২ হাজার ৮২৩ জন আবেদনকারী। ছয় মাসের মধ্যে এ বিষয়ে লটারি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে দেড় বছর। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীর মাইজদীর তিনটি আবাসন প্রকল্পে ফ্ল্যাট-প্লট পেতে আগ্রহী এসব স্বল্প-মধ্যম আয়ের আবেদনকারীর জামানতের প্রায় ২০৭ কোটি টাকার লভ্যাংশ পাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।


কিন্তু নিতান্ত প্রয়োজনেও এসব আবেদনকারী লটারির আগ পর্যন্ত জামানতের টাকা তুলতে না পেরে প্রতিদিন ধরনা দিচ্ছেন গৃহায়ণের কার্যালয়ে।
কবে নাগাদ এই লটারি হবে তা গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারাও বলতে পারছেন না। এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আবেদনপত্র বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী মাসেই এসব প্রকল্পের লটারি হতে পারে।' তবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঢিলেমি ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারণে আগামী কয়েক মাসেও লটারি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে নিজের চেয়ার ছেড়ে দর্শনার্থীর চেয়ারে বসে আছেন। পরিচিত লোক ছাড়া অন্যরা এসে এ অবস্থা দেখে ভাবেন, কর্মকর্তা অনুপস্থিত বা বাইরে কোথাও গেছেন। এর কারণ জানতে চাইলে অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আর বলিয়েন না ভাই, স্যার (নির্বাহী প্রকৌশলী) সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ দিনই ঢাকায় থাকেন। কিন্তু লোকজন প্রতিদিন এসে লটারি কখন হবে জানতে চায় আমাদের কাছে। এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পেরে নিজের চেয়ার ছেড়ে দর্শনার্থীর চেয়ারে বসে আছি।'
ছয় মাসের মধ্যে লটারি হবে_এই আশায় জামানতের ৭৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে চট্টগ্রামের হালিশহর 'জি' ব্লকে ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেছিলেন সরকারি চাকুরে শামসুন নাহার। গত বছরের আগস্ট থেকে জামানতের এই টাকা আটকে থাকলেও কবে নাগাদ ফেরত পাওয়া যাবে তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। শামসুন নাহার বলেন, 'আমার ফ্ল্যাটের প্রয়োজন নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জামানতের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক।'
ফিরোজশাহ কলোনিতে প্লটের জন্য আবেদনকারী ফজলুল করিম বলেন, 'সরকারি প্রকল্পে দ্রুত সিদ্ধান্ত হবে, এই ধারণা নিয়ে আবেদন করেছিলাম। এখন জামানতের টাকা দ্রুত ফেরত পেলেই হয়।'
লটারি বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উপপ্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ খালিদ হোসাইনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি ঢাকায় মিটিংয়ে রয়েছেন বলে অফিস থেকে জানানো হয়। তাঁর মোবাইল ফোনে কয়েকদফা ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া যায়নি।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, চট্টগ্রামের হালিশহর 'জি' ব্লকে আবাহনী মাঠসংলগ্ন এলাকায় ১০ তলার ছয়টি ভবনের নির্মিতব্য ২১৬টি ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেন ৫৮৭ জন। গত সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া প্রকল্পে জামানত বাবদ জমা হয় চার কোটি ৪০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অক্টোবরে শেষ হওয়া হালিশহর, ফিরোজশাহ, কৈবল্যধাম বিশ্বব্যাংক কলোনি ও শেরশাহ কলোনির বিভিন্ন সাইজের ১৭৭টি প্লটের বিপরীতে জমা পড়ে পাঁচ হাজার ৫৩৬টি আবেদন। প্রতিকাঠায় ৯০ হাজার টাকা দরে গড়ে তিন কাঠার প্লটের জন্য জামানত দিতে হয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা করে। সেই হিসাবে এই প্রকল্পে জামানত বাবদ জমা রয়েছে ১৪৯ কোটি ৪৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। নোয়াখালীর মাইজদী আবাসন প্রকল্পের ২৭১টি প্লটের জন্য গত ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করেন ছয় হাজার ৭০০ জন। তিন কাঠার প্রতি প্লটের জন্য ৮০ হাজার টাকা জামানত জমা দেওয়ায় গৃহায়ণের তহবিলে জমা পড়ে ৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

No comments

Powered by Blogger.