এটিএম বুথে জাল নোট-অবিলম্বে প্রতিকার দরকার

বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ার যে সংবাদগুলো সাম্প্রতিক সময়ে মিলছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। একের পর এক জাল নোট বিস্তারের খবরগুলো থেকে কেউ কেউ একে বড় হুমকি হিসেবেও বিবেচনা করছেন। জাল নোট তৈরি ও এর বিস্তার শুধু গুরুতর প্রতারণা নয়_ এটি রাষ্ট্রীয় বিনিময় ব্যবস্থা ও অর্থনীতির জন্যও বড় সমস্যা। বাজারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জাল নোট ছড়িয়ে পড়লে তা বিনিময় ব্যবস্থায় আস্থার সংকটও তৈরি করতে পারে।


এমন পরিস্থিতিতে জাল নোটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাই প্রত্যাশিত। এ ক্ষেত্রে জাল নোট উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থাগুলোর মূলে আঘাত হানার বিকল্প নেই। জাল নোট নিয়ে নাগরিকরা যখন উদ্বিগ্ন তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকের এটিএম বুথের মাধ্যমে জাল নোট ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা এ উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, সন্দেহ নেই। এটিএম বুথগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু একে পূর্ণাঙ্গ ব্যাকিং ব্যবস্থা বলার অবকাশ নেই। গ্রাহক যখন কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করেন তখন তার পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত বা জাল নোট পরীক্ষা করে তা বদলিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি তিনি সরাসরি অভিযোগ জানাতে চাইলেও তৎক্ষণাৎ করা কঠিন। অভিযোগ মিলেছে, বুথ থেকে জাল নোট পাওয়ার পর ব্যাংকে অভিযোগ করতে গিয়ে গ্রাহক প্রতিকার পাননি বরং উল্টো দোষারোপের শিকার হয়েছেন। এমন ঘটনা বেদনাদায়ক। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, ব্যাংকিং সিস্টেমে জাল নোটের অনুপ্রবেশ। নামি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকসেবার দিকে লক্ষ্য রেখে বুথ তৈরি করে। গ্রাহকসেবার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতিও ঘটেছে এতে। কিন্তু সেবার ফাঁক গলে যদি বুথে জাল নোট প্রবেশ করে তবে সেটি তাদের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। গ্রাহকদের মধ্যে আস্থার সংকটও তৈরি করবে। ব্যাংক কোন প্রক্রিয়ায় বুথে টাকা সরবরাহ করে তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, গ্রাহকরা একটি ব্যাংককে আস্থায় নিয়েই সে ব্যাংকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করে। গ্রাহকের আস্থার একটি ব্যাংকের বুথ যদি জাল নোট সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে তবে সংকট তৈরি হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর দায় সর্বাগ্রে বিবেচনায় নিতে হবে। তারা যদি কোনো তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা সরবরাহের ব্যবস্থা করে সে ক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়টিও তাদের বিবেচনায় থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বুথে জাল নোট পাওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা কিছু তদারকিমূলক উদ্যোগও নিয়েছে। ব্যাংকের লেনদেন ব্যবস্থায় জাল নোটের বিস্তার গুরুতর অপরাধ। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি জাল নোট সরবরাহকারীদের শনাক্ত করতে পারে তবে তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কোনো গ্রাহক জাল নোট পেলে তাৎক্ষণিকভাবে যাতে অভিযোগ জানাতে পারেন সে ব্যবস্থা বুথে রাখতে হবে। অভিযোগ আমলে নিয়ে নোট সরবরাহ ব্যবস্থার ত্রুটি সারাবার দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকের সুনাম রক্ষার দায়িত্ব সর্বাগ্রে ব্যাংকগুলোরই। বাংলাদেশ ব্যাংক বুথগুলোতে জাল নোট সরবরাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন, সেটি আশার কথা। পাশাপাশি জাল নোটের উৎস নিয়ে তাদের উদ্যোগী হতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে জাল নোটের উৎসগুলোকে সমূলে উৎপাটন করতে না পারলে ভবিষ্যতে এ নোটগুলো নাগরিকদের জীবনে আরও অনেক হয়রানি তৈরি করবে।

No comments

Powered by Blogger.