ল্যাংড়া জ্বর-ডেঙ্গুর হাত ধরে চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া শব্দটি বিদঘুটে মনে হলেও রোগটি তেমন ভয়াবহ নয়। আফ্রিকান পরিভাষায় শব্দটির অর্থ হলো 'কুঁজো হয়ে হাঁটা'। আমাদের দেশে রোগটিকে বলা হয় 'ল্যাংড়া জ্বর'। ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা দ্বারা রোগটি সংক্রমিত হয়ে থাকে। ভারতে রোগটির সংক্রমণ ২০০৫ সালে ব্যাপকভাবে দেখা দেওয়ার পর আমাদের দেশেও এর প্রাদুর্ভাব সম্প্রতি দেখা দিয়েছে। ২০০৮ সালে রাজশাহীর পবা অঞ্চলে রোগটি সর্বপ্রথম শনাক্ত হওয়ার পর এ বছর আবার


ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় কয়েক রোগীর শরীরে চিকুনগুনিয়া রোগের ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে।
যেভাবে রোগ চেনা যায়
দিনের বেলা ডেঙ্গু জ্বরের মতো মশা কামড়ালেই রোগটি দেখা দিতে পারে। এ রোগের বৈশিষ্ট্য হলো, কোথাও রোগের সংক্রমণ ঘটলে একসঙ্গে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়ে। আক্রান্ত রোগীর প্রচণ্ড জ্বর, মাথা ব্যথা, কাঁপুনি, বমি বমি ভাব, হাঁটু ও গিরাসহ মাংসপেশিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং ফুলে যায়। কোনো কোনো রোগীর শরীরে লাল ফুসকুড়ি হয় এবং ব্যথাও দেখা দিতে পারে। হাঁটু, গিরা ও মাংসপেশিতে প্রচণ্ড ব্যথার কারণে আক্রান্ত রোগী স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না। কুঁজো হয়ে লাঠির ওপর ভর করে চলাফেরা করতে হয়। রোগীকে দুই সপ্তাহ থেকে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত চলাফেরা করতে কষ্ট হতে পারে।
রোগের চিকিৎসা
ভাইরাস রোগের মূল চিকিৎসা হলো পরিপূর্ণ বিশ্রাম আর শুশ্রূষা। জ্বর থাকাকালে শুধু প্যারাসিটামল- জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে। জ্বর বেশি হলে স্পঞ্জ করতে পারেন। মুখে ওষুধ সেবন করতে সমস্যা হলে মলদ্বারে সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পারে। যে কোনো জ্বরেই শরীরে পানি ঘাটতি স্বল্প পরিমাণে হলেও দেখা দিয়ে থাকে। এ জন্য পানি এবং পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। জ্বরের সময় মুখে সবকিছু বিস্বাদ মনে হয়। তাই একটু মুখরোচক অথচ সহজপাচ্য খাবার রোগীকে দিতে হবে। খাবারের পুষ্টিমানের দিকটিও ভুলে গেলে চলবে না। নরম খিচুড়ি, পটোল, গাজর, কাঁচকলা, মিষ্টি কুমড়া সহযোগে হালকা মসলার তরকারির সঙ্গে লেবু বা আচার, ফলের রস, দুধ_ এসবই হবে এ রোগীর প্রধান খাদ্য। জ্বর চলে গেলেও শরীরে তীব্র যন্ত্রণা বা অস্থিসন্ধিতে ব্যাপক ব্যথা থেকে যায়। ফলে অযথা মালিশ না করে ফিজিওথেরাপি যেমন_ গরম পানি ও গোসল, ওয়াক্স থেরাপি, হিট থেরাপি এবং ব্যায়াম করতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা
ডেঙ্গু এবং অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতোই চিকুনগুনিয়া রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ বা চিকিৎসা নেই। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে আর শরীরের বাড়তি যত্ন নিয়েই রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এর চেয়ে বড় কথা, রোগের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে শুরুতেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা, বাড়ির আশপাশের ডোবা-নর্দমা পরিষ্কার রাখা এবং ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের বোতল, ক্যান, ফুলের টবের পানি জমতে না দেওয়া, বাড়িঘর পরিষ্কার রাখা, দরজা-জানালায় নেটের ব্যবস্থা করা, দিনে মশার কাপড় এড়াতে বাড়তি মোজা, মশা নিরোধক লোশন ব্যবহার_ এসবের মধ্য দিয়েই চিকুনগুনিয়াসহ ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
ডো. নাফিসা আবেদীন
রেজিষ্ট্রার, বারডেম

No comments

Powered by Blogger.