বিজয়ের মাসে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা শান্তিরঞ্জন সরকার

মৃত্যুর পর যে পুলিশ আমাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করবে, সেই পুলিশ মিথ্যা মামলায় আমাকে টেনেহিঁচড়ে পিকআপ ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে গেল। মহান বিজয়ের এই মাসেও পুলিশের দাপটের মুখে আমি পালিয়ে বেড়াচ্ছি। সরকার একখণ্ড জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত দিলেও পুলিশের সহযোগিতায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ওই সম্পত্তি থেকে আমাকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে।' শুক্রবার বিকেলে প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজের অসহাত্বের কথা এভাবেই তুলে


ধরলেন '৭১-এর বীর মুক্তিযোদ্ধা শান্তিরঞ্জন সরকার। ধনশালী প্রতিপক্ষের রোশানলে পড়ে শান্তিরঞ্জন এখন সবার দ্বারে দ্বারে করুণা ভিক্ষা চাইছেন। সরকারের দেওয়া খাসজমিতে তিনি ওঠতে পারছেন না। এর দলিলও হাতে পাচ্ছেন না। প্রায় সর্বস্বান্ত মুক্তিযোদ্ধা শান্তিরঞ্জনের কলেজ পড়ুয়া মেয়ের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
আফসোস করে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন 'আমার মৃত্যুর পর যে পুলিশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে আমাকে স্যালুট করবে, সেই পুলিশই আমাকে হেনস্তা করতে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। আমাকে অসম্মান করেছে পুলিশ।'
দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, রামনাথপুর গ্রামের বলরাম সরকারের ছেলে শান্তিরঞ্জন সরকার জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন_বাংলাদেশে এ যাবৎকালে যতগুলো তালিকা তৈরি হয়েছে, সবগুলোতে স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা তিনি। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাচের সেনাসদস্য হওয়ার গৌরব অর্জনকারী নায়েক শান্তিরঞ্জনের আর্থিক অসচ্ছলতা বিবেচনা করে সরকার এক একর খাস জমি দেন। জমি দখলে নিয়ে তিনি একটি ঘরও তোলেন সেখানে। অথচ প্রতিপক্ষের জনৈক আবদুল আজিজ ওই জমি কবলা দলিলমূলে ক্রয়কৃত জানিয়ে সেখান থেকে হটিয়ে দেয় তাঁকে।
গত অক্টোবরে এই কাহিনী জানাতে গিয়ে অশ্রুসজল কণ্ঠে শান্তিরঞ্জন জানান, ঘেরের বাসায় গিয়ে দেবহাটা থানার পুলিশ তাঁর সঙ্গে অসদাচরণ করে। প্রতিপক্ষের আজিজকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ তাঁর ওপর চড়াও হয়ে এই জমিতে কেনো এসেছি, তার কৈফিয়ত চায়। তিনি জমির কাগজপত্র দেখিয়ে জানান, এই জমি খাস এবং সরকার তাঁর নামে দিয়েছে। এ কথা বলতেই অশোভন আচরণ করে পুলিশের এসআই আবদুল বারী সব কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। পরে তাঁকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়। তাঁর নামে আবদুল আজিজ মামলা দিয়েছে বলে জানানো হয় তাঁকে। শান্তিরঞ্জন জানান, আবদুল আজিজের কোনো জমিই নেই সেখানে।
শান্তিরঞ্জন জানান, এ খবর জানতে পেরে দেবহাটায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল গনি ও আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনিরের হস্তক্ষেপে পুলিশ থানা থেকেই শান্তিরঞ্জনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এর পরও পুলিশ তাঁকে ধরতে নানা স্থানে হানা দিচ্ছে। ধরতে পারলে তাঁর হাত পা ভেঙে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে পুলিশ। তিনি বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। করুণা ভিক্ষায় ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে।
শান্তিরঞ্জন আরো জানান, পৈতৃক মাত্র ছয় শতাংশ জমিতে বসবাস তাঁর। মেয়ে মীনাক্ষী সরকার সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মান শ্রেণীতে পড়তেন। আর্থিক অনটনের মুখে তাঁর কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। শান্তিরঞ্জনের দাবি, সরকারের দেওয়া জমি বুঝিয়ে দিয়ে এ-সংক্রান্ত দলিলও ফেরত দেওয়া তাঁকে। একই সঙ্গে প্রতিপক্ষের আজিজকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ কেনো তাঁকে হেনস্তা করল, তারও প্রতিকার দাবি করেন শান্তিরঞ্জন সরকার।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইনামুল হক বিশ্বাস বলেন, শান্তিরঞ্জন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনেও পুলিশ তাঁকে অপমান করেছে। তিনিও এর প্রতিকার দাবি করেন।
দেবহাটা থানার ওসি শাহজাহান আলী খান জানান, মুক্তিযোদ্ধা শান্তিরঞ্জনের নামে দায়ের করা মামলা মিথ্যা হলে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। দারোগা আসামি ধরতে গিয়ে জানতে পারেন তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। সে কারণে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার না করে ফিরে আসে।

No comments

Powered by Blogger.