প্যারাসিটামল প্লাসের ঝুঁকি-সংশ্লিষ্ট মহলকে দ্রুত দৃষ্টি দিতে হবে

ষুধ জীবনরক্ষাকারী অতি জরুরি একটি উপাদান। কিন্তু এই ওষুধই যদি জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে নিশ্চয়ই তা দুশ্চিন্তা-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বড় কারণ। বাংলাদেশে উৎপাদিত অনেক ওষুধের মান, যথাযথ তৈরি প্রক্রিয়া এবং উপকরণ নিয়ে গুরুতর কিছু প্রশ্ন রয়েছে এবং এসব প্রশ্ন নতুন কিছু নয়। ৩ ডিসেম্বর ২০১১ 'প্যারাসিটামল প্লাস, সাবধান!' শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা একদিকে উদ্বেগজনক,


অন্যদিকে ঔষধ পরিদপ্তরের এ ব্যাপারে রহস্যজনক মৌনতা প্রশ্নবোধক। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, দেশে উৎপাদিত এসব প্যারাসিটামল শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ব্যথা সারাতে গিয়ে মানুষ নিজের অজান্তে কিডনি ও লিভারকে ফেলে দিচ্ছে ঝুঁকির মুখে।
ঔষধ পরিদপ্তর সূত্রে প্রকাশ, দেশে কমপক্ষে ৬০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্যারাসিটামল বিপি ৫০০ মিলিগ্রাম এবং ক্যাফিনো ইউএসপি ৬৫ মিলিগ্রাম সমন্বিত ট্যাবলেট তৈরি করছে_যদিও একেকটির মূল্য একেক রকম। ক্যাফিনো জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর। কোনো রকম বাছবিচার না করে কিংবা প্রয়োজন ব্যতিরেকে ফার্মেসিগুলোতে গেলেই যেকোনো ব্যথা উপশমের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই প্যারাসিটামল প্লাস দিয়ে দেওয়া হয়।
এ দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ অসচেতন এবং তাদের এসব বাছবিচার করার শক্তি-সামর্থ্য-অবকাশ কিংবা যোগ্যতা নেই। যখন প্রথম এ দেশে ওষুধ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন বিশেষজ্ঞ মহল থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। প্যারাসিটামলের যথেচ্ছ ব্যবহার খুব বেড়ে গেছে এবং এর ফলে বহু শারীরিক সমস্যা-সংকটও দেখা দিচ্ছে। আমাদের পাশের দেশ ভারতে ইতিমধ্যে ক্যাফিনোযুক্ত প্যারাসিটামল নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ৩২৫ মিলিগ্রামের বেশি প্যারাসিটামল শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। ভারতের ওষুধ প্রশাসন থেকে অন্য উপকরণযুক্ত প্যারাসিটামলকে সর্বোচ্চ ৩২৫ মিলিগ্রামের মধ্যে (প্রতিটি) তৈরির জন্য বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। আমাদের ঔষধ পরিদপ্তর দ্রুত এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে_এটি জরুরি প্রত্যাশা। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন। শুধু প্যারাসিটামল নয়, এমন আরো অনেক ওষুধ আছে যেগুলোতে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়টি আমলে না রাখলে সমূহ বিপদের আশঙ্কা থেকেই যায়। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গিকে যদি প্রাধান্য দেয় তাহলে বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে সেভাবেই ভাবতে হবে। জনস্বাস্থ্য নিয়ে যেমন কোনো হেলাফেলা নয় তেমনি জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে কোনো রকম কালক্ষেপণও কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.