বিএনপি : মৌলভীবাজার-১ বড়লেখা ও জুড়ী-কোন্দল আছে তবুও...

ড়লেখা ও জুড়ী উপজেলা বিএনপি দলীয় কোন্দলে জর্জরিত। এই দুই উপজেলায় কেন্দ্রের কর্মসূচি পৃথকভাবে পালিত হয়। দুটি উপজেলাতে বিএনপির দুটি করে কমিটি। দলীয় কোন্দলের মধ্যেও আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে বড়লেখা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম ও বড়লেখা পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ফখরুল ইসলামের বিজয়কে দলের দুটি গ্রুপই তাদের সাফল্য হিসেবে দাবি করে।


গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. শাহাবউদ্দিনের কাছে ৬৯ হাজার ৬০৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী হারানো আসন ফিরে পাওয়ার জন্য মাঠে নেমেছেন। গ্রামে গ্রামে তিনি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকায় বসবাস করলেও প্রায়ই তিনি এলাকায় এসে গণসংযোগ করছেন।
বড়লেখা : বড়লেখা উপজেলায় বিএনপির দুটি কমিটি আছে। দুটি কমিটিই নিজেদের বৈধ দাবি করে আলাদাভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। একটি কমিটির সভাপতি আবদুল হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক দারাদ আহমদ। অন্যটির সভাপতি দারাদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হক। আবদুল হাফিজ জানান, তিনি যে কমিটির সভাপতি সেটি কেন্দ্র অনুমোদিত। দারাদ আহমদের বিরুদ্ধে জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের নামে এক জাপানি দম্পতির কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের সংবাদ একটি পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ায় তাঁকে বহিষ্কার করে ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক মুজিবুর রহমান খসরুকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য এবাদুর রহমান চৌধুরী। সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরীকে নিয়ে আসন পুনরুদ্ধারের জন্য আবদুল হাফিজের নেতৃত্বের কমিটি সভা-সমাবেশ করছে। তুখোড় ও বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে পরিচিত এবাদুর রহমান চৌধুরী বর্তমান সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা তুলে ধরে সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মুজিবুর রহমান খসরু বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে এবাদুর রহমান চৌধুরীর বিকল্প নেই। বড়লেখা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম ও পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী ফখরুল ইসলামের বিজয়ী হওয়ায় আবদুল হাফিজের অনুসারী নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত।
জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমানপন্থীর অপর গ্রুপের সভাপতি দারাদ আহমদ বলেন, 'জেলা কমিটিকে পাশ কাটিয়ে এবাদুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে যে পকেট কমিটি কাজ করছে, সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। সেই অবৈধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার নাম ছিল। আমি এ অবৈধ কমিটি মানি না। তাই আমাকে বহিষ্কারের প্রশ্নই উঠে না। আগামী সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-১ আসনে আমি প্রার্থী হব বলেই প্রতিপক্ষরা আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।' দারাদ আহমদ আরো বলেন, জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে ছয় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের খবর যে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেটা অতিরঞ্জিত। তিনি দাবি করেন, কোনো জাপানির কাছ থেকে এভাবে টাকা আনেননি তিনি। এটি তাঁর বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার। উল্টো তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী এবাদুর রহমান চৌধুরীকে বসন্তের কোকিল উল্লেখ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে দল তাঁকেই মনোনয়ন দেবে।
জুড়ী : জুড়ী উপজেলাতেও বিএনপির দুটি গ্রুপ বিদ্যমান। সেখানে কেন্দ্র অনুমোদিত কমিটি না থাকলেও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খালেদা রব্বানী অনুসারী একটি গ্রুপ রয়েছে। অন্য গ্রুপ জেলা কমিটির সভাপতি নাসের রহমানের অনুসারী। খালেদা রব্বানী গ্রুপ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হলেও পরে দলের নীতি-বহির্ভূত কাজ করার অভিযোগে মুজিবুর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে ফখরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নাসের রহমান গ্রুপ কমিটির সভাপতি ছালেহ আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। জুড়ী উপজেলাতে বিএনপি জন্য বড় ফ্যাক্টর সাবেক বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদ উদ্দিন বটলের পরিবার। তিনি নাসের রহমানের পক্ষে রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তিনিও সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। মৌলভীবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা এবাদুর রহমান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় নেতৃত্ব নিয়ে বিএনপিতে গ্রুপিং আছে। বড় দলে এটা থাকাই স্বাভাবিক। আমাদের লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে এ আসন পুনরুদ্ধার করা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার একতরফা সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেছে। দেশের মানুষ তত্ত্ব্বাবধায়ক ব্যবস্থার পক্ষে। আমরা সেই আন্দোলনে এখন রাস্তায়। তত্ত্বাবধায়কের বিধান বহাল করেই আমরা নির্বাচনে যাব। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমার আসনে শুধু নয়, সারা দেশের সব আসনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে। কারণ বড়লেখা-জুড়ীর মতো সারা দেশেই আওয়ামী লীগের কেবলই ব্যর্থতা। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতাই বিএনপির সফলতার কারণ হবে।' এবাদুর রহমান চৌধুরী বলেন, 'বড়লেখা-জুড়ীতে আমি যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছিলাম, সেগুলো এমপিওভুক্ত করতে পারেননি বর্তমান সংসদ সদস্য। আমি যেসব রাস্তা করেছিলাম সেগুলো অর্থ বরাদ্দের অভাবে রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত হচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.