আজ ঢাকায় হরতাল-নির্বাচন নয়, গণভোট দিন : ফখরুল

ডিসিসি ভাগের প্রতিবাদে আজ ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে চারদলীয় জোটের শরিক দল, সমমনা দল ও বিএনপি ঘরানার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন। হরতালের সমর্থনে গতকাল শনিবার দিনভর নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হরতালের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ
\করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।=মির্জা ফখরুল লিফলেট বিতরণকালে সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিভক্তি প্রশ্নে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের 'চ্যালেঞ্জের' জবাবে গণভোট করা হোক। গণভোট হলে সারা দেশের মানুষ ও নগরবাসী ঢাকা বিভক্তির বিরুদ্ধে ভোট দেবে। তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাহেব সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যে চ্যালেঞ্জ আমাদের দিয়েছেন, তার জবাবে বলতে চাই_নির্বাচন পরের কথা, আগে ঢাকা বিভক্তি নিয়ে গণভোট দিন। গণভোটেই প্রমাণ হবে জনমত কোন দিকে আছে।' তিনি দাবি করেন, ঢাকার ৯৮ শতাংশ মানুষ আগের মতো একীভূত সিটি করপোরেশন চায়।
শুক্রবার মহানগর আওয়ামী লীগের সমাবেশে সৈয়দ আশরাফ বলেন, 'আমি বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ করছি, আপনারা নির্বাচনে আসুন। পালিয়ে না গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিন। বিজয়ী হলে আমরা মেনে নেব।' গত মঙ্গলবার সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন সংশোধন বিল পাস হয়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিলটি ইতিমধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে 'ঢাকা উত্তর' ও 'ঢাকা দক্ষিণ' নামে দুই ভাগে ভাগ করা হবে। প্রশাসক নিয়োগ করে ৯০ দিনের মধ্যে দেওয়া হবে নির্বাচন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রবিবার ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি গ্রহণ করে।
হরতালের সমর্থনে গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে নেতা-কর্মীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ সময় বলেন, সরকার হরতাল সামনে রেখে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে। পুলিশ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
লিফলেট বিতরণের সময় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ, যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, রুহুল কবির রিজভী, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক নান্নু, রফিক শিকদার, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী প্রমুখ।
'পুলিশের পোশাকে ক্যাডার' : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেছেন, হরতাল ঠেকাতে সরকারি দলের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কুলি লীগের ক্যাডারদের পুলিশের পোশাক পরিয়ে নামিয়ে দেওয়া হবে এ ধরনের খবর আমরা পেয়েছি। তিনি বলেন, গতকাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ ঢাকার দু'জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার ও ৫৫ জনকে আহত করেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি দাবি করেন, হরতালের পক্ষে জনগণের ব্যাপক সারা পাওয়া গেছে। জনগণই ডিসিসি ভাগের প্রতিবাদে লাগাতার হরতাল দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে।
তিনি অভিযোগ করেন, শনিবার সকালে মিরপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নেতৃত্বে লিফলেট বিলি করার সময় পুলিশের অশোভন আচরণের শিকার হন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গাড়িতে তুলতে চেয়েছিল। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রেসক্লাব থেকে লিফলেট বিতরণ করতে করতে বিজয় নগরের দিকে আসার সময় দলীয় নেতা-কর্মীরা পেছন থেকে পুলিশ লাঠিচার্জের শিকার হন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের এক বক্তব্যের জবাবে রিজভী আহমেদ বলেন, "রাজা মহারাজার মতো আপনি বলছেন, 'কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না'। আমি বলতে চাই, আপনারা তো আজীবনের জন্য ক্ষমতায় আসেননি। আপনাদেরকে ছাড় দেবে কে?"
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদ, কবির মুরাদ, নির্বাহী সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, বেলাল আহমেদ, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বাস্তুহারা দলের সভাপতি হাফিজুর রহমান টিটু, মৎস্যজীবী দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
লিফলেট বিতরণ : দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এলিফ্যান্ট রোডে, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নেতৃত্বে মিরপুরে এবং যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল মোহাম্মদপুর, আসাদ গেইট, লালমাটিয়া, আড়ং ও সিটি হাসপাতালের সামনে নেতা-কর্মীদের নিয়ে হরতালের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ করেন।
মিরপুর এলাকায় বিকেলের দিকে ওয়ার্ড কমিশনার ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম মেহেরুন্নেসা হকের নেতৃত্বে হরতালের সমর্থনে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দেয় এবং মেহেরুন্নেসাকে আটক করে নিয়ে যায় বলে মিরপুর মহিলা দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
বিভিন্ন দলের সমর্থন
এলডিপি : হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের সমুচিত জবাব দেবে ঢাকাবাসীসহ সারা দেশের মানুষ। তিনি বলেন, হরতালের পরেও সরকার সিদ্ধান্ত থেকে না হটলে তাঁর দল বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানাবে। ঢাকায় অবস্থানরত এলডিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান, মিটিং, মিছিল ও পিকেটিং করারও আহ্বান জানান তিনি। এদিকে হরতালের সমর্থনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেদোয়ান আহমেদের নেতৃত্বে ঢাকার মহাখালী এলাকায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ দিদার বখ্তের নেতৃত্বে মিরপুর এলাকায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য মামদুদুর রহমানের নেতৃত্বে উত্তরা এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করা হয়।
খেলাফত মজলিস : খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক গতকাল ঢাকা মহানগরী খেলাফত মজলিস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হরতালের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন দ্বিখণ্ডন বিল বাতিল করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিজেপি : বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ ও মহাসচিব শামিম আল মামুন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ঢাকাকে দুই ভাগ করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোভাব উন্মোচিত হলো।
'অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা' : ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমির ও ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী হরতাল সমর্থন করে বলেছেন, 'বর্তমান সরকার অপকর্ম করে আবার সে অপকর্ম ঢাকার জন্য জোর করে অভিনন্দন আদায়ের কালচার শুরু করেছে।' গতকাল শনিবার বাদ আসর লালবাগের কার্যালয়ে সহকর্মীদের সাথে এক পরামর্শ সভায় মুফতি আমিনী এ কথা বলেন। সরকার ইসলামকে ধ্বংস করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'একজন কুখ্যাত খবিছ কবর পূজারি ইসলামবিদ্বেষী ব্যক্তিকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ডিজি বানিয়েছে। কোরআন ও ইসলামবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে পদত্যাগে বাধ্য করা বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার পতনের আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো এডেন্ডা নেই।'
এ ছাড়া হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলো পৃথকভাবে বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে দলের নেতারা হরতালের সময় মাঠে থাকার কথা ব্যক্ত করেন। জোটের শরিক দলের মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট এবং ১১টি সমামনা রাজনৈতিক দল-জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ, ন্যাপ ভাসানী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন ও ইসলামিক পার্টি এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।

No comments

Powered by Blogger.