কুমিল্লা সিটি নির্বাচন-দুর্নীতির অভিযোগ প্রধান দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধেই, ছিল হত্যা মামলাও by আবুল কাশেম হৃদয়,

মিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগ সমর্থিত অধ্যক্ষ আফজল খান এবং নাগরিক কমিটির প্রার্থী বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির মামলা। অধ্যক্ষ আফজল খানের বিরুদ্ধে তিনটি দুর্নীতির মামলা স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আর মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে এক-এগারোর সময় দায়ের করা দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।


তাঁর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলার কার্যক্রমও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে। এই দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা থাকলেও কেউ অব্যাহতি পেয়ে যান, আবার কেউ বেকসুর খালাস পেয়ে যান। মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় দাখিল করা হলফনামা থেকে জানা যায় এসব তথ্য।
এ ছাড়া অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা নুর উর রহমান মাহমুদ তানিমের বিরুদ্ধে জননিরাপত্তা বিশেষ বিধান আইনের একটি মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা থাকলেও তাতে তিনি বেকসুর খালাস পান। জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এয়ার আহমেদ সেলিমের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা না
থাকলেও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের একটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছিলেন। মেয়র পদে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠুর বিরুদ্ধে অস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য আইনসহ সাতটি মামলা থাকলেও তিনি সব মামলাতেই অব্যাহতি অথবা খালাস পান।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাঁচজন হচ্ছেন_আওয়ামী লীগ সমর্থিত অধ্যক্ষ আফজল খান, নাগরিক কমিটির প্রার্থী বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু, জাতীয় পার্টির সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এয়ার আহমেদ সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মিঠু। পাঁচজনের মধ্যে মূলত দুজনের মধ্যেই মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ দুজন হলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত অধ্যক্ষ আফজল খান ও নাগরিক কমিটির প্রার্থী বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কু।
অধ্যক্ষ আফজল খানের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তিনটি মামলা স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা) আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মামলাগুলোর নম্বর হচ্ছে ৩৬/০১, ৩৭/০১ ও ৩৮/০১। এ ছাড়া সমবায় ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলায় তিনি কারাগারেও গিয়েছিলেন। আফজল খানকে ১৯৯৯ সালে শহরে আলোচিত শঙ্কর হত্যার ঘটনার পর দলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। ওই মামলা থেকে তিনি ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অব্যাহতি পান। এক-এগারোর পর দায়ের করা একটি দুর্নীতি দমন আইনের মামলার অভিযোগ থেকেও তিনি অব্যাহতি পান।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ আফজল খান বলেন, 'খবর নেন, কুমিল্লার কোনো মানুষ বলে কি না_আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুনখারাবির কোনো অভিযোগ আছে কি না?' তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় ফাঁসি দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। মানুষ এর বিরুদ্ধে যখন ফুঁসে ওঠে, তখন তাঁকে মুক্তি দিতে হয়েছিল।
নাগরিক কমিটির প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে এক-এগারোর সময় তিনটি দুর্নীতির মামলা হলেও দুটিতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এক-এগারোর পর ঢাকার রমনা মডেল থানায় দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ১০৯ ধারায় দায়ের করা একটি মামলার কার্যক্রম বর্তমানে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত আছে। সেই সঙ্গে এক-এগারোর পর দায়ের করা কর ফাঁকির একটি মামলার কার্যক্রমও বর্তমানে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত। এসব মামলা ছাড়াও মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে হত্যাসহ পাঁচটি মামলা ছিল। এসব মামলায় তিনি কোনোটিতে বেকসুর খালাস এবং কোনোটিতে অব্যাহতি পান। ১৯৭৯ সালে প্রবীর হত্যার ঘটনায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মনিরুল হক সাক্কু জানান, তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, তা রাজনৈতিক। দলের ভেতর-বাইরের প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে এসব করেছে। এক-এগারোর পর দলের একটি অংশ তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে দুর্নীতি দমন অফিসে নামে-বেনামে অভিযোগ করেছে। তিনটি মামলার মধ্যে দুটিতেই দুর্নীতি দমন কমিশন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.