ইলিয়েভস্কির ভুল এবার না হলেই রক্ষা-সনৎ বাবলা,

হাতি পড়েছে গর্তে, সুযোগে নেপালও 'চামচিকা' থেকে অতিকায় ডাইনোসরের মতো হুংকার দিচ্ছে। এই অঞ্চলের ফুটবলে বাংলাদেশকে হাতির মর্যাদাই দিতে হবে। প্রতিপক্ষ নেপাল হলে তো এই আসন পেতে দিচ্ছে রেকর্ডবুকই। কিন্তু এই মুহূর্তে তা নিতে পারছে না। সর্বশেষ খবর হলো, সেই হাতি এখন চামচিকাতেই মুগ্ধ! অবিশ্বাস্য মুগ্ধতা নিয়ে বাংলাদেশি খেলোয়াড়রাও করে গেলেন নেপাল-বন্দনা। সুতরাং দ্বিতীয় ম্যাচেও আজ বাংলাদেশ কঠিন বাধার সামনে,
একটু পা হড়কালেই ছুটি হয়ে যেতে পারে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকেই।লাল-সবুজের জন্য এটি তাই সেমিফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণী ম্যাচ। সাধারণত খেলোয়াড়রাই মাঠে খেলে ভাগ্য গড়েন। বাংলাদেশের বেলায় ভিন্ন। ভাগ্যের নাটাই হাতে নিয়ে বসেছেন নিকোলা ইলিয়েভস্কি। সঠিক পজিশনে এই কোচের খেলোয়াড় নির্বাচন এবং একাদশ গড়ার মধ্য দিয়েও হতে পারে দলের জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি। তাঁর দাবি যদিও '২৫ বছরের অভিজ্ঞতার জহুরি চোখ ভুল করতে পারে না।' ভুল না হলেই হয়, তাতে গর্তে পড়া হাতি আবার উঠে দাঁড়াবে। গতবারের মতো অন্তত সেমিফাইনালে ওঠার পথটা সুগম হবে। এই পথের পথিক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই ফেভারিট হয়ে গেছে নেপাল।

সেটা কী করে শুনুন তাদের কোচ গ্রাহাম পল রবার্টসের মুখে, 'প্রথম ম্যাচের ভালো পারফরম্যান্সটাই আমাদের প্রেরণা। ম্যাচ জিততে না পারলেও আমাদের ওই খেলাটাই খেলতে হবে কাল (আজ) এবং সেটা খেলোয়াড়রা পারবে বলেই আমি আশা করি।' নেপালের ব্রিটিশ কোচ আশাবাদী তাঁর দল নিয়ে আর সেই দলকে দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল বাংলাদেশের মেসিডোনিয়ান কোচের। মালদ্বীপের বিপক্ষে নেপালিদের পারফরম্যান্স দেখে ইলিয়েভস্কি খেয়েছেন ধাক্কা, 'খুব আশ্চর্য হয়েছি তাদের খেলা দেখে। তাদের বল নিয়ন্ত্রণে রেখে খেলা, পাসিং-শুটিং খুব ভালো। ম্যাচটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গেল।'
কোন ম্যাচটা যে আসলে তাঁর জন্য সহজ, সেটা বলাও কঠিন। প্রথম ম্যাচ বলে পাকিস্তান ছিল কঠিন প্রতিপক্ষ। তাদের প্রতিশোধ-স্পৃহার কারণে হয়েছিল আরো কঠিনতর। দ্বিতীয় ম্যাচে আজ নেপাল কঠিন হয়ে গেল আগের ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে। অথচ এই নেপালিরা গত দেড় যুগের ফুটবল ইতিহাসে একবারও হারাতে পারেনি বাংলাদেশকে। সর্বশেষ হারিয়েছিল '৯৩ সালে ঢাকায় ১-০ গোলে, তার পর থেকে ছয় ম্যাচ খেলে প্রতিটিতেই হেরেছে বাংলাদেশের কাছে। সর্বশেষ জয় ২-০ গোলে, ২০০৫ সালে করাচি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। পরের ছয় বছরে দুই দল মুখোমুখি হয়নি। এর মধ্যেই নাকি ব্যাপক পরিবর্তন হয়ে গেছে নেপাল ফুটবলে। তাদের মিডিয়ার দাবি, যেকোনো সময়ের তুলনায় এটা তাদের সেরা দল। ব্রিটিশ কোচের অধীনে থেকে কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ায় প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলে দলটি হয়েছে শাণিত। ওসব ম্যাচের সুফলই নাকি এখন পাচ্ছে নেপাল।
বাংলাদেশ বিদেশে গিয়ে বেশ কয়েকটি প্র্যাকটিস ম্যাচ না খেললেও দেশের মাঠে বিদেশিদের নিয়ে গড়া শক্তিশালী দলের সঙ্গেই লড়েছে। খেলেছে লিগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের সঙ্গেও। কিন্তু তার কোনো সুফল চোখে পড়েনি প্রথম ম্যাচে। বরং ওই ম্যাচ ড্র করার পর শুরু ইলিয়েভস্কির মুখে আবার সেই প্র্যাকটিস ম্যাচের অভাবের আহাজারি। ওদিকে খেলোয়াড়দের আহাজারি কোচের অস্থিরমতির স্থিতি ফেরানোর জন্য। পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাদ দিয়ে অন্তত একটি একাদশে থিতু হোন তিনি_এটাই সবার কামনা। সমস্যাটা হলো, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? এই বিদেশি কোচকে বোঝাবে কে? দলনেতা হারুনুর রশীদ কিংবা ম্যানেজার আরিফ খান জয় থাকলেও নারাজ তাঁরা সেই ঝুঁকি নিতে। তাই এই মুহূর্তে নিকোলা ইলিয়েভস্কির সুমতি ফেরার প্রার্থনা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এখন পর্যন্ত যে খবর, তাতে প্রথম ম্যাচের দল থেকে চারজনকে বাদ দিয়ে কোচ মেতেছেন নতুন জুয়ায়। বাদ পড়ছেন প্রথম ম্যাচের বাজে পারফরমার অধিনায়ক সুজন, প্রথমার্ধে চমৎকার খেলা মিডফিল্ডার শাহেদ এবং দুই ফরোয়ার্ড এমিলি ও অনীক। তাঁদের জায়গায় শুরুর একাদশে দেখা যাবে দুই ডিফেন্ডার মামুন মিয়া ও আতিকুর রহমান মিশু এবং দুই ফরোয়ার্ড তৌহিদ ও মালেককে। শেষ দুজন তরুণ স্ট্রাইকার, এমিলি-মিঠুনকে প্রথম একাদশের বাইরে রেখেই কোচের দুই তরুণকে দিয়ে ইলিয়েভস্কির নতুন পরীক্ষা নেপালের বিপক্ষে। লেগে গেলে হিরো, নইলে জিরো।
দল দেখে একটু ভিন্নতা আঁচ করা যাচ্ছে। শুধু অ্যাটাক বাদ দিয়ে কোচ ডিফেন্সে খানিকটা মনোযোগী হয়েছেন, 'ওদের ৭ নম্বর (বিজয় গোরাং) বাঁ দিক দিয়ে বেশ ভালো আক্রমণ করে, ভালো ক্রস করে। সেই পথটা বন্ধ করতেই রাইট ব্যাক নাসিরকে একটু ওপরে খেলিয়ে তার পেছনে খেলাব মামুন মিয়াকে।' এ ছাড়া অ্যাটাকিং ফরমেশন ৪-৩-৩ থেকে তিনি সরে আসছেন ৪-৪-২-এ, কারণ দেশের বেশির ভাগ ক্লাবই খেলে এই ফরমেশনে আর গোল খেলেই তো 'দিল্লি কা লাড্ডু'র বিস্বাদ নিয়ে ফিরতে হবে। গ্রুপের সব দলেরই সংগ্রহ ১ পয়েন্ট করে। দ্বিতীয় ম্যাচে কেউ হারা মানেই সেমিফাইনালের আশা প্রায় শেষ। এই কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে ইলিয়েভস্কির উপলব্ধি, 'এটা বাঁচা-মরার ম্যাচ। খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরো সুশৃঙ্খল ফুটবল, অধিক মনোসংযোগ চাই। তাদের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে খেলতে হবে।' সেটা পারলেই চামচিকার ডাইনোসর হওয়া হবে না আর হাতি গর্ত থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোল্লাসে এগোবে সেমিফাইনালের পথে।

No comments

Powered by Blogger.