নূপুর কি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে? by ইমদাদ হক

নূপুর কি আর স্বাভাবিক হবে না! বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলবে না, হাসবে না, গাইবে না আগের মতো! জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী নূপুরের দিকে তাকালে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ২২ নভেম্বর এক শোকাবহ দিন। এদিন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন বিভাগের শিক্ষকসহ এক শিক্ষার্থী। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ১৩ নভেম্বর ভারতের উদ্দেশে এক শিক্ষা সফরের আয়োজন করে।


২৪ জনের এ দলটি ভারতের দিলি্ল থেকে সিমলা যাওয়ার পথে হরিয়ানায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়। ঘটনাস্থলেই বিভাগের শিক্ষক হোসনে আরা মোতাহের নিহত হন। গুরুতর আহত হন শিক্ষার্থী শামিমা ইয়াসমিন মুন্নী, নূপুর, প্রান্তর, খীসা, মিথিলা, লিপি প্রমুখ। দুর্ঘটনার ১৭ ঘণ্টা পর প্রাণ হারান মুনি্ন। আহতদের নূপুর বাদে সবাই বিদেশে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ শেষে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু নূপুুর এখনও জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে। এখনও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি তিনি। এ ঘটনায় চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মুন্নীর স্মরণে তার সহপাঠীরা নিজেদের উদ্যোগে একটি স্মৃতিফলক তৈরি করে। জায়গাটির নাম দিয়েছেন 'মুন্নী চত্বর'। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের নামকরণ 'মুন্নী ভবন' শিক্ষার্থীদের দাবি থাকলেও তা বরাবরই উপেক্ষিত রয়ে গেছে। দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে সর্বমহলের দাবিও মানা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার তাজনাহার আহত নূপুরের পরিবারের জন্য কিছু একটা করার জোর দাবি জানান। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় কোনো কর্মচারীর মৃত্যু হলে তার পরিবারের যে কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। একাডেমিক কার্যক্রমে জড়িত অবস্থায় কোনো শিক্ষার্থীর এমন দুর্ঘটনা ঘটলেও সেক্ষেত্রেও কিছু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া শিক্ষা সফরের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।
মানবিক আবেদন : দীর্ঘ ৯ বছরের চিকিৎসা শেষে নূপুর এখন অনেকটাই সুস্থ। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন। কথা বলতে পারছেন। পারছেন চলাফেরা করতেও। কিন্তু মানসিকভাবে স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরে আসতে পারেননি। কিন্তু এখন স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরতে আগ্রহী মেধাবী এ শিক্ষার্থী। সমাজের বিত্তবানদের কাছে আবেদন, কোনো সহৃদয় ব্যক্তি কি পারেন তাকে একটু সহযোগিতা করতে! তার বাবা টেক্সট বুক বোর্ডের কর্মকর্তা আবুল হাশেম খান বলেন, দীর্ঘ ৯ বছরে মেয়ের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তিনি। এর চিকিৎসার ভার বইতে গিয়ে অপর তিন মেয়ের শিক্ষাজীবন হুমকির সম্মুখীন। এখন নূপুরের একটা চাকরিই পারে অসহায় একটি পরিবারে হাসি ফিরিয়ে আনতে। স্বাভাবিক ধারায় একটি পরিবারকে ফিরিয়ে আনতে।

No comments

Powered by Blogger.