মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাতিল দাবি বিএনপির

ন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনি কাঠামো ও বিচার কার্যক্রমের ওপর কোনো আস্থা নেই জানিয়ে অবিলম্বে এর কার্যক্রম বাতিলের দাবি জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটির পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, 'এই ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্তদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই আদালতের প্রতি বিএনপির কোনো আস্থা নেই। এর কার্যক্রম পূর্ব নির্ধারিত ছক অনুযায়ী লোক দেখানো বিচার সম্পাদন ও ফরমায়েশি


সাজা প্রদানেরই নামান্তর। অবিলম্বে এই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাতিল করা হোক।'গতকাল শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেওয়ার ঘটনা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালের আইনি কাঠামো ও বিচার কার্যক্রম সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সরকার টালবাহানা করে এই ট্রাইব্যুনালকে একটি অভ্যন্তরীণ আদালত হিসেবে অভিহিত করেছে। কিন্তু অভিযুক্তদের সম-অধিকার প্রদানে নিশ্চয়তা দেয়_এমন সব আইন স্থগিত রেখেছে।
সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ অভিযোগ করেন, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপক্ষ এক বছর ধরে মামলার কার্যক্রম চালিয়েছে। অথচ অভিযুক্ত সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মাত্র তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্র ও অভিযুুক্ত পক্ষ সমান সুযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। তিনি বলেন, বিএনপি সত্যিকারের 'যুদ্ধাপরাধের' বিচার চায়। তবে সেই বিচার হতে হবে দেশের প্রচলিত আইনে, যাতে বিচার নিয়ে জনমনে কোনো সন্দেহ না থাকে।
অবিলম্বে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাতিলের দাবি জানিয়ে মওদুদ বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, বিদ্যমান আইনি কাঠামোতে ট্রাইব্যুনাল একটি আজ্ঞাবাহী রাবার স্ট্যাম্প সংগঠন ব্যতীত কিছু নয়। মার্কিন অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ স্টিফেন র‌্যাপের সুপারিশ বাস্তবায়ন করে অবিলম্বে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি।
স্টিফেন র‌্যাপের সুপারিশ বাস্তবায়ন না হলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকার কোনো বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন ব্যারিস্টার মওদুদ।
মওদুদ বলেন, 'সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না হলে জনাব চৌধুরী এই ট্রাইব্যুনালকে কোনো আইনসম্মত, স্বাধীন ও ন্যায়পরায়ণ আদালত হিসেবে স্বীকার না করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি (সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই ভেবে যে একতরফা শুনানি ও বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে। তিনি বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশের অন্য নাগরিকের মতো প্রাপ্য মৌলিক অধিকার তাঁকে না দিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলে তা হবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শামিল।'
ট্রাইব্যুনালের আন্তর্জাতিক মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, 'স্টিফেন র‌্যাপের সুপারিশের জবাবে সরকার বলার চেষ্টা করছে, ট্রাইব্যুনালটি অভ্যন্তরীণ।' মওদুদ সরকারের কাছে জানতে চান, 'ট্রাইব্যুনালটি যদি অভ্যন্তরীণই হবে, ট্রাইব্যুনাল বিষয়ে পরামর্শের জন্য র‌্যাপকে আমন্ত্রণ জানালেন কেন? রোম বিধিমালা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেছিলেন কেন? অভ্যন্তরীণ আইন ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি) প্রয়োগ করছেন না কেন?'
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, হান্নান শাহ, সহসভাপতি সেলিমা রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, সাবেক এটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সানাউল্লাহ মিয়াসহ সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীরা।

No comments

Powered by Blogger.