শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মী বাড়ছে by শেখ আবদুল্লাহ

শিক্ষিত জনগোষ্ঠী থাকলেও দক্ষতার অভাবে দেশের শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মী বাড়ছে। প্রতি বছরই বিদেশি চাকরিজীবীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে দেশে বাড়ছে বেকারত্বের হার। অথচ এ শিক্ষিত বেকারদের দক্ষ করে তোলা গেলে বেকারত্ব কমার পাশাপাশি দেশের শ্রমবাজারে বিদেশিদের অংশগ্রহণ কমানো সম্ভব হতো। বাঁচত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। এজন্য দেশে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও


শিল্পোদ্যোক্তারা।বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রায় ৪৩ হাজার বিদেশি নাগরিক তাদের ওয়ার্ক পারমিট চেয়ে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে অনেকে আছেন একেবারেই নতুন, আবার অনেকে তাদের অবস্থানের মেয়াদ বাড়াতে চাচ্ছেন। যা গত বছর ছিল ৩৮ হাজার। সামগ্রিকভাবে দেশে প্রায় দেড় লাখের বেশি বিদেশি নাগরিক বৈধভাবে কাজ করছেন। শুধু দেশের পোশাক খাতে (টেক্সটাইল ও আরএমজি) প্রায় ১৯ হাজার বিদেশি জনবল কাজ করছে। অবৈধভাবেও কাজ করছে বহু শ্রমিক। ভারত, শ্রীলংকা, চীন, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, নেপাল, জাপান, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এ জনবল বাংলাদেশে এসে কাজ করছে। তারা দেশের কর্মসংস্থান সংকুচিত করার পাশাপাশি বেতন-ভাতাদি বাবদ প্রতি মাসে দেশ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি ও খনিজ, এনজিও, আইসিটি, নির্মাণ, হ্যাচারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, পাট, চামড়া ও বস্ত্রশিল্পে বিদেশি এসব কর্মী কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে না। অনেক শিক্ষার্থী প্রতি বছর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করলেও কারিগরি দক্ষতার অভাবে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রতি বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী পাস করলেও কারিগরি শিক্ষা খাতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। যদিও সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণ বেড়েছে। অন্যদিকে শিল্পের তুলনায় দেশে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রও বেশ ছোট। একটি মাত্র টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল বিষয়ে পড়ানো হয় না। অথচ দেশের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এ খাতে। একই সঙ্গে তৈরি পোশাকই দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প এবং রফতানি আয়ের প্রধান উৎস।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, দক্ষতার অভাবে দেশে কয়েক লাখ শিক্ষিত বেকার কর্মহীন সময় কাটালেও বিদেশিরা এসে দেশের কাজের বাজার দখল করছে। এজন্য শিক্ষা খাতে সিলেবাস পরিবর্তন দরকার বলে তিনি মনে করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের উচিত আগামীতে তারা কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন বা বাজার ব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সরকারকে ধারণা দেওয়া। যাতে সরকার সে অনুযায়ী দক্ষ জনবল গঠনের উদ্যোগ নিতে পারে।
জানতে চাইলে বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক সদস্য আবু রেজা খান সমকালকে বলেন, মূলত উৎপাদনশীলতার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি জনবল কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। কারণ কারখানার মালিকরা দেখে কার মাধ্যমে বেশি ও মানসম্পন্ন উৎপাদন করা যাবে। এ ছাড়া দক্ষতাও এক্ষেত্রে একটি বড় বিষয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উইভারদের চেয়ে ভারত, পাকিস্তানের উইভারদের উৎপাদনশীলতা বেশি। আবার ম্যানেজার হিসেবে শ্রীলংকানরা বেশি দক্ষ। আবার অনেক উদ্যোক্তা নতুন কারখানা স্থাপন করে কারিগরিভাবে দক্ষ লোক বিদেশ থেকে নিয়ে আসছেন। যখন ওইসব বিষয়ে দেশীয় কর্মীরা দক্ষ হয়ে যাচ্ছে তখন বিদেশি কর্মীদের ফেরত পাঠান।

No comments

Powered by Blogger.