ইম্ফলে মনমোহনের ঘোষণা-ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, টিপাইমুখ বাঁধ হবেই

ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বলেছেন, মণিপুরে বরাক নদের ওপর প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধ হবেই। প্রকল্পের জন্য এরই মধ্যে পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে পারে।গতকাল শনিবার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে এক জনসভায় মনমোহন সিং এ কথা বলেন। প্রকল্পটিকে এখনো বন বিভাগের ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। শিগগিরই সে ছাড়পত্রও দেওয়া হবে।


বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে তিনি জানিয়েছেন।টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংককে রাজি করাতে মনমোহন সিং সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বাংলাদেশকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, টিপাইমুখে ক্ষতিকর কোনো কিছু করা হবে না। এ নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ সমীক্ষার ব্যাপারেও কথা চলছে। এরই মধ্যে মনমোহন সিং এ ঘোষণা দিলেন।
জনসভায় মনমোহন সিং বলেন, 'আমি জানি, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিরতণব্যবস্থার প্রসার ও উন্নয়নে একটি প্রকল্প বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের জন্য জমা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্বব্যাংকে চাপ দিতে আমি কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বলেছি।'

বাঁধবিরোধী আন্দোলনের নেতারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার আগে স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদ নথিভুক্ত করা হয়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর সাহায্যে স্থানীয় মানুষের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
প্রায় দুই দশক ধরে টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির বিরোধিতায় সরব মণিপুরের বিজ্ঞানী আর কে রঞ্জন। গতকাল তিনি বিবিসি রেডিওকে বলেন, পরিবেশের ওপর ওই বাঁধের ঠিক কী প্রভাব পড়বে, তা বিশ্লেষণ করার জন্য পুরনো কিছু তথ্যের ওপর নির্ভর করা হয়েছে, যার অনেকাংশই ভুল। তিনি আরো বলেন, সরকারের উচিত ছিল মানুষের সঙ্গে আলোচনা করা। তাদের সম্মতি নেওয়া। কিন্তু তা করা হয়নি। প্রতিটি গণশুনানিতে নিরাপত্তাকর্মীরা স্থানীয় মানুষকে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন। পরিবেশগত ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য আয়োজিত ওই সব গণশুনানিতে সংবাদমাধ্যমেরও প্রবেশাধিকার ছিল না বলে জানান তিনি।
বরাক নদের ভাটি অঞ্চলে আসামের কাছাড় এলাকার কিছু মানুষ মনে করে, টিপাইমুখে বাঁধ হলে প্রতিবছরের বন্যা থেকে তারা রক্ষা পাবে। অবশ্য কাছাড়েরই অনেক মানুষ সেই যুক্তি মানে না। আর টিপাইমুখ গ্রামসহ বরাক নদের উজানের বাসিন্দারা শুরু থেকেই এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব।
পরিবেশবিদরা মনে করেন, বাঁধ আর সংলগ্ন জলাধার তৈরি হলে বিস্তীর্ণ এলাকার গ্রাম, পাহাড় ও প্রাণিসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে। এর সঙ্গে জীবিকা হারাবে বহু মানুষ। এ সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির কোনো হিসাবই করা হয়নি।
আর কে রঞ্জন এ প্রসঙ্গে বলেন, পরিবেশের ওপর ক্ষয়ক্ষতির সমীক্ষার সঙ্গেই সমাজজীবনে এর প্রভাব কী পড়বে, এরও বিশ্লেষণ করা উচিত ছিল। আজ পর্যন্ত সেই কাজ করা হয়নি। বড় বড় বাঁধ হলে যারা লাভবান হবে, তাদের চাপেই সরকার এ বাঁধ তৈরি করতে এগিয়ে যাচ্ছে_তিনি উল্লেখ করেন। সূত্র : পিটিআই, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.