বিধিমালা চূড়ান্তকরণে বেলা ও জাহাজভাঙা ব্যবসায়ীদের বৈঠক আজ-'সর্বসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে জাহাজভাঙা বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে' by ফারজানা লাবনী

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকাস্ অ্যাসোসিয়েশন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর বাদানুবাদ এবং চলতি মাসের ১৪ তারিখের মধ্যে জাহাজভাঙা বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা না হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকির মুখে আজ রবিবার জাহাজভাঙা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসছেন। বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াসহ বিধিমালা প্রস্তুতির সঙ্গে


সংশ্লিষ্ট শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। আয়োজিত সভা থেকে গৃহীত সুপারিশের ভিত্তিতে শিল্প মন্ত্রণালয় সপ্তাহজুড়ে একাধিক বৈঠকে মিলিত হয়ে খসড়া বিধিমালা সংযোজন-বিয়োজন করে চূড়ান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করবে। এর পর তা ৮ ডিসেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ে এবং ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এজেন্ডাভুক্ত জরুরি বিষয় হিসেবে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব বৈঠকে অনুমোদনের পর তা ১৩ ডিসেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জিয়াউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নভেম্বরের ১২ তারিখ বিধিমালা তৈরিতে তৃতীয় দফা সময় শেষ হওয়ায় শিল্প মন্ত্রণালয় আদালতে আবারও ছয় মাস সময় বাড়ানোর আবেদন জানায়। আদালত এক মাস সময় বেঁধে দিয়ে জাহাজভাঙা ব্যবসা বন্ধ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে জানানো হয়, ব্যর্থতায় সংশ্লিষ্ট শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং জাহাজভাঙা বিধিমালা প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক এ বি এম খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে জানান, ওয়েবসাইটে গত ৪ জুন জাহাজভাঙা খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করা হয়। এখানে সর্বসাধারণের মতামতে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে ১৪টি সংগঠন থেকে তাদের মতামত দিলেও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো কোনো মতামত জানায়নি! গত ১৪ নভেম্বর পরিবেশবাদী সংগঠন 'বেলা' ডাকযোগে কিছু সুপারিশমালা শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মতামত গ্রহণে মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থান নেয়। বিধিমালা চূড়ান্তকরণে শেষ বৈঠক চলা পর্যন্ত মতামত গ্রহণ করা হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
সর্বসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে জাহাজভাঙা বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, এতে ভবিষ্যতে এ শিল্পে আর অস্থিরতা তৈরি হবে না।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা থেকে জানা গেছে, বিধিমালার ওপর ২০টি সুপারিশমালা শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখানে উল্লেখ আছে, 'খসড়া বিধিমালায় কারাদণ্ডের কোনো বিধান না রেখে অমান্যকারী জাহাজভাঙা ইয়ার্ডের ক্ষেত্রে শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা জরিমানা, যা জাহাজভাঙার মতো লাভজনক একটি শিল্পের জন্য খুবই অপর্যাপ্ত। শাস্তিস্বরূপ ইয়ার্ডের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ বা ইয়ার্ডের ইজারা চুক্তি বাজেয়াপ্ত করারও বিধান খসড়াটিতে যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি।' বেলার সুপারিশমালায় জাহাজভাঙা ব্যবসা বাসেল কনভেশন অনুযায়ী পরিচালনার দাবি জানানো হয়। পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে বিধিমালায় সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই বলেও বেলার দেওয়া মতামতে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জাহাজ ওঠা-নামার বিষয়ে আপত্তি জানানো হয়। সুপারিশমালায় আরো বলা হয়, ডেডিকেটেড মেশিন এবং ম্যাগনেটিক ক্রেন ব্যবহার বিধিমালায় বাধ্যতামূলক করতে হবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকাস্ অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিধিমালায় ধার্যকৃত ক্ষতিপূরণ ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত। আবার বিধিমালায় নির্ধারিত ফি মোট এলসির ১ শতাংশ।' এভাবে অর্থ গুনে বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী জাহাজ কাটতে আসবেন না বলে জানান তিনি।
এই ব্যবসায়ী বলেন, বিধিমালায় জাহাজভাঙা ব্যবসাসম্পর্কিত দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার খোলার কথা বলা হয়েছে। এ যাবৎকাল সরকারি কোনো ওয়ান স্টপ সার্ভিস থেকে সুষ্ঠু সার্ভিস দেওয়ার রেকর্ড নেই । শিল্প মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি। আবার বিধিমালায় যে বোর্ড গঠন করা হচ্ছে, সেখানে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নূ্যনতম দুজন হলেও জাহাজভাঙা বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান ব্যবসায়ী এই নেতা।

No comments

Powered by Blogger.