নাসিক নির্বাচন : তত্ত্বাবধায়কের বার্তা by কাজী সিরাজ

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর আবার আগের কথাগুলোই ঘুরেফিরে আসছে, বারবার আসবে। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-মিনিস্টার এবং ধামাধরারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিবর্তে বর্তমান সরকারের অধীনে যেকোনো নির্বাচন যে অবাধ হবে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে। ইঙ্গিতটা এমন যে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলের আর বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়। লজ্জা-শরমহীন প্রধান


নির্বাচন কমিশনার এবং তাঁর অন্য দুই 'ঢোলক' আওয়াজ তুলেছেন যে সেনাবাহিনী ছাড়াই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ যে সম্ভব, নাসিক নির্বাচনের মাধ্যমে তা স্পষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এসব বক্তব্যকে আওয়ামী লীগ সরকার এবং তাদের অনুগতদের 'ছেলেভোলানো গল্প' বলে উড়িয়ে দিতে চান। তাঁদের মতে, এ নির্বাচনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা আরো তীব্র, আরো জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার প্রমাণ করেছে, রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের নির্বাচনী লড়াইয়ে তাদের বিশ্বাস করা যায় না। বুঝে হোক, না বুঝে হোক, অনাস্থার এই জায়গাটা তৈরি করে দিয়েছে তারা। আর কে না জানে যে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের পারস্পরিক অবিশ্বাস-অনাস্থার গর্ভেই জন্ম নিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। জাতীয় নির্বাচনের জন্যই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের একটি রায়ের দলবাজ-ব্যাখ্যা করে (উচ্চ আদালত আরো দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছিলেন) জাতীয় সংসদে ব্রুট মেজরিটির জোরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সংস্কারবাদী অংশের নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রধানমন্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য বিরোধীদলীয় নেতার উদ্দেশে বলেই চলেছেন, 'তত্ত্বাবধায়কের কথা ভুলে যান। এই সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিন।' কিন্তু নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিটা আরো জোরদার হবে বলেই ধারণা পর্যবেক্ষকদের। নারায়ণগঞ্জের ঘটনা ছিল ব্যতিক্রম। বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী মাহবুবুল আলম হানিফ, তিন সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা শামীম ওসমানকে সমর্থন করেছেন, তাঁর পক্ষে প্রচার চালিয়েছেন। অন্য পক্ষে আওয়ামী লীগ জেলা কমিটির আহ্বায়ক এস এম আকরাম (নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তিনি পদত্যাগ করেছেন) ছিলেন সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে গঠিত নাগরিক কমিটির সভাপতি। আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি সারাহ বেগম কবরী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সব সংগঠনের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কাজ করেছেন আইভীর পক্ষ হয়ে। নির্বাচনটা শেষ পর্যন্ত হয়েছে আওয়ামী লীগে-আওয়ামী লীগে। নির্বাচনের আগের দিন মধ্যরাতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেওয়ার পর একদলীয় নির্বাচনে পর্যবসিত হয় নাসিক নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়ার পরও সরকার রাজি না হওয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত সেখানে সেনা মোতায়েন হয়নি। এ থেকে আভাস পাওয়া যায় যে সেনাবাহিনীকে সরকার বিশ্বাস করে না। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সেনাবাহিনী মোতায়েন না করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখল সরকার। মূলত এই একটি কারণেই সহিংসতা, শক্তি প্রয়োগ ও ভোট কারচুপির আশঙ্কায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচন বর্জন করেন। চার. ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিএনপিসহ তাদের সমমনারা এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করছে। নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের প্রতিক্রিয়াও আমলে নেওয়ার মতো। ভোটের পর বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে ভোটাররা যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাতে দেখা গেছে, বৃদ্ধ এবং শিক্ষাবঞ্চিত বেশির ভাগ মানুষই একে জটিল বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন যে তাঁরা এটা বোঝেন না, যেভাবে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সেভাবে ভোট দিয়েছেন। কেউ কেউ এমনও বলেছেন, 'আমি যাকে ভোট দিতে চেয়েছি, ভোটটা সে পেল কি না তা তো জানতে পারিনি।' সুতরাং 'জনতার মঞ্চের' অন্যতম 'খলনায়ক' প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা এবং সরকার ও সরকারপন্থী লোকজনের মুখে ইভিএমে দ্রুত ভোট আদায়ে সাফল্যের দাবির চেয়ে ভোটারদের বক্তব্যকেই গুরুত্ব দিতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারি দলের প্রকাশ্যে সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী শামীম ওসমান বিএনপির বিরোধিতার জবাবে প্রথম দিকে বলেছিলেন, ইভিএম পদ্ধতি বেশ ভালো। এতে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। ভোটগ্রহণ শেষে ব্যবস্থাটা তাঁর পক্ষে কাজ না করায় তিনিও ইভিএম পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রার্থীবিশেষের পক্ষে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও করেছেন। অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বর্জন বা প্রত্যাখ্যান না করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে তিনিই জিতে যেতেন_এমন কথা দৃঢ়তার সঙ্গে বলা না গেলেও পর্যবেক্ষকরা এটা নিশ্চিত করে বলতে চান যে বিএনপি সরে যাওয়ার পর যেমন ফলাফলটা মানুষ আগেই জেনে গিয়েছিল, তৈমূর আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে ভোট গণনার আগ পর্যন্ত জানা যেত না, কে জিতছে বা কে জিতল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে, সরকার চেয়েছে বিরোধীদলীয় প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াক। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির ভোট কম নয়। দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে এবং সপ্তম ও নবম সংসদ নির্বাচন ছাড়া বাকি চারটি নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর আসন দুটিতে বিএনপিই জয়ী হয়। বিএনপির ভোট ছিল এক লাখ ১১ হাজার ৮৩৫টি। আওয়ামী লীগের কমিটেড ভোটাররা অন্য কোনো মার্কায় ভোট দেন না। ওই এক লাখ ১১ হাজার ৮৩৫ ভোট আওয়ামী লীগবিরোধী। এ ভোট তো সব হাওয়া হয়ে যায়নি। স্পষ্টই বোঝা যায়, দলীয় প্রার্থী না থাকায় বোধগম্য কারণেই এর বেশির ভাগ ভোটই গেছে আইভীর বাঙ্।ে ভোটের এই হিসাব সরকারি মহলেও ছিল। তাই সরকার চেয়েছে বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করুক। কোনো কোনো পর্যবেক্ষকের মতে, এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার চারদলীয় জোট সরকারের বিদায়ের পর অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নবম সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল, সেই নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে দূরে রাখার 'হাওয়া ভবন কৌশল'ই প্রয়োগ করেছে। আওয়ামী লীগ সেই নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য আগের জোটকে সম্প্রসারিত করে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মহাজোট গঠন করেছিল। এর আগে রহস্যময় এরশাদ চারদলীয় জোটভুক্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারে তারেক রহমান, বাবর প্রমুখ একটা কাঁচা খেলাও খেলেছিলেন এরশাদকে নিয়ে। এরশাদ মহাজোটে যাওয়ায় [অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) অলি আহমদরাও গিয়েছিলেন] চারদলীয় জোট তথা হাওয়া ভবনের ভাগ্য অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায়। তখনই ঘোঁট পাকানো হয় এরশাদের প্রার্থিতা নিয়ে। হাওয়া ভবনের রাজনৈতিক 'বালক'রাও এটা জানত, এরশাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন করবে না, আর জাতীয় পার্টি নির্বাচন না করলে আওয়ামী লীগও করবে না। তখন ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া সহজ হবে। এরশাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সব আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেও শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। একই কৌশল কাজে লেগেছে এটা কোনো জাতীয় নির্বাচন না হওয়ার কারণে। জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিয়োগের পরিপত্র জারির পরও তা না করলে বিষয়টা এত 'ইজি গোয়িং' হতো না। আগেই উল্লেখ করেছি যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে ফলাফল আগে থেকে বলা যেত না ঠিক, তবে এটা বলা যেত যে লড়াই হতো বিএনপি-আওয়ামী লীগে। নারায়ণগঞ্জ একসময় আওয়ামী লীগের একটা শক্ত ঘাঁটি ছিল, যেমন ছিল প্রায় সারা বাংলাদেশ। পরিস্থিতি এখন আর কোথাও স্থিতাবস্থায় নেই। নারায়ণগঞ্জেও নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায়ে অভিযুক্ত বর্তমান সরকার তার নির্বাচনকালীন জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনি। ফলে ভোট আরো কমার কথা এবং অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় বিএনপির ভোট বাড়ার কথা। বিরোধী দল সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং দেশ চালাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে অভিযোগ করে পদত্যাগ ও মধ্যবর্তী নির্বাচন দাবি করছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের সাম্প্রতিক রোডমার্চ ও জনসভাগুলোতে বিপুল জনসমাগম সরকারের মনে কিছুটা ভীতির সঞ্চার করে থাকতে পারে। এই সময়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হেরে গেলে বিরোধী দলের মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি যৌক্তিকতা খুঁজে পায় এবং শাসক দল ও জোটের নেতা-কর্মীরা মনোবল হারিয়ে ফেলে। অনেকে সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভায় শেখ রেহানার ভাগের মন্ত্রী বলে মনে করেন। শেখ রেহানার সবুজ সংকেত না পেলে যতই অভিযোগ আসুক না কেন, যোগাযোগমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রীও মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার বা অপসারণ করতে পারবেন না বলে জনমনে একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে। কারো কারো ধারণা, সংসদে তাঁকে বিতর্কিত করার মাধ্যমে শেখ রেহানাকে বিব্রত করে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনেরও একটি প্রয়াস ছিল 'নিজেদের' মধ্যকার বিতর্ক। পরদিনই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বললেন, সংসদ কার্যকর করার জন্য বিরোধী দলের দরকার নেই। সরকারি দলের সদস্যরাই সংসদকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। নাসিক নির্বাচন নিয়েও সরকার একই নাটক মঞ্চস্থ করেছে বলে অভিমত পর্যবেক্ষকদের। ১ নভেম্বর 'দুই ভাইবোন'-বিজয়ী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান একসঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এ ব্যাপারে নতুন করে ব্যাখ্যা করার কিছু আছে বলে মনে হয় না। ক্ষমতাসীনরা নারায়ণগঞ্জের মেয়র পদ দখলে রাখতে পেরে আপাতত নিজেদের লাভবান ভাবতে পারে, কিন্তু এই লাভের গুড় অদূর ভবিষ্যতে যদি অন্য কারো পেটে যায় তাতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারকে ডিফেনসিভ অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে; তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা জোরালো করেছে। বর্তমান সরকারের ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা যায় না, তা প্রমাণের সুযোগ সরকারই করে দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার দেশের আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। ২৮ অক্টোবর ২০১১ সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা বলেছেন, সরকার সেনা মোতায়েন না করায় নির্বাচনে কোনো ধরনের গোলযোগ হলে নির্বাচন কমিশন কোনো দায় নেবে না। তিনি বলেন, 'আমরা সময়মতো সেনা মোতায়েনের জন্য সরকারকে চিঠি দিয়েছি। অথচ এ বিষয়ে সরকার কমিশনকে লিখিত বা মৌখিকভাবে কিছুই জানায়নি। সেনা মোতায়েন না করার বিষয়টি আমাদের জানানো উচিত ছিল। এ বিষয়ে আমরা সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাইব। কারণ সাংবিধানিকভাবে সরকার সেনা মোতায়েন করতে বাধ্য।' তিনি আরো বলেন, 'আজ শুক্রবার (২৮.১০.১১) সকালে নারায়ণগঞ্জে সেনাবাহিনী যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী যায়নি। এ জন্য আমরা তাদের লিখিত চিঠি দিয়েছিলাম। এখন আমরা ধরে নিচ্ছি, সেনাবাহিনী মোতায়েন হচ্ছে না। কারণ সরকার সেনাবাহিনী মোতায়েনের কোনো নির্দেশ দেয়নি।' বলা হতে পারে, এই সরকারের অধীনে সেনাবাহিনী মোতায়েন ছাড়াই তো শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস ততটা নেই, যতটা আছে সেনাবাহিনীর ওপর। এখানেই অপরিহার্যতা সেনা মোতায়েনের। তা ছাড়া সেনা মোতায়েন ছাড়া দলীয় দুই প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনেই নারায়ণগঞ্জে চার লাখ ভোটারের জন্য র‌্যাবসহ নিয়োগ করা হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৯ হাজার ৪০০ সদস্য। এর মধ্যে র‌্যাব ছিল এক হাজার ৪০০ এবং পুলিশ, আনসার, কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য মিলে বাকি আট হাজার। একদলীয় নির্বাচনের জন্যই এ ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরো বেশি শক্তি নিয়োগের চিন্তা বাদ দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমপরিমাণ সদস্যও যদি প্রতি নির্বাচনী এলাকায় মোতায়েন করতে হয় তাহলে ৩০০ আসনে প্রয়োজন হবে ২৮ লাখ ২০ হাজার সদস্য। এই পরিমাণ সদস্য মোতায়েনের শক্তি কি বাংলাদেশের আছে? ৩০০ আসনে প্রয়োজন অনুযায়ী সেনা মোতায়েনের সামর্থ্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আছে এবং এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দৃষ্টান্তও আমাদের দেশে আছে। সেনা মোতায়েন না করে প্রতি নির্বাচনী এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করার সামর্থ্য আমাদের আছে, তা দিয়ে নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে কল্পনাই করা যায় না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও আইনি সহযোগিতা প্রদান করে জাতিকে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে পারে।
kazi.shiraz@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.