খুলনা অভিমুখে আজ বিএনপির রোডমার্চ

বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ শুরু হচ্ছে আজ শনিবার। দুই দিনব্যাপী রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোডমার্চসহ জনসভা ও পথসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার নেতাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে উপকমিটি।


আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে গাড়িবহর নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেবেন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে দলের সিনিয়র নেতারা ছাড়াও জোটের শরিক ও সমমনা দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা থাকবেন। গুলশান থেকে বনানী, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর বাইপাস হয়ে কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইল, যমুনা সেতু পার হয়ে পাবনা, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, ঝিনাইদহ, যশোর হয়ে খালেদার গাড়িবহর যাবে খুলনা শহরে।
রোডমার্চের প্রথম দিন আজ পাবনার দাসুরিয়া মোড়ে পথসভা এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। কুষ্টিয়া থেকে যশোর যাওয়ার পথে ঝিনাইদহে পথসভা করবেন তিনি। রাত কাটাবেন যশোর সার্কিট হাউসে। দ্বিতীয় দিন রোডমার্চ শুরুর প্রথমে যশোরে পথসভা এবং পরে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এর আগে খুলনায় পেঁৗছে তিনি বাগেরহাটে হযরত খানজাহান আলীর (র.) মাজার জিয়ারত করবেন। রবিবার রাতেই তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে জানা গেছে।
খুলনায় জামায়াত কার্যালয়ে তল্লাশির নিন্দা : যশোরে রোডমার্চের সমর্থনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিছিলে হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে ফখরুল বলেন, সরকার রোডমার্চ বানচাল করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই নিজেদের পালিত গুণ্ডা ও সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দলীয় কার্যালয়সহ মিছিল সমাবেশে হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, অতীতে কোনো স্বৈরশাসকই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করে টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান সরকারের পক্ষেও তা কোনো দিন সম্ভব হবে না।
মানুষের ঢল নামবে_ফখরুলের আশা : এদিকে বিএনপির রোডমার্চে অংশ নেওয়া বিপুলসংখ্যক গাড়ি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, প্রধানমন্ত্রী রোডমার্চের গাড়ির তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আগেও এ ধরনের কথা বলেছেন। যাঁরা রোডমার্চে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা নিজেদের গাড়ি নিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে থেকে শনিবার সকাল ১০টায় রোডমার্চ শুরু হবে। আগের দুটি রোডমার্চে মানুষের ঢল নেমেছিল, খুলনার রোডমার্চেও মানুষের ঢল নামবে।
সরকার টালমাটাল হয়ে পড়েছে : রোডমার্চে মানুষের ঢল দেখে সরকার টালমাটাল হয়ে পড়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ, পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে এই রোডমার্চ বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, কুয়েটে রোডমার্চের সমর্থনে মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। এতে ছাত্রদলের বারোজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। রিজভী বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, রোডমার্চ ব্যহত করার জন্য বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, ভেড়ামারায় কয়েক দিন ধরে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। প্রচারপত্র বিলি ও পোস্টার লাগাতে গেলে শারীরিকভাবে আক্রমণ করছে। গতকাল পাবনার দাসুরিয়ায় রোডমার্চের সমর্থনে পথসভার সময় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।
রোডমার্চের অগ্রবর্তী টিম : খুলনার রোডমার্চ সফল করতে দুদিন আগেই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যশোরে পেঁৗছেছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন রোডমার্চ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু এমপিসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। রোডমার্চ সফল করতে খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও বৈঠক করেন তাঁরা। যশোরের সব আবাসিক হোটেলের সিট বুক করে রেখেছে বিএনপি।
এদিকে যশোর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রোডমার্চ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে যশোর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন নজরুল ইসলাম খান ও তরিকুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তরিকুল ইসলাম বলেন, দেশের কোটি কোটি কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র মানুষকে বাঁচাতে, শেয়ারবাজারে আওয়ামী দুষকৃতকারীদের লুণ্ঠনের শিকার ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে রক্ষা করতে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে খালেদা জিয়া রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
খুলনা অফিস জানায়, বিভাগীয় রোডমার্চ ও বিরোধীদলীয় নেতার জনসভা সফল করতে পুরোপুরি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে মহানগরী ও এর চারপাশে বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। নগরীর প্রতিটি প্রবেশদ্বারে টানানো হয়েছে বর্ণিল ব্যানার। বিভিন্ন মহাসড়ক এবং সড়কদ্বীপে শোভা পাচ্ছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি-সংবলিত পোস্টার-ফেস্টুন। মহানগরীসহ বিভিন্ন জেলার মহাসড়কে চার শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। র‌্যাব সদস্যরা নগরীতে টহল দেবেন।
মাগুরা প্রতিনিধি জানান, মাগুরায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাত্রদল আয়োজিত একটি মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটায় ছাত্রদলের ১০ কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার সময় আটক করা হয়েছে। আটক কর্মীরা হলেন আল-আমিন, শান্ত, সাইদুল, খায়রুল ও রাসেল।

No comments

Powered by Blogger.