জমজমাট তথ্যপ্রযুক্তি মেলা

ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা' স্লোগানে গত সোমবার থেকে শুরু হয় বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি আয়োজিত তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী 'বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড'। তারুণ্যের উন্মাদনা আর নতুন নতুন প্রযুক্তির সম্ভারে ঠাঁসা প্রদর্শনী শেষ হয় গতকাল। লিখেছেন তুহিন মাহমুদসাধারণের মধ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলা ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে ধারাবাহিকভাবে কম্পিউটার মেলা আইসিটি ওয়ার্ল্ডের আয়োজন করে আসছে বিসিএস।


চতুর্থবারের মতো আয়োজিত মেলা শুরু থেকেই ছিল জমজমাট। মেলা উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র সেজেছিল নতুন সাজে। চারদিকে ব্যানার, ফেস্টুন, বেলুনে সজ্জিত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। মেলার আহ্বায়ক কাজী আশরাফুল আলম জানান, প্রদর্শনীতে ৫০টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুট স্থানজুড়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে ছিল ৭০টি স্টল এবং ৩০টি প্যাভিলিয়ন। প্রদর্শনী প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের জন্য ফুড কোর্টের ব্যবস্থাও ছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। পরদিন থেকে তা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে।

নানা আয়োজন : এবারই প্রথম কোনো প্রদর্শনীতে মেলা প্রাঙ্গণের অভ্যন্তরে উৎসবমুখর ইভেন্ট কর্নারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রদর্শনী চলাকালে প্রতিদিন তিনটি সূচিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজনে ভরা থাকে কর্নারটি। আয়োজিত হয় সেলিব্রেটি শো, প্রোডাক্ট শো, কুইজ প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষ অবদানের জন্য গুণীজনদের সংবর্ধনাও দেওয়া হয়। সেলিব্রেটি শোতে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সঙ্গীত, নৃত্য, নাট্যসহ বিভিন্ন মাধ্যমের সেলিব্রেটি ও সেলিব্রেটি দম্পতির ছিল সরব উপস্থিতি । নিজেদের জীবনের মজার অভিজ্ঞতার কথা তারা শোনান দর্শককে। সেই সঙ্গে দর্শকও জনপ্রিয় এ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন। এসব ছাড়াও ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, ফ্রি ইন্টারনেট ও গেমিং, র‌্যাফল ড্র ইত্যাদি আয়োজন।

যত সেমিনার : তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে পাঁচটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিসিএসের আয়োজনে গত মঙ্গলবার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আয়োজনে 'বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মাল্টিমিডিয়া টেকনোলজি ও ক্রিয়েটিভ আর্টসের সম্ভাবনা' 'ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং :সমস্যা ও সম্ভাবনা', বুধবার 'বাংলাদেশের সফটওয়্যার প্যাটেন্টের ক্ষেত্রে ট্রিপস এগ্রিমেন্টের প্রভাব' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেমিনারে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।

ছাড় ও উপহার :মেলা উপলক্ষে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যেন ছাড় ও উপহার ঘোষণার প্রতিযোগিতায় নামে। এর সুফল ভোগ করেন ক্রেতারা। প্রযুক্তি পণ্য কেনার সঙ্গে মিলেছে বিভিন্ন পুরস্কার ও উপহার। বিক্রেতারা জানান, প্রচলিত বাজারের চেয়ে মেলায় দাম কিছুটা কম এবং নগদ উপহার থাকায় আশানুরূপ বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ডেল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপগুলোতে এক থেকে দুই হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি এ ব্র্যান্ড নিয়ে এসেছে নতুন মডেলের বেশ কয়েকটি প্রিন্টার। মেলার স্টলে বিভিন্ন নেটবুক ও ল্যাপটপ প্রদর্শন করছে এইচপি। এ স্টলে প্রতিটি নেটবুক ও নোটবুকে অন্তত এক হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়। এর সঙ্গে গিফট ভাউচারও দেওয়া হয়। এখানে রয়েছে নিশ্চিত পুরস্কার। আসুসের নেটবুক ও নোটবুকেও দেওয়া হয় বিশেষ ছাড়। আসুসের বিক্রেতারা জানান, আসুসের নেটবুক ও নোটবুক কিনলে একটি টি-শার্ট ও পান্ডা অ্যান্টিভাইরাস একদম ফ্রি দেওয়া হয়। রিশিত কম্পিউটারের স্টলে প্রতিটি সনি ভায়ো ল্যাপটপের সঙ্গে দেওয়া হয় একটি রঙিন প্রিন্টার। এ ছাড়া বিভিন্ন ল্যাপটপের সঙ্গে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ছাড় দেওয়া হয়। এ স্টলে গিফট হিসেবে টি-শার্ট, মাউস বা ল্যাপটপ ক্লিনার দেওয়া হয়। ফ্লোরা লিমিটেডের স্টলে এইচপি, ডেল ও ফ্লোরা পিসি মিলছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা কমে। স্যামসাং ব্র্যান্ডের নেটবুক ও নোটবুক পাওয়া যায় স্যামসাংয়ের স্টলে। এখানে বিভিন্ন নেটবুক ও নোটবুকে নগদ মূল্যছাড়ের পাশাপাশি কুইক হিল অ্যান্টিভাইরাস ফ্রি দেওয়া হয়।

বিনামূল্যের সেবা :মেলায় বাংলালায়নের সৌজন্যে চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট ফ্রি ব্যবহারের সুযোগ ছিল দর্শনার্থীর জন্য। এর পাশাপাশি অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং, আইপি টিভি, অনলাইন রেডিও ব্যবহারের সুযোগ। শিশুদের জন্য ছিল মজাদার ভিডিও গেম খেলার সুযোগ। এ জন্য পৃথক গেমিং জোনের ব্যবস্থা রাখা হয় প্রদর্শনীতে। এতে শিশুসহ তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। ফলে অনেকেই অপেক্ষায় থেকে পরপর এ গেম খেলেছিল। বিসিসি গেমিং কমব্যাটে অংশগ্রহণ করা আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী অঞ্জন চন্দ্র দেব তুষার বলেন, 'সত্যিই মজা লেগেছে মেলায় এসে গেমিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে। এতে বিশেষ করে আমাদের মতো তরুণদের আগ্রহ বেড়েছে।'

প্রবেশ টিকিটে পুরস্কার : প্রদর্শনীতে প্রবেশমূল্য ছিল ২০ টাকা। তবে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র প্রদর্শনসাপেক্ষে বিনামূল্যে প্রদর্শনীতে প্রবেশাধিকার পায়। প্রবেশ টিকিটের ১০ শতাংশ টাকা বিসিএসের কল্যাণ তহবিলে জমা করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এ প্রবেশ টিকেটের ওপর র‌্যাফেল ড্রর আয়োজন করা হয়। এতে ল্যাপটপ, স্মার্ট ফোন ইত্যাদিসহ বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দেশের বরেণ্য তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের উপস্থিতিতে এ ড্র অনুষ্ঠিত হয়।

মেলায় সম্পৃক্ত যারা : প্রদর্শনীর প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে ছিল বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে ছিল তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড হিটাচি ও মাইক্রোসফট এবং তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য আমদানিকারক ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউসিসি। সিলভার স্পন্সর হিসেবে ছিল তথ্যপ্রযুক্তির আরও দুটি বিখ্যাত ব্র্যান্ড ডেল প্রিন্টার ও মারকারি এবং দেশি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইকারাস ইনফোটেক লিমিটেড। প্রদর্শনীর ইভেন্ট স্পন্সর করেছে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের বিখ্যাত ব্র্যান্ড কাসপারস্কি। এ ছাড়া সমাপনী অনুষ্ঠানের স্পন্সর ইনজেন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, টিকিট স্পন্সর টেকভ্যালি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, টিকিট কাউন্টার স্পন্সর কণিকা মিনোলটা, ভলান্টিয়ার ড্রেস স্পন্সর ডেল প্রিন্টার, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার স্পন্সর গ্রিন পাওয়ার ইলেট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল এটিএন বাংলা, রেডিও টুডে ও সমকাল।

তারুণ্যের উচ্ছ্বাস: পাঁচ দিনব্যাপী এ মেলার প্রতি প্রথম দিন থেকেই সবার আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। বহনযোগ্য কম্পিউটারের প্রতি দর্শকের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে মেলায় ল্যাপটপ নিয়ে তারুণ্যের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে দর্শনার্থীর আনাগোনায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। এতে আয়োজক, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীর সবাই মুগ্ধ। মেলায় পণ্য বিকিকিনি সম্পর্কে টেকভ্যালি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, পণ্য বিক্রিতে ছাড় ও উপহার দেওয়ায় প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিক্রিও ভালো হয়েছে। মেলায় ল্যাপটপ কিনতে আসা রাজধানীর কল্যাণপুরের ব্যবসায়ী আসলাম শেখ বলেন, 'ছেলের জন্য ল্যাপটপ কিনতে মেলায় আসা। মেলায় কিছুটা কম দামে এবং অনেক ল্যাপটপ থাকায় বেছে বেছে কিনতে সুবিধা হয়।'

No comments

Powered by Blogger.