অর্ধশতবর্ষী এক সরকারি স্কুলের বঞ্চনার কথা... by রাশেদ আহমদ খান,

বিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলা সদর থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরের স্কুলটি নামেই সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষকরা স্কুলে উপস্থিত থাকেন প্রতিদিন এক থেকে দুই ঘণ্টা। তাও সপ্তাহে দু-তিন দিন তাঁরা স্কুলেই আসেন না। স্কুলে আসেন মনগড়া সময়ে। ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতিও অতি নগণ্য।অর্ধশত বছরেরও বেশি পুরনো কামালপুর বিদ্যালয়ের বঞ্চনার কাহিনীর এটি গেল একটি দিক। আরেকটি বড় সমস্যা


হলো বন্যা। বন্যার সময় চারদিক থই থই করা পানিতে বিদ্যালয়টি যেন জনপ্রাণীশূন্য এক বিরান পোড়োবাড়িতে পরিণত হয়। ভেঙে পড়া যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষকরা দীর্ঘ কয়েক মাস বিদ্যালয়মুখো হন না। স্বভাবতই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পা পড়ে না কোনো শিক্ষার্থীরও।
বোরো মৌসুমে হাওর অঞ্চলে থাকে আলাদা একটা কর্মব্যস্ততা। এ সময়ে শিক্ষকরা নিজেদের সাংসারিক কাজে অতিমাত্রায় ব্যস্ত সময় কাটান। কেবল সপ্তাহে একবার গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আসেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, স্কুলটি কেবলই নামমাত্র। কোনো কার্যকারিতা নেই। উল্লেখযোগ্য ছাত্রছাত্রী নেই, শিক্ষকদেরও উপস্থিতি নেই।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে কামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পর্কে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। হাওর অঞ্চলে অবস্থিত কামালপুর সরকারি বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালে। এত বছরের পুরনো একটি সরকারি স্কুলে আজও মাত্র দুজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। খাতাপত্রে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৬৪১ জন। গত সপ্তাহের মঙ্গলবারে দুপুর আড়াইটায় গিয়ে স্কুলটি তালাবদ্ধ দেখা গেছে। স্কুলের বারান্দাটি হয়ে আছে গরু-ছাগলের নিত্য বিচরণক্ষেত্র। স্কুলসংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা নজির উদ্দিন জানালেন এ অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার নানামাত্রিক প্রতিবন্ধকতার কথা। জানালেন শিক্ষকদের উদাসীনতার কথাও।
অন্য কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকার অজুহাতে প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। একজন মাত্র সহকারী শিক্ষক আশিকুর রহমানকে দিয়েই পাঠদান চালাতে হয়। তাও সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন স্কুলে কোনো শিক্ষকের পা পড়ে না।
স্থানীয় অভিভাবক সুলতান আলী জানান, এটি এলাকার একমাত্র স্কুল। দীর্ঘদিন থেকে এখানে শিক্ষার পরিবেশ নেই। শিক্ষার অভাবে এলাকায় বেড়েছে চুরি-ডাকাতি। গ্রাম্য রাজনীতিতে জড়িয়ে অনেকেই মামলা-মোকদ্দমায় নিঃস্ব হচ্ছেন। ছেলেরা জুয়া খেলে। তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই। প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম স্কুলে অনুপস্থিতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষ ও আসবাবপত্রের অভাবে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। গত বর্ষায় নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ রয়েছে। ফলে শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্কুল কমিটির সভাপতি লাল মিয়া জানান, এলাকার অভিভাবকরাও সচেতন নন। ফলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। উপরন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় শিক্ষকরাও এখানে চাকরি করতে চান না। আর যাঁরা আছেন তাঁরাও নিয়মিত স্কুলে আসেন না।
 

No comments

Powered by Blogger.