সিনেমার কাহিনীকেও হার মানানো মনিকা

কোনো দুর্ঘটনায় স্মৃতিশক্তি হারিয়ে বসেছেন নায়ক বা নায়িকা। আরেকটি দুর্ঘটনায় আবারও ফিরে পেয়েছেন পুরনো সব স্মৃতি। কত সিনেমাই না হয়েছে এ ধরনের ঘটনা নিয়ে। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হওয়ার পর আরেক দুর্ঘটনায় পা ফিরে পাওয়া_রূপকথায়ও এমন গল্প কেউ শুনেছেন কি? অসম্ভব বা অবাস্তব সেই ঘটনাই ঘটল নেদারল্যান্ডসের সাইক্লিস্ট মনিকা ফন ডার ভোর্স্টের জীবনে!
১৩ বছর বয়সে গোড়ালিতে অস্ত্রোপচারের পর একটি পায়ে অনুভূতি কম হতো মনিকার, ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম 'আংশিক পঙ্গু হওয়া'। নিয়তিকে মেনে নিলেও হাল ছাড়েননি। বেঁচে থাকার প্রেরণা হিসেবে বেছে নেন সাইক্লিংকে। ২০০৮ সালে ২৭ বছর বয়সী এই তরুণীর জীবনে ঘটে আরেকটি ট্র্যাজেডি। গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে এবার পঙ্গু হয়ে যান পুরোপুরি। মুষড়ে পড়েননি তবুুও। নাম লেখান নেদারল্যান্ডসের প্যারা-অলিম্পিক দলে। সফলও হন বেইজিংয়ে। টিম ট্রায়াল এবং রোড রেসে রৌপ্য এনে দেন দেশকে।
লন্ডন অলিম্পিক কড়া নাড়ছে দরজায়। স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে শুরু করেছিলেন জোর প্রস্তুতি। কিন্তু গত বছর অলৌকিক আরেকটি দুর্ঘটনা ঘটে তাঁর জীবনে। অন্য এক সাইক্লিস্টের সঙ্গে সংঘর্ষের পর যেতে হয় হাসপাতালে। তবে সেখানে চিকিৎসার এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই মনিকা বুঝতে পারেন, পা নাড়াতে পারছেন তিনি। একটু সাহস করে বিছানা থেকে এক পা ফেলেন মেঝেতে। চেষ্টা করেন হাঁটার। বিস্ময়করভাবে কয়েক কদম হেঁটেও ফেলেন তিনি, যা দেখে অবাক ডাক্তাররাও। কিছুদিন পর আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটা-চলা করতে শুরু করেন মনিকা।
হঠাৎ করে স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় মনিকা পড়েছেন মধুর বিড়ম্বনায়। লন্ডনের প্যারা-অলিম্পিকে যে অংশ নেওয়া হচ্ছে না আর। তাতে কি? আরো অনুশীলন করে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান ২০১৬-অলিম্পিকে, স্বাভাবিক অ্যাথলেটদের সঙ্গে। এরই প্রক্রিয়ায় হুইল চেয়ার ছেড়ে নাম লিখিয়েছেন ডাচ পেশাদার সাইক্লিং দলে। গত সপ্তাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ডাচ রাবোব্যাংক মহিলা সাইক্লিং দলের সঙ্গে। এই দলে খেলেন বিশ্বসেরা অনেক সাইক্লিস্ট। দলের মুখপাত্র লুক এইসেঙ্গা রীতিমতো বিস্মিত মনিকাকে দেখে, 'এক কথায় অলৌকিক ঘটনা। স্বপ্নেও এ ধরনের কিছু কল্পনা করে না কেউ। একটি দুর্ঘটনায় পঙ্গু পা ভালো হয়ে যাওয়ার কথা শুনেছেন কখনো? মনিকার দৃঢ়তাও মুগ্ধ করার মতো।'
স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাওয়া মনিকার বিস্ময়ের ঘোরও যেন কাটছে না, 'কখনো ভাবিনি, হাঁটতে পারব আমি। জীবন আসলে খেলা করে মানুষের সঙ্গে। এখন কেমন যেন স্বপ্নের ঘোরের মতো লাগে সব কিছু। আশা করছি, স্বাভাবিক অ্যাথলেটদের সঙ্গেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারব আমি।' ২০১৬-অলিম্পিকে কি সত্যিই খেলা সম্ভব মনিকার পক্ষে? তাঁর নতুন দলের কোচ জেরন বিলিলেভনস অবশ্য আশাবাদী, 'কোনো কিছুই অসম্ভব নয় খেলার জগতে। দলের অন্য খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হচ্ছে ওকে দেখে, এটাও অনেক বড় ব্যাপার।' ওয়েবসাইট

No comments

Powered by Blogger.