চার বছরের শিশু খুন-পাষণ্ডকেও হার মানায়

কেমন পাষণ্ডের কাজ! এমন কাজও করতে পারে কোনো মানুষ! চাঁদের হাসি ফোটে যে শিশুর মুখে, সেই শিশুটিকে হত্যা করা হলো মেঝেতে আছাড় মেরে! কী অপরাধ ছিল শিশু সুবর্ণা মৃধার? অবোধ এই শিশুটির বড় বোন, সেও আরেক শিশু। তাকে পেতে চেয়েছিল তারই খালাতো ভাই। না পেয়ে অবোধ শিশুটির ওপর প্রতিশোধ নিল বিকৃত মস্তিষ্কের যুবক মানিক। দুর্বিষহ সেই সংবাদ। ঘটনা ঘটেছে ঢাকার বাড্ডায়। ঘটনার আগে শিশুর মা কলাও খাইয়েছেন


তাঁর বোনের ছেলেকে। সেই ছেলেই কি না ছোবল মেরেছে আড়াই বছর বয়সের টুকটুকে এই শিশুটিকে। ঠিক যেন দুধ-কলা খাইয়ে কালসাপ পোষার মতো। এই কালসাপ নিজের খালাতো বোনকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। রাজি হয়নি খালাতো বোন। ক্ষান্ত হয়নি সে যুবক। স্কুলে যাওয়ার পথে খালাতো বোনকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। খালা বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বোনের ছেলে মানিককে বাসা থেকে বের করে দেয়। বাসা থেকে বের করে দেওয়ার পর সে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে পড়ে আরো বেশি। অসৎ উদ্দেশ্যের সঙ্গে ১২ বছরের কন্যাশিশুটির একমত না হওয়ার পরিণতি যে এত ভয়াবহ হবে, তা কি সে কখনো ভাবতে পেরেছিল?
প্রশ্ন হচ্ছে, মানিক নামের ওই ছেলেটি এ ধরনের পাশবিক কাজে লিপ্ত হলো কেন? মানিক আমাদের অস্থিতিশীল সামাজিক অবস্থার প্রতীক। মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হতে হতে আশঙ্কাজনক অবস্থার দিকে ধাবিত হলেই এমন অবস্থা ঘটতে পারে। এর জন্য আমাদের যন্ত্রসভ্যতাও কম দায়ী নয়। প্রযুক্তির উন্নয়নকে আমরা অনেক সময়ই ইতিবাচক কাজে না লাগিয়ে নিজেদের জীবন পর্যন্ত ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দিই। আজকের যুবসমাজের মধ্যে যে বিকৃত মানসিকতা তৈরি হয় সে ক্ষেত্রে আমাদের এখানে অপসাংস্কৃতিক আগ্রাসনও অনেকাংশে দায়ী। বিশেষ করে সৃষ্টিশীল সাংস্কৃতিক আবহকে বদলে দিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়া বিনোদন মাধ্যম যেভাবে আমাদের সমাজে আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছে, তারই পরিণতি হচ্ছে মানিকের মতো কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ। এই পরিস্থিতি থেকে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। সুস্থ সামাজিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে হবে। আর সবার আগে এর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ব্যক্তি ও পরিবার থেকে উদ্যোগ নেওয়া। নীতিবোধ জাগ্রত হয় সে রকম পরিবেশ তৈরি করতে না পারলে সুবর্ণা মৃধার মতো আরো মৃত্যু আমাদের অবলোকন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.