তাহরির স্কয়ারে হাজারো কণ্ঠে স্লোগান_ক্ষমতা ছাড়ো-নির্বাচন আয়োজনে অটল সামরিক পরিষদ

সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার মিসরীয়রা বড় ধরনের বিক্ষোভ করেছে। দিনটিকে ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদের (এসসিএএফ) জন্য 'শেষ সুযোগ' বলে উল্লেখ করেছে আন্দোলনকারীরা। তবে ক্ষমতা না ছাড়ার ব্যাপারে অটল সামরিক শাসকরা গতকাল নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছেন। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের আমলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা কামাল গানজৌরিকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছেন তাঁরা।


তাঁকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বেসামরিক কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য মিসরকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সামরিক পরিষদের পদত্যাগের দাবিতে গত শনিবার থেকে কায়রোর তাহরির স্কয়ারে নতুন করে আন্দোলন শুরু করে মিসরীয়রা। অবিলম্বে বেসামরিক শাসকদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে তারা। আগামী সোমবার পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগেই দাবি আদায়ের পক্ষে তারা। মুবারকের পতনের পর এটাই সবচেয়ে বড় আন্দোলন। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪১ জন নিহত এবং তিন হাজারেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। তবে আগামী বছরের মাঝামাঝিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার অঙ্গীকার করেছে সামরিক পরিষদ।
ব্যাপক গণ-আন্দোলনের চাপে মিসরের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী এসাম শরাফের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করে। 'জাতীয় সংকট উত্তরণমূলক সরকার' গঠনের জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার আহ্বান জানায় তারা। অবশেষে সামরিক পরিষদ গতকাল নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কামাল গানজৌরির নাম ঘোষণা করে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এ খবর জানায়। গানজৌরিও নতুন পদ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে বিক্ষোভকারীরা তাঁর নিয়োগের সমালোচনা করেছে। গানজৌরি ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত মুবারক সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
গতকাল হাজার হাজার মানুষ তাহরির স্কয়ারেই জুমার নামাজ পড়ে। সুহির নাদিম নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'দ্বিতীয়বারের মতো মুবারক আমলের প্রহরীদের ওপর নির্ভর করতে যাচ্ছি আমরা। ৮০ বছর পার হয়ে যাওয়া লোকদের পরিবর্তে কেন তরুণদের সুযোগ দিচ্ছি না আমরা?' হোসসাম আমের নামের আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, 'গানজৌরি এই আন্দোলনের জন্য বড় একটি সমস্যা। আমাদের তাহরির স্কয়ারেই থাকতে হবে।'
মুবারক সরকারে দায়িত্ব পালন করলেও গানজৌরি মিসরীয়দের একটি বড় অংশের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর প্রতিনিধিত্ব করার কারণে তিনি 'গরিবের মন্ত্রী' হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
গতকালের দিনটিকে বিক্ষোভকারীরা সামরিক শাসকদের জন্য শেষ সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করে। ক্ষমতা না ছাড়লে লাখ লাখ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আরো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে তারা। তবে ব্যাপক আন্দোলন-বিক্ষোভের পরও আগামী সোমবার পার্লামেন্ট নির্বাচনের ব্যাপারে অটল আছেন ক্ষমতাসীন শাসকরা। প্রধান রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডও নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মূলত এ কারণেই তারা তাহরির স্কয়ারের সাম্প্রতিক আন্দোলনের বিরোধিতা করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মুসলিম ব্রাদারহুড গত বৃহস্পতিবার জানায়, তাহরির স্কয়ারে তাদের যোগদান অস্থিতিশীলতাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা। তবে বিক্ষোভের সমর্থনে সোশ্যাল ডেমোক্রেট নামের একটি দল নির্বাচন বর্জন করতে পারে বলে ধারণা করছে মিসরের সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো।
বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে এক ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। দলত্যাগী সেনা কর্মকর্তা ওমর মাতওয়ালি গত বৃহস্পতিবার জানান, বিক্ষোভ সমর্থনকারী সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে। কায়রোর সর্বোচ্চ ইমাম শেখ আহমেদ আল-তায়েবও গতকাল তাহরির স্কয়ারের বিক্ষোভে সমর্থন জানিয়েছেন। সরকারবিরোধী তুমুল বিক্ষোভের মধ্যেই গতকাল কয়েক হাজার মানুষ সামরিক পরিষদের সমর্থনে মিছিল করেছে। তাহরির স্কয়ার থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আবাসিয়া এলাকায় সমবেত হয় তারা। সামরিক বাহিনীর সমর্থনে স্লোগান দেয় তারা। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.