নিজের টাকায় আসিফের প্রস্তুতি by মাহবুব সরকার

খাবার খরচ পাঁচ হাজার, অনুশীলনে ব্যবহৃত গুলির পেছনে ব্যয় দশ হাজার টাকা। সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মাস শেষে খরচের পরিমাণ ১৮ হাজার টাকা। উপার্জিত অর্থ ব্যয় করে এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শুটার আসিফ হোসেন খান! কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিতব্য আসরটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলছে বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি। সতীর্থরা বিওএর অর্থে প্রস্তুতি নিলেও একসময়ের দেশসেরা এ শুটার নিয়মের বেড়াজালে আটকে পকেটের অর্থ ব্যয় করছেন।


একদিকে শুটিং ক্যারিয়ার, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ ভাবনা। তাতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণজয়ী আসিফ। শুটিংয়ের পাশাপাশি আয়ের উৎস সৃষ্টি করে দিয়েছিল বিকেএসপির খণ্ডকালীন কোচের দায়িত্ব পালনের সুযোগ। সেটি লুফে নেওয়ার মাধ্যমেই বিপত্তির সূত্রপাত। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) আর শুটিং ফেডারেশনের শর্ত মোতাবেক আসিফকে বেছে নিতে হবে একটি_ শুটিং নয়তো কোচিং। সেই নিয়মের বেড়াজালে আটকে ক্যাম্প থেকে ছিটকে গেছেন তিনি। এরপর থেকে নিজ অর্থ খরচ করে সতীর্থদের সঙ্গে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আসিফ। সম্প্রতি ক্যাম্পে ফেরার জন্য ফেডারেশনে চিঠি দিলেও এখনও সেটার কোনো জবাব পাননি আসিফ। তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ফেডারেশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বল ঠেলে দেওয়া হয়েছে বিওএর কোর্টে। এ সম্পর্কে শুটিং ফেডারেশনের কোচিং কমিটির সদস্য এমরান চৌধুরী বলেছেন, 'আমাদের কিছু করার নেই। বিওএ শর্ত দিয়েছে, ক্যাম্পে আসতে হলে চাকরি ছাড়তে হবে। এখন বিষয়টি আসিফের ওপরই নির্ভর করছে।' আর বিওএর কোচিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান এ কে সরকার কিন্তু বিষয়টি ফেডারেশনের ওপর চাপিয়েছেন। 'আমরা একটি সংস্থার কর্মকাণ্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারি না। ফেডারেশন থেকে যদি আসিফের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত সুপারিশ পাঠানো হয়, তবে আমরা ব্যবস্থা নেব'_ বলেছেন তিনি। যাকে নিয়ে আলোচনা, সেই আসিফের বর্তমান অবস্থার বর্ণনা শুনুন নিজের কণ্ঠেই, 'প্রতি মাসে চট্টগ্রাম শুটিং ক্লাব থেকে ১০ হাজার এবং বিকেএসপি থেকে সমপরিমাণ অর্থ পাই। তা দিয়েই প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। সময়ের প্রয়োজনে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। পৈতৃক ব্যবসা দেখাশোনা করতে হলে সেখানে দিনের পুরোটা সময় ব্যয় করতে হবে। আমি চাচ্ছি শুটিং ধরে রাখার পাশাপাশি কিছু একটা করতে। সে ভাবনা থেকেই বিকেএসপির কোচ হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম।' বিওএ মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে বৃত্তি হিসেবে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা দিতেন তাকে।
গত জানুয়ারি থেকে সে বৃত্তিও বন্ধ। এরপর থেকেই আয়ের উৎসের সন্ধানে নামা। এ সম্পর্কে আসিফ বলেন, 'চাকরি ছাড়তে হলে আয়ের উৎস থাকতে হবে। এ অবস্থায় কী করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।' জটিল সমীকরণের মধ্যেও এশিয়ান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণের পথ কিন্তু অবরুদ্ধ হয়ে যায়নি। আসরটিতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা অর্জন করতে বাছাইয়ে ৫৯১ বা তার বেশি স্কোর করতে হবে। সে লক্ষ্যেই এখন চলছে প্রস্তুতি। আগামীকাল বাছাইয়ের প্রথম ধাপ। আসিফ কি পারবেন সে পরীক্ষায় উতরে যেতে? পারিপাশর্ি্বক অবস্থায় অনেকেই হয়তো আশাবাদী হওয়ার রসদ পাচ্ছেন না। মনে রাখতে হবে শুটারের নাম 'আসিফ'। সংশ্লিষ্টরা বলেন, যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য রয়েছে এ শুটারের মধ্য_ সে বিশ্বাসই এখন আফিসের সম্বল।

No comments

Powered by Blogger.