বিলুপ্ত সভ্যতা...

কপাল হরিণের পিছু নিয়েছে শিকারি দল। সঙ্গে অস্ত্র বলতে তীর-ধনুক আর বল্লম। সেগুলো দেখতে সাধারণ অস্ত্রের মতোই। তবে শিকারিরা ভালো করেই জানে, এর আঘাতে যে কোনো শত্রু পরপারে চলে যাবে। দায়িত্ব শুধু নিশানামতো আঘাত করা। ওদের অস্ত্র বিশারদরা নানা ধরনের বিষাক্ত উপাদানে অস্ত্রগুলো আরও শক্তিশালী করে দিয়েছে। ওগুলোর আকৃতিগত বৈশিষ্ট্যও বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণে তৈরি করা।


অনেকক্ষণ ধরেই হরিণের পাল অনুসরণ করে চলছে শিকারি দলটি। হরিণগুলোও বেশ চালাক। বেশিক্ষণ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকছে না। ফলে ভালো করে ঘিরে ধরারও সুযোগ মিলছে না। সুযোগের আশায় গভীর জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে শিকারি দল। অবশ্য শুধু শিকারের ওপরই ওরা নির্ভর করে থাকে না। ওদের পুরো জাতি শস্য উৎপাদন আর বাণিজ্যে উন্নতি করছে দ্রুত। তারপরও মাঝে মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে শিকারে বের হয় দলটি। দলের লোকদের সক্ষমতা আর দক্ষতা বাড়ানোর এটাই নাকি ভালো উপায়। আর এ কারণেই শিকারে আসা। কিন্তু হরিণের পালটা ভীষণ চালাক। অনেকক্ষণ ধরে ফাঁকি দিয়ে চলছে। ব্যাপার দেখে দলের সেরা শিকারির জেদ চেপে গেছে মনে। অন্তত দুটো বড় হরিণ না নিয়ে ঘরে ফিরবে না বলে ঠিকও করেছে। কিন্তু ওরা জানে না, এক শিকারি পিছু নিয়েছে হরিণের পালটার। সেই শিকারি চার পেয়ে। উজ্জ্বল-হলুদ গায়ে তার বাহারি কালোর ছোপ। নিশাচর হলেও সে খাবার সংগ্রহের জন্য বের হয়েছে দিনের বেলাতেই। মানুষ নামে দুই পায়ের জীবগুলো মোটেও পছন্দ নয় তার। নিজের শিকারের পিছু নিয়েছে মানুষ, এটাও ভালো লাগছে না ওর। তাই সতর্ক হয়ে অনুসরণ করছে শুধু। মাটিতে যেমন নিঃশব্দে চলছে, তেমনি গাছের মগডালে উঠে পড়ছে অবলীলায়।
এদিকে হরিণের পালকে বাগে পেয়ে গেছে শিকারি দলটি। আড়াল থেকে ঘিরে ধরে লক্ষ্য স্থির করেছে। এখন শুধু দলনেতার ইশারার অপেক্ষা। শিকার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, এটা সহ্য করতে পারল না চার পায়ের শিকারি। তাই লাফ দিয়ে নামল হরিণ আর মানুষের দলের ঠিক মাঝখানে। বিকট হুঙ্কার দিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে উঠল। যেন প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পড়িমরি করে একদিকে ছুটল হরিণ, অন্যদিকে মানুষের দল। কেউ একবার পেছনে ফিরেও দেখল না শিকারিকে।
অনেক দূরে নিরাপদ জায়গায় থামল শিকারি দল। বড় বাঁচা গেছে আজ। প্রাণীটা সিংহ কিংবা হাতি হলেও পরোয়া করত না ওরা। কিন্তু এটা জাগুয়ার। আর জাগুয়ার সম্পর্কে বিচিত্র একটা ধারণার প্রচলন আছে ওদের জাতির মধ্যে। ওরা বলে, পৃথিবীর সব শক্তির আধার হলো এ প্রাণীটা। সাধারণ অস্ত্র দিয়েও ঘায়েল করা যায় প্রাণীটিকে। তাতে ফল হয় আরও খারাপ। জাগুয়ারের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে ভয়ঙ্কর এক প্রেতাত্মা। বাঘের চেয়ে আরও অনেক বেশি তাণ্ডব চালিয়ে যায় সেই শক্তিশালী প্রেতাত্মাটি!
যে জাতির মধ্যে এ বিচিত্র বিশ্বাস ছিল, তাদের নাম ওলমেক। যিশুখ্রিস্টের জন্মের প্রায় বারোশ' বছর আগে ওলমেক সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়। মাত্র আটশ' বছরের মাথায় রহস্যজনক কোনো কারণে পতন ঘটে এই জাতির। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে মেক্সিকোর এক জঙ্গলে কৃষিজমি চাষবাসের সময় প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় ওলমেকদের। তারপর ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অসংখ্য প্রত্ননমুনা দেখার পর ওলমেক সভ্যতার সঙ্গে সবার পরিচয় ঘটে। কিন্তু আজও ওদের সভ্যতাকে ঢেকে রেখেছে এক রহস্যের চাদর। গবেষকদের তথ্যমতে, ওলমেক সভ্যতার উত্থান ঘটে আফ্রিকায়। কিন্তু ওরা কীভাবে আমেরিকায় এসেছিল, সেটা আজও রহস্যবৃত থেকেই গেছে। শস্য উৎপাদন, বাণিজ্য আর ভাস্কর্য নির্মাণে ওদের দক্ষতার কথা জানা গেছে। তবে আজও জানা যায়নি কীভাবে হারিয়ে গেল এ রকম একটি সমৃদ্ধ সভ্যতা।
আমির খসরু সেলিম

No comments

Powered by Blogger.