হাঙ্গরের সঙ্গে বুবুনের আলাপ

শু পাখির সঙ্গে ভাব জমাতে ওস্তাদ আমাদের পুচ্চি আড্ডাবাজ বন্ধু বুবুন সোনা। তা ওদের সামনাসামনি দেখুক কিংবা না-ই-বা দেখুক, আলাপ সে জমাবেই। ওর এ অভ্যাস জানা হয়ে গেছে সমুদ্রের ভয়ঙ্কর প্রাণী হাঙ্গরেরও। কিন্তু বুবুন সোনা তো চালাক খুব! হাঙ্গরকে সে নিজে থেকে ঘাঁটাতে যায়নি। একদিন তাই হাঙ্গর নিজেই এসে ধর্না দিলো ওর স্বপ্নে। ভয়াল এই প্রাণীকে দেখে বুবুন একটু ঘাবড়েছে অবশ্য, তাই বলে আলাপ না জমিয়ে পারেনি। সেই আলাপ


তোমাদের সামনে হাজির করছেন আশিক মুস্তাফা

হাঙ্গর : আরে বুবুন মিয়া যে, কেমন আছো?
বুবুন : এতোক্ষণ তো ভালোই ছিলাম। তোমার কথা শুনে কি আর ভালো থাকা যায়?
হাঙ্গর : কেন ভাই, আমি আবার কী করলাম?
বুবুন : হাঙ্গররা তো মানুষ ধরে আস্ত গিলে খায়। কখন আবার আমাকে খাওয়ার বায়না ধরো_ সেই ভয়ে ভালো নেই আর কি!
হাঙ্গর :ভয় পেও না বুবুন। আমি হচ্ছি সাদা মাথার হাঙ্গর। আর সাদা মাথার হাঙ্গরা কখনও মানুষ খায় না।
বুবুন : যাক বাবা, বাঁচালে আমায়। তবুও একটু ভয়-ভয় লাগছে! দাঁড়াও, বুকে একটু থুতু দিয়ে নিই।
হাঙ্গর : দাও। ভালো করে দিয়ে নাও। তবে বেশি দিয়ে বুকটা আবার ভিজিয়ে ফেলো না। তাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। শোনো, হাঙ্গররা কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছ ঘেঁষে না। মানে গায়ে পড়ে তাদের ধরতে যায় না।
বুবুন : তো কাদের ধরে?
হাঙ্গর : সামুদ্রিক খাবার খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। ওই যে, সিল মাছের নাম শুনেছো না? সে মাছটাই আমাদের পছন্দের খাবার। সামুদ্রিক মাছও পছন্দের তালিকা থেকে বাদ নেই।

বুবুন : তাহলে মানুষ তাড়া করো কেন?
হাঙ্গর : সবাই বলে, মানুষ অনেক বুদ্ধিমান। আসলে আমরা তা মনে করি না। তোমাকে গোপনে একটা কথা বলি। আরও কাছে আসো। আমার মুখের কাছে কানটা বাড়িয়ে দাও।
বুবুন : এই নাও দিলাম। দেখো আবার, ঘ্যাচাং করে কামড় বসিয়ে দিও না।
হাঙ্গর : আহ্, কী যে বলো না বুবুন! শোনো, সমুদ্র সৈকতে যারা স্বাভাবিক ভাবে চলে, হাঙ্গররা তাদের কখনও ধরতে যায় না। বরং উল্টো তাদের দেখে শুনে রাখে। তবে, মানুষ যখন হাঙ্গর দেখে দৌড়ে সাঁতার কাটা শুরু করে, তখন আর আমার জাতভাইদের মাথা ঠিক থাকে না। তারা শত্রু ভেবে মানুষকে তাড়া করে। তাই বলছিলাম কি, সাগরে নেমে কখনও হাঙ্গর দেখে ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করে সাঁতার কাটা শুরু করে দিও না।
বুবুন : ঠিক আছে, কথাটা মেনে চলবো। বাবা-মাকেও বলে দেবো। তা তোমরা সাগরের কোন জায়গাটাতে থাকতে বেশি পছন্দ করো?
হাঙ্গর : থাকার জন্য গভীর সমুদ্রই আমাদের পছন্দ। তাছাড়া প্রায় সব মহাসাগরেই আমাদের দেখা পাবে। তবে এন্টার্কটিকা একটু বেশিই পছন্দের জায়গা আমাদের।
বুবুন : বাপরে! তোমার দাঁতগুলো কেমন ধারালো।
হাঙ্গর : আমার দাঁতের চেয়ে আরও বেশি ধারালো দাঁত হচ্ছে টাইগার হাঙ্গরের।
বুবুন : সে আবার কী?
হাঙ্গর : শোনো, আম গাছ হচ্ছে তোমাদের জাতীয় গাছ। এই আম গাছ কতো রকমের হয়, আবার তাতে আমও ধরে নানা রকমের, তাই না?
বুবুন : হুম্।
হাঙ্গর : তেমনি হাঙ্গরও অনেক রকমের হয়।
বুবুন : ও তাই? তা তুমি তো সাদা মাথাঅলা হাঙ্গর; বাকিদের নাম বলো না?
হাঙ্গর : আমাদের চেনার বেলায় লেজটাই বেশি কার্যকর। এই ধরো, টাইগার হাঙ্গর। খাওয়ার পরে তোমাদের সুন্দরবনের বাঘ যেমন হাই তোলে, টাইগার হাঙ্গরদের লেজটা ঠিক সেই রকম করে। দেখলে মনে হবে, যেন তার লেজে বসে একটা বাঘ হাঁ করে বসে আছে। তারপর আছে নার্স হাঙ্গর। ওদের লেজ দেখতে বয়স্ক মানুষের পায়ের পাতার মতো। পরবেগল হাঙ্গর ও বড় সাদা হাঙ্গরের লেজ অনেকটা ডলফিনের মতো। ট্রেজার হাঙ্গর ও কুকিকাটার হাঙ্গরের লেজেও দেখা যায় অনেক পার্থক্য।
বুবুন : মাঝে মধ্যে তোমাদের শরীরের আশপাশে ছোট ছোট সামুদ্রিক মাছ দল বেঁধে ঘুরতে দেখি। তারা তোমাদের আশপাশে ঘুর-ঘুর করে কেন?
হাঙ্গর : আমাদের সঙ্গে চলাটাকে তারা নিরাপদ মনে করে, তাই ঘুর-ঘুর করে আর কি!
বুবুন : সেটা আবার কেমন কথা?
হাঙ্গর : আসল কথা হচ্ছে, আমাদের মুখটা নিচের দিকে হওয়ায়
ছোটখাটো খাবার মুখে পুরতে পারি না। তাই ইচ্ছে করলেও তাদের খেতে
পারি না।
বুবুন : ও, তাই বলো! তুমি কি 'আঙ্গুর ফল টক' গল্পটা শুনেছো?
হাঙ্গর : না।
বুবুন : শুনবে কোত্থেকে! সারাদিন তো পানিতে পইপই করে ঘুরে বেড়াও আর মানুষদের ভয় দেখাও! বই-খাতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আছে তোমার?
হাঙ্গর : তা নেই, তবে সাগরের অনেক কিছুই বই না পড়েও আমরা বলে দিতে পারি।
বুবুন : থাক, আর পণ্ডিতি করতে হবে না। আমার আবার পরীক্ষা আছে কাল। তুমি এবার কেটে পড়ো। আমি পড়তে বসি।
হাঙ্গর : ঠিক আছে যাচ্ছি। তবে আবার দেখা হবে কিন্তু আমাদের!
বুবুন : তোমার সে ইচ্ছে পূরণ না হলেই বাঁচি।

No comments

Powered by Blogger.