হরচন্দ্রের বিলাসিতা

মাদের দেশে এমন অনেক শাসক ছিলেন, যারা শুধু বিলাসিতা করেই খুইয়েছেন রাজ্য কিংবা জমিদারি। মোমেনশাহী পরগনার জমিদার হরচন্দ্র চৌধুরী ছিলেন তেমনই এক খেয়ালি জমিদার। পিতা রুদ্রচন্দ্রের মৃত্যুর পর দুই ভাই হরচন্দ্র ও ভৈরবচন্দ্র জমিদারি বণ্টন করে নেন। ভৈরবচন্দ্র নতুন বাসস্থান গড়তে চলে যান ভবানীপুরে আর হরচন্দ্র থেকে যান পৈতৃক ভিটায়। জমিদার হরচন্দ্র ছিলেন অমিতব্যয়ী এবং বিলাসী। পোশাক-আশাকে ছিলেন একেবারেই


ধোপদুরস্ত। তিনি কখনোই সাধারণ মানের কোনো পোশাক পড়তেন না। শারদীয় দুর্গাপূজা এবং কালীপূজায় দূরদেশ থেকে আনা হতো যাত্রাদল, গায়িকা এবং নর্তকী। বিলাস-ব্যসনে সামান্যতম কার্পণ্য করতেন না। সবার জন্য ভোজনের ব্যবস্থা করতেন। বলি দেওয়ার জন্য তিনি নিজেই শিকার করে আনতেন বন্যমহিষ। বলির মহিষকে গোসল করানো, তেল-সিঁদুর দিয়ে সাজানোর কাজও তিনি নিজে করতেন। তার অনেক বিলাসিতাই ছিল বিচিত্র ধরনের। এসব বিলাসিতা নিয়ে এখনও প্রচলিত আছে অসংখ্য প্রবাদ; জনশ্রুতিও কম নেই। জানা যায়, অসংখ্য হাতি ছিল জমিদারের হাতিশালে। হাতিগুলোকে মাঝেমধ্যেই তিনি সাজিয়ে দিতেন সোনা-রুপার গহনায়। কখনও কখনও সোনার গহনা হারিয়েও যেত। হরচন্দ্র তখন বলতেন, হাতির গা থেকে খুলে পড়া গহনা দরিদ্রের প্রাপ্য, ওতে আফসোস করার কিছু নেই। জমিদার বাড়ির চত্বরেই ছিল বিশাল এক দীঘি। সাধারণের তো বটেই, বাড়ির মানুষেরও নামা নিষেধ ছিল সেই পুকুরে। তিনি পুকুরটিতে পালন করতেন বড় বড় রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিচিত্র মাছ। এসব মাছের নাকে তিনি পরিয়ে দিতেন সোনার নথ।
অনেকেই জানেন, মাটির রুক্ষতার কারণে ভালো আম হতো না ময়মনসিংহ অঞ্চলে। যা-ওবা হতো, তাতে পোকামাকড় বাসা বাঁধত। এ কারণে প্রবাদ আছে, ময়মনসিংহ এলাকার মানুষ পোকার ভয়ে দিনের বেলায় আম খেত না আগে। যা-ই হোক, জমিদার হরচন্দ্রের ইচ্ছে হলো ময়মনসিংহ অঞ্চলে তিনি সুস্বাদু উন্নত জাতের আম ফলাবেন। এ কারণে তিনি মালদহ থেকে নৌকা ভরে মাটিসহ আমের চারা আনলেন। গড়লেন বিশাল এক আমবাগান। জনশ্রুতি আছে, হরচন্দ্র নাকি ১০-১৫ দিন পরপর রোপণ করা আমের চারা তুলে দেখতেন যে, শিকড় কতটুকু বড় হয়েছে। এমন বিচিত্র বিলাসিতায় ডুবে থেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তার মৃত্যুর পর জমিদারির মালিক হন তার পুত্র রামচন্দ্র। রামচন্দ্র চৌধুরী কর্মপটু ও বুদ্ধিমান হলেও পিতার ঋণ শোধ করতে করতেই তার পুরো জীবন কেটে যায়।
সাইফুল ইসলাম

No comments

Powered by Blogger.