নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন-নতুন মেয়রের নেতৃত্বে হোক শুভযাত্রা

নেকের মনেই শঙ্কা ছিল, হাওয়ায় ছিল নানা সতর্কতা-সংকেত। কিন্তু ভোটের দিন শঙ্কা, সতর্কতা কিছুই আর প্রাসঙ্গিক রইল না। বরং ভোট হলো রৌদ্রকরোজ্জ্বল ৩০ অক্টোবরের মতোই সুষ্ঠু, অবাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত। ভোটাররা দলে দলে বেরিয়ে এসেছেন নির্ভয়ে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। বিশেষত নারী ভোটারদের বিপুল উপস্থিতি কারও নজর এড়ায়নি। নির্বাচকমণ্ডলীর এ স্বতঃস্ফূর্ত উত্থান দেখে সহসাই সকল ভয় দূর


হয়ে গিয়েছিল সবার মন থেকে। প্রার্থীদের কিছু কৌশলী চাপানউতোর ছাড়া শুরু থেকে ফল ঘোষণা পর্যন্ত তাই কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি দাঁড়াতে হলো না এবার। সফল এ ভোট-উৎসবের কৃতিত্ব অবশ্যই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মানুষের। তাদের মধ্যে যে এক জাগরণ তৈরি হয়েছিল গোপনে তারই সাক্ষ্য মিলল এবার। তাই তাদের অভিনন্দন জানাতেই হবে। জনগণের ৬৫% সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকেও অভিনন্দন। তিনি সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত ও সচেতন প্রার্থী হিসেবে বিপুল জনসমর্থন আকৃষ্ট করতে পেরেছেন। দলীয় সমর্থনের বাইরে দাঁড়িয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জয় ছিনিয়ে এনেছেন। একজন তরুণ ও সংগ্রামশীল নারী হিসেবে তিনি সমগ্র জাতির সামনে পরিচিত হয়েছেন। তাকে অভিনন্দন। দায়িত্বরত নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটাই শেষ নির্বাচন। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার দুই সহযোগী কমিশনার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে শুভযাত্রা করেছিলেন তার সফল সমাপ্তি হতে যাচ্ছে এ নির্বাচনের মাধ্যমে। সেনা মোতায়েন ছাড়াই তারা যেভাবে সফল নির্বাচনের দৃষ্টান্ত গড়লেন তা প্রশংসনীয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাও প্রশংসা পাবেন। কেননা তারা যথেষ্ট সংযমের পরিচয় না দিলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারত। সুখের কথা, আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান ফল মেনে নির্বাচিত মেয়রকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নবনির্বাচিত মেয়রও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। পারস্পরিক বোঝাপড়ার এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। সেলিনা হায়াৎ আইভীর হাত ধরে নতুন সিটি করপোরেশনটি গড়ে উঠবে। আমরা আশা করব, জনপ্রত্যাশা অনুসারে তার নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জ একটি আদর্শ শহরে পরিণত হবে। সেখানকার সমস্যাগুলো সমাধান হবে। নারায়ণগঞ্জের হৃতগৌরব ফিরে আসবে। আর এ ক্ষেত্রে সরকারের সমর্থন জরুরি। দলীয় সমর্থন কার পক্ষে ছিল সে তর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির নীতিই এখানে প্রাধান্য পাওয়া উচিত। আমরা আশা করব, সরকারও নবনির্বাচিত মেয়রের নেতৃত্বে নবগঠিত সিটি করপোরেশনটিকে সফল করার জন্য সকল সুবিধা নিশ্চিত করবে। শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছেই নয়, এ নির্বাচন পুরো দেশবাসীর ভাবনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। তারা গভীরভাবে এখানকার ঘটনাবলিকে প্রত্যক্ষ করেছেন। এ ক্ষেত্রে মিডিয়ারও ইতিবাচক ভূমিকা ছিল। সকলের চেষ্টায় এ নির্বাচনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হয়েছে। যেমন_ ইভিএম। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার নিয়ে যে সংশয় ছিল তাকে অনেকটাই দূরীভূত করতে পেরেছে এ নির্বাচন। একে উদাহরণ ধরে, এখন বিরোধী দলগুলো ইভিএমের বিরুদ্ধে নিজেদের আপত্তি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন, জনগণ, মিডিয়া, সরকার ও প্রশাসন যার যার প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করলে যে দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব সেটিও এ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো। তবে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্তে সরকার সাড়া না দেওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। সরকারের সহযোগিতা নিয়েও কথা উঠছে। পরবর্তী নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টি বারবার আলোচিত হবে। তাই এ বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যা আসা উচিত। ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া সফল করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যে উদাহরণগুলো সৃষ্টি করল তা থেকে সকল পক্ষ শিক্ষা নিলে সেটিই হবে প্রত্যাশিত।
 

No comments

Powered by Blogger.