টেন্ডুলকারের ২৮ বারের আফসোস

চীন টেন্ডুলকার মানে স্বপ্নপূরণ, এবং অনেকবার স্বপ্নভঙ্গও! নইলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরির দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাটসম্যানই কেন সবচেয়ে বেশিবার নড়বড়ে নব্বইয়ের ঘরে আউট হওয়ার রেকর্ড গড়বেন? ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ১৮ বার নাভার্স নাইনটিজের ঘরে আটকে থাকার রেকর্ডটা করেছিলেন অনেক আগেই। গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৪ রানে আউট হয়ে টেস্টেও এই তালিকায় পেঁৗছে গেলেন শীর্ষে।


এত দিন ১০ বার নড়বড়ে নব্বইয়ের ঘরে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ আর ভারতের রাহুল দ্রাবিড়। গতকালের আউটে টেন্ডুলকারও এখন এই দুই কিংবদন্তির পাশে! একদিক দিয়ে তাঁদেরও ছাড়িয়ে গেছেন টেন্ডুলকার, কেননা ১০ ইনিংসের মধ্যে ওয়াহ দু'বার আর দ্রাবিড় অপরাজিত ছিলেন একবার কিন্তু টেন্ডুলকার আউট হয়েছেন ১০ বারই।
অথচ কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, শিল্প থেকে সংগীত দুনিয়া, পুলিশ, সাধারণ মানুষ_সবাই গতকাল প্রার্থনা করছিলেন ৩৩টা রান যেন করে ফেলেন টেন্ডুলকার (তৃতীয় দিন অপরাজিত ছিলেন ৬৭ রানে)। তাহলেই নিজের শহর মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে গড়া হবে নতুন ইতিহাস। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কেউ গড়বেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার কীর্তি। কিন্তু হলো না। উল্টো টেস্টে নার্ভাস নাইনটিজে সবচেয়ে বেশিবার আউট হওয়ার হৃদয়ভাঙা রেকর্ড গড়ে বসলেন এ যুগের ব্র্যাডম্যান। একবার ভাবুন টেস্ট আর ওয়ানডে ২৮ বার নড়বড়ে নব্বইয়ের ঘরে থাকতে না হলে এত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি হয়ে যেত ১২৭টি! এমনি এমনিই কি টেন্ডুলকারের ছেলে অর্জুন ছোটবেলায় বাবাকে পরামর্শ দিয়েছিল, 'বাবা ৯৪-এর পর ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি করে ফেলো, তাহলেই তো আর স্নায়ুর চাপে ভুগতে হবে না!'
৯০-এর ঘরে পা রাখার পর ১০০-তে পেঁৗছানার রাস্তাটা পেরোতে চাপ অনুভব করেন প্রায় সব ব্যাটসম্যানই। এ জন্যই ৯০-এর ঘরের স্কোরকে বলা হয় নার্ভাস নাইনটিজ। ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হৃদয়ভাঙা এই রেকর্ডটা করেছিলেন ইংল্যান্ডের স্ট্যানলি জ্যাকসন। ১৮৯৩ সালে প্রথমবার ঘটেছিল এটা। লর্ডস টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯১ করে চার্লি টার্নারের বলে উইকেটরক্ষক জ্যাক ব্লাকহামকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
একই ম্যাচে তিন তিনজন ক্রিকেটারের ৯৯ রানে আউট হওয়ার রেকর্ডও আছে টেস্টে। ১৯৭৩ সালে করাচি টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৯ করে প্যাট পোককের বলে ড্যানিস অ্যামিসকে ক্যাচ দিয়েছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক মাজিদ খান। মাজিদের ফেরার পর মুস্তাক মোহাম্মদও ৯৯ রানে হয়ে যান রানআউট। নাটকের বাকি তখনও। ইংলিশ ওপেনার ড্যানিস অ্যামিসও ৯৯ রানে ইন্তিখাব আলমের বলে ক্যাচ দেন সরফরাজ নওয়াজকে। অল্পের জন্য অবশ্য এই তিনজনের কাতারে নাম লেখাননি ইংলিশ অধিনায়ক টনি লুইস। তিনি আউট হয়েছিলেন ৮৮ করে! এক টেস্টে তিন তিনজন ব্যাটসম্যানের ৯৯ রানে আউট হওয়ার ঘটনা আর ঘটেনি ক্রিকেটে।
শচীন টেন্ডুলকারের আগে টেস্টে সর্বোচ্চ ১০ বার করে ৯০-এর ঘরে আটকে যাওয়ার রেকর্ডটা ছিল স্টিভ ওয়াহ ও রাহুল দ্রাবিড়ের। ১৬৮ টেস্ট খেলা ওয়াহ'র সেঞ্চুরি ৩২ আর ১৬০ টেস্টে দ্রাবিড়ের ৩৬টি। ১৯৮৫ সালে অভিষেকের পর ওয়াহ প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা পান ১৯৮৯-এ। প্রথম সেঞ্চুরির আগে '৮৮-এর নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আউট হয়েছিলেন ৯০ করে। ঠিক পরের টেস্টে পার্থে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গেই আউট হন আবার ৯১ রানে! রাহুল দ্রাবিড়ের কষ্টটা আরো বেশি, কেননা অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৫ রান দূরে থাকতে আউট হয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডস টেস্টে ৯৫ করে দ্রাবিড় ক্রিস লুইসের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। আর টেন্ডুলকার ১৯৯৪ সালে বেঙ্গালুরু টেস্টে প্রথমবার হয়েছিলেন নার্ভাস নাইনটিজের শিকার। ৯৬ করে তিনি বোল্ড হন লংকান বোলার ডন আনুরাসিরির বলে। তত দিনে অবশ্য ৭টি টেস্ট সেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
টেস্ট ক্রিকেটে ঠিক ৯৯ রানে অপরাজিত থাকার ঘটনাও ঘটেছে পাঁচবার। অপরপ্রান্তে সব ব্যাটসম্যান বিদায় নেওয়াতেই ঘটেছে ঘটনাগুলো। ১৯৭৯ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান জিওফ বয়কট। এরপর ১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ, ১৯৯৯-এ ইংল্যান্ডের অ্যালেঙ্ টিউডর, ২০০২-এ দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক ও ২০০৩-এ দক্ষিণ আফ্রিকারই অ্যান্ড্রু হল অপরাজিত ছিলেন ৯৯ রানে। এ ছাড়া একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৩২ সালে ডন ব্র্যাডম্যান ২৯৯ ও ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার অপরাজিত ছিলেন ১৯৯ রানে।
অভিষেকে এমনিতেই স্নায়ুর চাপে থাকেন অনেকে। এরপর আবার ৯০-এর ঘরে গেলে সেই চাপটা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এ কারণেই হয়তো ২৭ জন ব্যাটসম্যান নার্ভাস নাইনটিজে আউট হয়েছেন অভিষেক টেস্টে! ওয়েবসাইট
টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে অভাগা পাঁচ
যে দশবার টেস্ট সেঞ্চুরি মিস করেছেন টেন্ডুলকার

No comments

Powered by Blogger.