পান্নার মৃত্যু নিয়ে রহস্য, আসলে কতো টাকা ছিল?
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার মরদেহ তামাবিল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে হস্তান্তর করেছে মেঘালয় পুলিশ। গতকাল দুপুরে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়। তবে এই আওয়ামী লীগ নেতার নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে রহস্য এখনো কাটছে না। গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইসহাক আলী খান পান্নার মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানায় মেঘালয় পুলিশ। তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৬শে আগস্ট পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড়ের দোনা ভোই গ্রামের একটি সুপারি বাগান থেকে পান্নার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকাটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। মেঘালয় পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে শ্বাসরোধের কথা বলা হয়েছে। তবে পান্নার মৃত্যু কোথায় কীভাবে হয়েছে তা এখন পর্যন্ত কেউই নিশ্চিত করতে পারেনি। এর আগে খবর বেরোয় যে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে পান্না নিহত হয়েছেন। তবে বিএসএফ সূত্রগুলো এ খবর নাকচ করেছে। তারা বলছে, এটা পুরোপুুরি মিথ্যা। পান্নার ভাগ্নে লাইকুজ্জামান তালুকদার মিন্টু ২৪শে আগস্ট জানিয়েছিলেন, ওইদিন সকালে শিলংয়ে একটি পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ে মারা গেছেন তার মামা। কিন্তু এখন মেঘালয় পুলিশ জানাচ্ছে ভিন্ন তথ্য। পান্নার স্বজনরা দাবি করেছেন তার কাছে প্রায় দুই কোটি ডলার ছিল। তবে মৃতদেহ উদ্ধারের সময় কোনো মুদ্রা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন পূর্ব জৈন্তিয়া পাহাড় জেলা পুলিশের প্রধান গিরি প্রসাদ। কারও সঙ্গে এত বেশি পরিমাণ অর্থ থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে আরেকটি সূত্র বলছে, অর্থ নিয়ে বনিবানা না হওয়ায় পান্নাকে হত্যা করা হতে পারে। এর আগে সিলেট সীমান্তে সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক যখন ধরা পড়েন তিনিও দাবি করেছিলেন, একটি গ্রুপ তার কাছ থেকে ৬০-৭০ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আগে খবর বেরিয়েছিল, ভারতের এবং বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারতে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছেন। গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়ে দেশটিতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে এরইমধ্যে চলে গেছেন বলে কিছু কিছু সূত্র বলছে। এদিকে, পান্নার মরদেহ হস্তান্তরের সময় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), তামাবিল ইমিগ্রেশন পুলিশ ও ভারতীয় বিএসএফ এবং মেঘালয় রাজ্যের ওয়েস্ট জৈন্তিয়া হিলস জেলার ডাউকি থানা পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পান্নার মরদেহ বাংলাদেশে পাঠাতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ শেষে শনিবার মেঘালয় পুলিশ ইসহাকের মরদেহ তামাবিল বর্ডার দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মরদেহ হস্তান্তরের সময় নিহত ইসহাকের ভাতিজা মো. কামরুজ্জামান খান নাবিল উপস্থিত ছিলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিজিবি-বিএসএফ এবং পুলিশের উপস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিধি মোতাবেক মৃতদেহটি তার স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইসহাক আলী খান পান্না ১৯৯৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হয়েছিলেন। তিনি পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন।
No comments