মৌলভীবাজারে বন্যা: কমছে পানি, বাড়ছে দুশ্চিন্তা by ইমাদ উদ দীন
ভয়ার্ত রূপ দেখানো বন্যার আগ্রাসন থেমেছে এখন। ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। দীর্ঘ প্রায় ১২ দিন পর বানের পানির দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠলেও এখন মহাদুর্ভোগে ঘরবাড়ি হারানোদের পুর্নবাসন নিয়ে। জেলার নদী তীরের চরম দুর্ভোগগ্রস্ত বানভাসিদের সঙ্গে আলাপকালে এমনটিই জানালেন তারা। জেলার ৭টি উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত মনু, ধলাই, ফানাই, জুড়ী, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদীর তীরের ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। নদী ও হাওর এলাকার বন্যার পানি দ্রুত নামছে। তবে এরই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে নতুন দুর্ভোগ। বিশুদ্ধ পানি, খাবার, শিশুখাদ্য, স্যানিটেশন ও গো-খাদ্যের চরম সংকটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগবালাই। আকস্মিক বন্যায় ছেড়ে যাওয়া বাসাবাড়িতে ফিরছেন বন্যার্তরা। বসতঘর মেরামত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পর পুনরায় অনেকটা নতুন করেই যাত্রা শুরু করছেন বসবাসের জন্য। তবে উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টি হলে বন্যায় আবারো প্লাবিত হতে পারে। এমন আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের। কারণ নদী ভেঙে যাওয়া বাঁধ এখনো মেরামত হয়নি। গেল কয়দিন থেকে নদী তীরবর্তী গ্রাম ও শহর এলাকা থেকে বানের পানি নেমে যাওয়ায় ভেসে উঠছে ডুবন্ত রাস্তাঘাট আর বসত ভিটা। পানি নামাতে ক্ষতিগ্রস্তরা কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হলেও এখন দেখা দিচ্ছে নানা নতুন দুর্ভোগ। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। আর এরই সঙ্গে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানও। ঘরবাড়ি আর ক্ষেতকৃষি হারানো দৃশ্যে অসহায়ত্তও ভাড়ছে বন্যায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের। সরকারি তরফে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো পুরোপুরি নিরূপণ হয়নি। বিভিন্ন বিভাগের উদ্যোগে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ের কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে সবমিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আরও দু/একদিন সময় লাগবে। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে বন্যায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩৩ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন চলমান ৩য় দফা বন্যায় জেলার ৭টি উপজেলার নদী ও হাওর এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে জেলার রাজনগর, কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া কয়েক শতাধিক ঘরবাড়ি আংশিক এবং পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। রাজনগর উপজেলার কামারচাক, মনসুরনগর, টেংরা ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে দেখা যায় বন্যার পানির তোড়ে বেশ কিছু ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। ভিটের মাটি সরে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই ভয়াল দৃশ্য দেখে বোঝার উপায় নেই বন্যার আগে এখানে কোনো বসতভিটা ছিল। একই অবস্থা কুলাউড়া উপজেলার মনু নদী তীরবর্তী শরীফপুর, হাজীপুর, টিলাগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে। কমলগঞ্জের ইসলামপুর, আদমপুর, পতনঊষার, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের একাধিক গ্রামেই একই অবস্থা। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, বন্যায় তাদের ঘরবাড়ির অস্তিত্ব নেই। বসত ভিটা আর উঠান এখন অনেকটাই পুকুর হয়ে গেছে। এমনকি পাকা ল্যাট্রিনের ট্যাংকির নিচ পর্যন্ত পানির স্রোতের তোড়ে উঠে গেছে। বিশুদ্ধ পানির উৎস টিউবওয়েলগুলোও নষ্ট হয়েছে। নদী তীরবর্তী গ্রামের ঘরবাড়ি ঘুরে দেখা যায় সবার অবস্থা একই। কারও সীমানা প্রাচীর কিংবা ঘরের দেয়াল বানের পানির স্রোতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এ বছর আকস্মিক বন্যায় জেলায় মনু, ধলাই, জুড়ী, ফানাই ও কুশিয়ারা নদীর প্রায় ২৫টি স্থানে ভাঙন ও বাঁধ উপচে তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত করে। বাঁধ ভাঙা এলাকার আশপাশে যাদের বসত ভিটা ছিল তাদের এখনো অবর্ণনীয় দুর্ভোগ আর ক্ষয়ক্ষতি। আকস্মিক বন্যায় বেহাল দশা জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থারও। ২য় দফা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগেই আবারো ৩য় দফা বন্যা হওয়ায় চরম ক্ষতি হয়েছে রাস্তাঘাটেরও। ক্ষেতকৃষি, সবজি ও ফলজ বাগান নষ্ট হয়েছে। ফসলের ক্ষতিতে প্রান্তিক চাষিরা এখন দিশাহারা। হঠাৎ এমন ক্ষয়ক্ষতিতে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন কৃষকরা। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিরা। বিপর্যয় নেমে এসেছে পোল্ট্রি খাতেও।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম চৌধুরী মানবজমিনকে জানান জেলার প্রতিটি দপ্তর থেকে ক্ষয়ক্ষতির নিরূপণ করা হচ্ছে। ডি ফরমে সব বিভাগের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানাবেন। আমরা এ সকল পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন। প্রত্যাশা হয়তো পুনর্বাসনের পরিকল্পনাও থাকতে পারে।
No comments