সড়কে শৃঙ্খলা নেই, যানজট আর ভোগান্তি by নাজমুল হুদা
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর বড় বাধা প্রভাবশালী বাসমালিকরা, যারা জড়িত ছিলেন বিদায়ী সরকারে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা দীর্ঘদিন সড়ক অরাজক করে রেখেছেন।
বর্তমানে ঢাকায় অসংখ্য অবৈধ বাস চলাচল করছে। এছাড়া রুট পারমিট-হীন, রুট ভায়োলেশনকারী ও নকল রুট বহনকারী বাসও দেদার চলছে সড়কে। এ সব বাসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার নজিরও নেই। ডিটিসিএ’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাসমালিকদের একটা অংশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সড়কে এসব বাসের মালিক তাদের পূর্ণ ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃত্বে থেকে তারা সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিটিসিএ’র নেয়া উদ্যোগও সফল করতে দেননি পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। রেশনালাইজেশন প্রকল্পের জন্য বাসমালিকরা তাদের সাড়ে ৩ হাজার পুরনো বাস কিনে নিতে বলেছিল। যেটা দেশের অর্থ সংকটের মুহূর্তে ছিল অসম্ভব। এছাড়া সহজ শর্তে মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণসহ বিভিন্ন দাবি করেছিল তারা। এ সব দাবি না মানায় বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্নভাবে বাধা দেন তারা। এতে জনপ্রিয়তা নিয়ে শুরু করলেও বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা নগর পরিবহন। ডিটিসিএ’র ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ও বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম মানবজমিনকে বলেন, বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় ছিল। বাসমালিক সমিতির সরাসরি বিরোধিতা ছিল। তারা অযৌক্তিক দাবি করেছিল যা পূরণ করা ছিল অসম্ভব। তাদের বাস সড়কে না থাকলে বাস চালানোর মতো কাউকে পাওয়া যাবে না বলে জিম্মি করে রাখতো।
সরকার পতনের পর ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে শিক্ষার্থীরা। সে সময় সুশৃঙ্খলভাবেই চলাচল করেছিল যানবাহন। তবে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে আবারো বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে ঢাকার রাস্তা। শুরু হয় যেখানে-সেখানে পার্কিং, যাত্রী উঠানামা আর রেষারেষি। এ সব কারণে কৃত্রিম যানজটও সৃষ্টি হয় অনেক। সম্প্রতি মেট্রোরেল চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকায় যানজটের চিত্র ছিল ভয়াবহ। তবে মেট্রোরেল চালু হলেও সড়কের বিশৃঙ্খলার কারণে বাংলামোটর, কাওরানবাজার, ফার্মগেট অংশের যানজট এখনও রয়ে গেছে। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে ১১০টির বেশি বাসস্টপেজ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এর দু’-একটি ছাড়া কোনোটিই ব্যবহার করছে না বাসগুলো। এছাড়া বিভিন্ন ফ্লাইওভারের মুখে এই বিশৃঙ্খলা বেশি দেখা যায়। ফ্লাইওভারের মুখে যাত্রী উঠা-নামা করায় পেছনের যানবাহনগুলো বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যানজটের সৃষ্টি করে। ডিএসসিসি’র মধ্যে মেয়র হানিফ, খিলগাঁও, মগবাজার, মালিবাগ ফ্লাইওভাবে এই চিত্র নিয়মিতই দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিয়মিত এই যানজট ভোগাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ঢাকার বিভিন্ন সড়কের ওপর বাস, ট্রাক পার্কিং করে রাখার ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বাস টার্মিনালগুলোর আশপাশে এই চিত্র ভয়াবহ। রাইদা পরিবহনে চলাচল করা খোকন নামে এক যাত্রী বলেন, আমি বৌদ্ধ মন্দির থেকে বাসে উঠি। এখানে একটা স্টপেজ আছে। কিন্তু বাস সেখানে দাঁড়ায় না। মোড়ে দাঁড়ানোর কারণে যানজট লেগে যায়। মিঠুন মুন্সী নামের এক যাত্রী বলেন, ছাত্ররা রাস্তায় থাকা অবস্থায় বাসের রেষারেষি কিছুদিন বন্ধ ছিল। এখন আগের মতো বিশৃঙ্খল অবস্থা। পুলিশও কিছু বলে না। বোরহান নামে প্রাইভেটকারচালক বলেন, সড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আগে বাসের চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তারা তাদের মর্জিমতো গাড়ি চালায়। যেখানে-সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী নেয়। এসব কারণে আমাদের গাড়িগুলো আটকে যায়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো অপরিহার্য বলে মনে করছে ডিটিসিএ। তাই সকলের সহযোগিতা কামনা করে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ধ্রুব আলম বলেন, শত শত মানুষ আছে যারা রুট পারমিট পায় না। আমরা সকল প্রকৃত মালিককে আহ্বান জানাবো। কোনো সমিতির দরকার নেই। যোগ্য হলে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় তাদেরকে নিয়ে আসবো। এদিকে নগর পরিবহনের জন্য ঢাকার সবগুলো রুটে বাস চালাতে চায় ডিটিসিএ। এজন্য সম্প্রতি একটি সভায় বেশকিছু সিদ্ধান্তও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তারা পুরনো রুট বাতিল, নবায়ন ও পুনর্বিন্যাস করে নতুন করে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’- চালানোর জন্য শিগগিরই কর্মপরিকল্পনা হাতে নিবে।
No comments