নড়াইলে ইউপি নির্বাচনে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ

জমে উঠেছে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ও পাঁচগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। আগামি ২৩ মে এ দু’টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পেড়লীতে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ এবং পাঁচগ্রাম ইউনিয়নে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে পেড়লী ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাহাঙ্গীর হোসেন ইকবাল, ধানের শীষ প্রতীকে গোলাম মোর্শেদ শেখ এবং হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরাদ হোসেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জারজিদ মোল্যা (ঘোড়া প্রতীক) ও ইমাম হোসেন তুষার (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আ’লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছাত্র রাজনীতি করার সময় থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল মানুষের সেবা করার। সেই স্বপ্নকে লালন করে আমি মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। আশা করছি আমি বিজয়ী হব। তবে, স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী প্রার্থী) এক প্রার্থী ও তার সমর্থকেরা ভোটারদের ভয়ভীতি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোর্শেদ জানান, ভোটাররা সুষ্ঠু ভাবে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে তিনি বিজয়ী হবেন। তবে, নয়টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে এবং পরে অন্তত এক সপ্তাহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সত্যিকার ভূমিকা প্রয়োজন। বিশেষ করে ভোটের দিন ভোটাররা যেন বাসাবাড়ি এবং পথে বাঁধার সৃষ্টি না হন। অপর প্রার্থী ইমাম হোসেন তুষার বলেন, আমি জনগণের খুবই সাড়া পাচ্ছি। তবে, স্বতন্ত্র এক চেয়ারম্যান প্রার্থী কদমতলার ভোটারসহ ২ থেকে ৪ নং ওয়ার্ডের ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এমনকি ভোটারদের হুইলচেয়ারে বসানোর হুমকি দিয়েছেন। বিশেষ করে সংখ্যালঘু ভোটারদের বেশি ভয় দেখানো হয়েছে। আ’লীগ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তুষার। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুরাদ হোসেন বলেন, নির্বাচিত হলে সৎ ও ন্যায়ের পথে থেকে মানুষের সেবা করতে চাই। এদিকে, নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জারজিদ মোল্যার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পেড়লী ইউপিতে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১১ এবং নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ইউপিতে ভোটার ১৬ হাজার ২৬৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৯৭১ এবং নারী ৮ হাজার ২৯৭। এলাকাবাসী ও ভোটাররা জানান, দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদে জয়-পরাজয় নির্ধারণে ‘আঞ্চলিকতা’ প্রাধান্য পাচ্ছে। এদিকে, পাঁচগ্রাম ইউপিতে তিন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে। এখানে আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী জহুরুল হক মোল্যা (নৌকা) এবং দলের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম আশিক বিল্লা (ঘোড়া) ও এসএম সাইফুজ্জামান (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে, এখানে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। আ’লীগ প্রার্থী জহুরুল হক বলেন, নৌকা প্রতীকে বিপুল সাড়া পাচ্ছি। আমি নির্বাচিত হয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত জনপদের জন্য কাজ করতে চাই। আশিক বিল্লা জানান, পাঁচগ্রাম ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে এই ইউনিয়নটাকে ‘মডেল’ হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। দলীয় (আ’লীগ) মনোনয়ন না পেলেও জনগণ তার সঙ্গে থাকায় বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। তবে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। যাদবপুর, মহিষখোলা ও পিরোলীস্থান কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় ভোটাররাও শংকার মধ্যে আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আ’লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী সাইফুজ্জামান বলেন, পাঁচগ্রাম ইউপি প্রতিষ্ঠার পর আমি প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এবারও বিজয়ী হলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করতে চাই। তিনি আরো বলেন, দলীয় প্রতীকের চেয়েও আঞ্চলিকতার ভিত্তিতেই জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে। এখানে ‘প্রতীক’ মুখ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। চেয়ারম্যান প্রার্থী আশিক বিল্লাও ‘আঞ্চলিক ভোটের হিসাব’ কষছেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিকতার হিসাব-নিকাশেই চেয়ারম্যান পদে ‘বিজয়’ নির্ধারণ হবে। পাঁচগ্রাম ইউপিতে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে আট এবং সাতটি সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২ ও ৭নং ওয়ার্ডে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সদস্য (মেম্বার) পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে কালিয়া নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এলাকাবাসী জানান, পেড়লী ইউনিয়ন ভেঙ্গে ‘পাঁচগ্রাম’ ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাস্তবে এ অঞ্চলে ‘পাঁচগ্রাম’ নামে কোনো গ্রাম নেই। ২০১২ সালের ১৬ অক্টোবর পাঁচগ্রাম ইউনিয়নে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামি ২৩ মে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ইউপির ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৮১৭ এবং নারী ২ হাজার ৮৪৪ ভোটার।

No comments

Powered by Blogger.