নিখোঁজ শাবি ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু

২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মোস্তাইন রাজ্জাক মামুর (২২)। নিখোঁজ থাকার পর বুধবার ভোরে ফেঞ্চুগঞ্জ রেললাইনের পাশ থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া জয়ন্তিকা ট্রেন ফেঞ্চুগঞ্জ অতিক্রম করার পর ট্রেনলাইনের পাশের ড্রেন থেকে মামুরকে উদ্ধার করা হয়। তিনি শাবির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাবা ডা. আবদুর রাজ্জাক ও মা ডা. হোসনে আরা বেগম স্থানীয় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। মামুরের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের জাওয়াবাজার এলাকায়। তিনি সিলেট নগরীর রিকাবীবাজার এলাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। মামুরের মামা কামাল হোসেন যুগান্তরকে জানান, তার ছেলে মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন।
এরপর থেকে তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না, মুঠোফোনও বন্ধ ছিল। রাতে বাসায় না ফেরায় সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজখবর নেয়া হয়। বাবার ধারণা মামুরকে কেউ ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তার মাথার পেছনে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথায় প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা। দুপুরে ওসমানী হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ফেঞ্চুগঞ্জের ব্যবসায়ী সেলিম উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, জয়ন্তিকা ট্রেন কালাকাঠি এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পর রেললাইনের পাশের বাড়ির কয়েকজন নারী কান্নার শব্দ শুনতে পান। এমন সময় তারা এগিয়ে গিয়ে দেখেন রেললাইনের পাশে ড্রেনের কাছাকাছি একজন তরুণ পড়ে আছেন। যন্ত্রণায় চিৎকার করছেন। পরে তাদের ডাকাডাকিতে লোকজন এগিয়ে আসে। ড্রেন থেকে তাকে উদ্ধার করে রাস্তায় নিয়ে আসা হয়। পরে পরিচয় অনুসন্ধানের জন্য পকেটে থাকা মানিব্যাগ থেকে ট্রেনের একটি টিকিট, ১৫০ টাকা, তার বাবা ডা. আব্দুর রাজ্জাকের একটি কার্ড ও মামুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। এ সময় মামুরের বাবাকে ফোন করে জানানোর পাশাপাশি তাকে সিএনজি অটোরিকশায় তুলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। এ সময় তার মাথার পেছন দিক থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পায়ের দুই গোড়ালিতে কাটা দাগ ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মামুরকে ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে নিখোঁজ থাকার পর মামুরের মৃত্যুর ঘটনায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তার পরিবার গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। মামুরের বাবার সহকর্মী ডা. নাজমুল যুগান্তরকে জানান, ছেলেটি খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। মামুরের মৃতদেহ দেখে তার মনে হয়েছে, এটি নিশ্চিত হত্যাকাণ্ড। তিনি বলেন, ছেলেকে হারিয়ে তার বাবা-মায়ের মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত। এ মুহূর্তে তারা কারও সঙ্গেই কথা বলতে চাইছেন না। আশপাশের লোকজন বলছেন, ভাড়া বাসায় থাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে ওই পরিবারের তেমন যোগাযোগ ছিল না। তাই তারা ওই পরিবার সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না। সিলেট রেলওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যুগান্তরকে জানান, ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু নাকি কেউ তাকে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি জানান, মামুরের পকেটে ট্রেনের দুটি টিকিট পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি মঙ্গলবার রাতের উদয়ন ট্রেনের সিলেট-কুলাউড়া ও অপরটি বুধবার সকালের উপবনের কুলাউড়া-সিলেটের। ধারণা করা হচ্ছে, মামুর সিলেট থেকে কুলাউড়া গিয়েছিলেন এবং ফেরার পথেই ঘটনা ঘটে। তবে রাতে তিনি কোথায় ছিলেন তা নিশ্চিত হলে মৃত্যুর রহস্য বেরিয়ে আসবে। তিনি জানান, মামুরের মোবাইল কললিস্ট পাওয়ার চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.