ভালোবাসার টানে থাইল্যান্ড থেকে নাটোর

ভালোবাসার টানে থাইল্যান্ডের এক সুশ্রী তরুনী নাটোরে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। থাইল্যান্ডে বহু বিবাহের চালু থাকা রীতি পচ্ছন্দ না হওয়ায় বিয়ে না করেই আইবুড়ো হয়ে বসেছিলেন সে দেশেরই এক তরুনী সুপুত্তো ওরফে ওম । ফেসবুকে হটাৎ বাংলাদেশের অনিক খানের সাথে তার পরিচয় হয় এবং ধীরে ধীরে তা ভালবাসায রুপ নেয়। তাকে ভালবেসে আর আস্তা রেখেই ওকে শুধু আপন করে নিতেই বার বার নিজ দেশ চেড়ে বাংলাদেশে ছুটে আসেন তিনি। এবারেই তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি এখন দারুণ সুখি বলে হাসিমুখেই জানান। প্রেমিক অনিক খানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বুধবার বিকেলে নাটোরের আদালত চত্বরে ইংরেজি ভাষায় এসব জনান থাই তরুনী সুপুত্তো ওরফে ওম ওরফে সুফিয়া খাতুন। ওম জানান, তাঁর বাড়ি থাইল্যান্ডের চো-অম জেলার পিচচোবড়ি এলাকায়। বাবা উইছাই ও মা নট্টাফ্রন আলাদা থাকেন ভিন্ন ভিন্ন দেশে। তিনি পড়ালেখা শেষ করে প্রথমে ব্যাংকে চাকরী করতেন।
এখন ফাস্টফুডের ব্যবসা করেন। বন্ধুবান্ধবরা সবাই বিয়ে করেছেন। তারা এনকেই বহুবিবাহে আসক্ত হয়ে পরেছেন। এটা তার ভালো না লাগায় ৩৬ বছর বয়সেও তিনি অবিবাহিতা। দোকানে বসে ফেসবুক ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে বাংলাদেশের ২২ বছরের তরুণ অনিক খানকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠান। অনিক প্রস্তাব সমর্থন করলে তাদের মধ্যে চেনাজানা শুরু হয়। ফোনে কথাবার্তাও চলতে থাকে। তাঁরা পরস্পরকে ভালোবেসে ফেলেন। শুধু কথা বলার সীমাবদ্ধতা তাদের অস্থীর করে তুলে। গত ফেব্রুয়ারীতে তিনি বাবা-মার অনুমতি নিয়ে দেশের সীমানা পেরিয়ে বন্ধুর টানে একবার ছুটে এসেছিলেন বাংলাদেশে। বিমানবন্দরে অনিককে দেখে তার আরও ভালো লাগে। অনিকের পরিবারের সাথে দেখা করে তিনি বিয়ের প্রস্তাব দেন প্রথমে কিন্তু অনিকের পরিবার আপত্তি করে। তবে অনিক ও তার পরিবারের সদস্যদের আদর অপ্যায়নে তিনি মুগ্ধ হন। মাত্র পাঁচ দিনের ভিসা নিয়ে আসায় সেবার তিনি তড়িঘড়ি করে দেশে ফিরে যান। আর যাওয়ার সময় বলে যান ছয়মাস পর আবার আসবেন কিন্তু ছয়মাস অপেক্ষা করতে পারেন তিনি। এ মাসের প্রথমদিকে তিনি আবারও অনিকের কাছে ছুটে এসেছেন। বিয়ে করার জন্য অনিকের পরিবারের সদস্যদের হাতে-পায়ে ধরেন। দিনের পর দিন কান্নাকাটি করেন। না খেয়ে অনশন পর্যন্ত করেছেন। অবশেষে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র একদিন আগে বুধবার তাঁরা ইসলাম ধর্মীয় ও হলফনামামুলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। তার বর্তমানে তাঁর নাম সুফিয়া খাতুন।
সুফিয়া বলেন, মানুষের জীবন একটা জীবন সঙ্গীও হবে একটা কিন্তু তাদের সমাজে তা নেই। তিনি বিশ্বাস করেন অনিক তার জীবনে একমাত্র সঙ্গী হয়েই থাকবে। তাকে পেয়ে আমি সুফিয়া দারুণ খুশি। নাটোর আদলত চত্তরে বসে অনিক খান জানান, তাঁর বাড়ি নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলায়। পড়ালেখা তেমন একটা করেননি। তবে ভাংগা ভাংগা ইংরেজি বলতে ও লিখতে পারেন। সেখানে তাঁর একটা মুঠোফোন মেরামতের দোকান রয়েছে। দোকানে বসে অলস সময় কাটাতে গিয়ে ফেসবুকে ওমের সাথে তর পরিচয় হয়। এখন তারা একে অপরের সাথে সব সময় যোগাযোগ না রেখে থাকতে পারেন না। সুফিয়া তাকে একটা ভালো মোবাইল ফোন সেট উপহার দিয়েছেন। তাঁদের উভয়ের ফোনে সব সময় ইন্টারনেট সংযোগ থাকে। তারা ভিডিও কল করে দীর্ঘসময় কথা বলেন। এভাবেই তারা পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছেন। একে অন্যকে ছেড়ে থাকতে পারবেন না তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রের আইনকানুন মেনেই তারা সুখের সংসার গড়তে চান। অনিক বলেন, সুফিয়া এখন তার জীবনের একটি অংশ। ওর সাথেই সারা জীবন থাকতে চান। অনিকের বাবা আজাদ হোসেন বলেন, মেয়েটি খুবই ভাল। মাত্র ক’দিনে সে আমাদের আপন করে নিয়েছে। আমরা গরীব মানুষ, শিক্ষিত না কিন্তু তাতেও ওর কষ্ট নাই। আমাদের ছেড়ে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভেবে সে সারাক্ষণ মন খারাপ করে ছিল। ওর জন্য এখন তাদেরও কষ্ট হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.