ট্রাম্প-কমির আলাপের তথ্য চেয়েছে কংগ্রেস

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সদ্য বরখাস্ত হওয়া গোয়েন্দাপ্রধান জেমস কমির কথোপকথনের সব নথি জমা দিতে এফবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান সদস্য এবং হাউস অভারসাইট (নজরদারি) কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাসন শ্যাফেজ বলেন, আগামী ২৪ মের মধ্যে সব প্রমাণাদি কংগ্রেসে উপস্থাপন করতে হবে। এদিকে হোয়াইট হাউসের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের সঙ্গে রাশিয়ার যোগসাজশ নিয়ে এফবিআইয়ের তদন্ত বন্ধ করতে ট্রাম্প কমিকে চাপ দিয়েছিলেন বলে কমির লিখিত একটি মেমোতে প্রকাশ পেয়েছে। এরপরই এফবিআইকে সে নথি পাঠানোর নির্দেশ দিল কংগ্রেস। কমির ওই মেমোতে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে কমিকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আশা করব আপনি তার (ফ্লিন) বিষয়ে তদন্ত করা ছেড়ে দেবেন।’ গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পরই কমি এ মেমোটি লিখেছিলেন। তবে হোয়াইট হাউস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। খবর বিবিসি, সিএনএন ও এএফপির। কমির স্মারকটি প্রকাশিত হওয়ার পর এক টুইটার বার্তায় জ্যাসন বলেন, ‘কমির ওই স্মারকের যদি অস্তিত্ব থাকে, তাহলে রিপাবলিকান পার্টির নজরদারি সংস্থা তা দেখবে। কোনোরকম দেরি না করে এটা আমার দেখার দরকার।
যে কারও বিরুদ্ধে সমন জারি করতে আমার কলম প্রস্তুত।’ এফবিআইর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অ্যান্ড্র– ম্যাকাবিকে এক চিঠিতে শ্যাফেজ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কমির ওই বৈঠকের মেমোটি এফবিআইয়ের তদন্ত বন্ধে প্রেসিডেন্ট কোনোরকম প্রভাব ফেলার চেষ্টা করেছিলেন কিনা, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছে। শ্যাফেজ অপর এক টুইটার বার্তায় বলেন, প্রয়োজন হলে এফবিআইকে তা জমা দিতে বাধ্য করবেন। তদন্ত বন্ধে কমিকে চাপ : ফ্লিন-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে তদন্ত বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করেছিলেন বলে কমির লেখা এক চিরকুট থেকে জানা গেছে। কমির ওই চিরকুট যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শঙ্কা ছড়িয়ে দিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তদন্তে ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছিলেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হোয়াইট হাউস এ অভিযোগ অস্বীকার করে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কমি বা অন্য কাউকে এ তদন্ত বন্ধের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট কিছুই বলেননি। এমনকি ফ্লিনের তদন্ত বন্ধের বিষয়েও নয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন কমি। এই সাক্ষাতের পরই কমি আলোচিত মেমোটি লিখেছিলেন।’ স্মারকটিতে লেখা ছিল- ট্রাম্প কমিকে বলেছিলেন, ‘আশা করছি আপনি এ বিষয়টি (ফ্লিনের রুশ সংযোগ) ছেড়ে দিতে পারবেন। তিনি একজন ভালো লোক।’ এরপরই ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন কমি। এ সাক্ষাতের পরই কমি আলোচিত মেমোটি লিখেছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ওভাল দফতরে ওই বৈঠক চলাকালে ট্রাম্প গণমাধ্যমের কাছে ধারাবাহিকভাবে সরকারি তথ্য ফাঁস হওয়ার নিন্দা জানান। এছাড়া সরকারি গোপনীয় তথ্য ফাঁস করার জন্য সাংবাদিকদের আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা যায় কিনা- এফবিআই পরিচালককে তা খতিয়ে দেখতে বলেন।
কমির চিরকুটটি সত্য হলে তাকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্তে তাৎক্ষণিকভাবে ‘স্বাধীন বিশেষ কৌঁসুলি’ নিয়োগের কথা বলেছেন দেশটির অনেক কংগ্রেস সদস্য। ট্রাম্প-লাভরভ বৈঠকের নথি রাশিয়ার হাতে : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের মধ্যে বৈঠকের নথি মস্কোর হাতে রয়েছে, তা মার্কিন কংগ্রেসের কাছে তুলে ধরতে প্রস্তুত রাশিয়া। এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, ‘যদি মার্কিন প্রশাসন এ নথি নিয়ে কোনো যথার্থতা বের করতে পারে তবে তা হস্তান্তরে প্রস্তুত রয়েছি আমরা।’ ট্রাম্প ও লাভরভের মধ্যে বৈঠকে গোয়েন্দা তথ্য হস্তান্তরের বিষয়টি অস্বীকার করে হোয়াইট হাউস। পরে কার্যত ট্রাম্প স্বীকার করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ অধিকার আমার রয়েছে।’ ‘এটা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’ : আরিজোনা রাজ্যের সিনেটর জন ম্যাককেইন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের কেলেঙ্কারির মাত্রা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির মাত্রায় পৌঁছে যাচ্ছে। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট আয়োজিত এক নৈশভোজে এ কথা বলেন তিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন ম্যাককেইন।
ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা তলানিতে : কমিকে বরখাস্তের পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা অনেকাংশে কমে গেছে। মার্চ মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত ৩৮ শতাংশ জনপ্রিয়তা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশে। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা গ্যালাপ এ জরিপ প্রকাশ করেছে। একই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য প্রেসিডেন্টের তুলনায় জনপ্রিয়তায় সবচেয়ে তলানিতে রয়েছেন ট্রাম্প। ক্ষমতার এ সময়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার জনপ্রিয়তার হার ছিল ৬৪ শতাংশ। জর্জ বুশের ৫৬ শতাংশ এবং বিল ক্লিনটনের জনপ্রিয়তার হার ছিল ৪৫ শতাংশ।

No comments

Powered by Blogger.