বরিশালের প্রকৃতি সেজেছে গ্রীষ্মের ফুলে ফুলে

‘বিস্ময় ভরা দুটি আঁখি, অবাক আমি চেয়ে থাকি, আর ভাবি- কে কে সেই শিল্পী কে?’ এই সময়ে বরিশাল নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেষে হেটে চললে প্রকৃতির নান্দনিকতায় বিশ্বাসী মানুষের মন থেকে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে আসবে এমন গান। শুধু কীর্তনখোলা নদীর পাড় ঘেষেই নয়, বাহারি রঙের ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে কর্মব্যস্ত বরিশালের বিভিন্ন সড়ক, উদ্যান ও বিনোদনকেন্দ্র। আধুনিক এ নগরীতে গাছের সংখ্যা কমতে থাকলেও গ্রীস্মের ফুল নগরবাসীর মনে এনে দিয়েছে ভিন্নরকম প্রশান্তিÍ। চারিদিকে তাকাতেই মনে পরে যায় রবীন্দ্রনাথের সেই গান ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়’ নানান রঙের-ঢঙের ফুলের শোভা প্রচন্ড গরমেও এনে দিয়েছে এক ধরনের স্বস্তি। হয়তো ফুলগুলো দেখলে ক্লান্ত পথিকও মুগ্ধ হয়ে যায়। ক্ষণিকের জন্য হলেও নগরবাসীকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় প্রকৃতির কাছে। ফুল গাছগুলোর নিচে গিয়ে যেন মানুষ ভুলে যায় তাদের বর্তমান। বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান, রাজা বাহাদুর সড়ক, পাশ্ববর্তী ডিসি লেক, বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক ঘিরে অসংখ্য গাছে ফুটেছে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু ও জারুল ফুল। রয়েছে প্যারাসাইট বা পরজীবী ফুলের উপস্থিতি। ওইসবস্থানে ফুলের মুগ্ধতা দেখতে সারাদিন প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ভিড় থাকে। সেখানে কেউ কেউ বন্ধুুদের নিয়ে আড্ডা বসিয়ে দেন, কেউবা আবার সেলফি তোলেন আবার কেউবা পছন্দের মানুষকে নিয়ে ঘুরতে আসেন। বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তেমনই একজন সাইফুল ইসলাম তার স্ত্রী সামিয়া ইসলাম ও কন্যাকে নিয়ে ঘুরতে এসে জানান, সুযোগ পেলেই তারা বিকেলে বাহারি রঙয়ের ফুলের এ রাজ্যে ঘুরতে আসেন। এতে তার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের খুবই ভালো লাগে। গ্রীস্মের দাবদাহ থেকে একটু স্বস্তি দিতে প্রকৃতির এ আয়োজন সত্যিই মুগ্ধকর। নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, কীর্তনখোলা নদী তীরের ডিসি ঘাট সংলগ্ন এলাকা, সার্কিট হাউজ,
চৌমাথা লেক, বিবির পুকুর পাড়, শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ, বিএম কলেজ ক্যাম্পাস ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক জুড়েও রয়েছে বাহারি ফুলের এমন সাজ সাজ রব। কয়েকটি এলাকার রাস্তার দুই ধারে পথগন্ধা ভাঁটফুলসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে। তবে প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে গাছ না কেটে সংরক্ষণ বা আরও বেশি করে গাছ লাগানোর তাগিদ দিয়ে পরিবেশবিদরা বলেন, গ্রীস্মে প্রকৃতিতে গ্রামে একসময় হলুদ-সোনালি ফুলে ছাওয়া অনেক সোনালু গাছ চোখে পরতো। এখন হাতেগোনা কিছু গাছ দেখা যায় পথে প্রান্তরে। দিন দিন কমে আসছে সোনালুর সংখ্যা। কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, এ গাছের কাঠ খুব একটা দামি নয় বলে কিংবা গাছটি খুব ধীরে বাড়ে বলেই কেউ আর তেমন উৎসাহ নিয়ে সোনালু গাছ রোপণ করেন না। প্রাকৃতিকভাবে যা জন্মে তার ওপর ভর করেই হলুদ-সোনালি রঙা ফুলের সৌন্দর্য ছড়িয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সোনালু ফুল। কীর্তনখোলা নদীর তীরে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় ঘুরতে আসা বরিশাল জমজম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুল হক বলেন, গ্রীষ্মের খরতাপে অসহ্য গরমের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে আমরা প্রায়ই ছুটে আসি এই মুক্ত বাতাসে, আর এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও দৃষ্টিনন্দন ফুলপাখির কলতানে আমরা অভিভূত ও বিস্মিত হই। মন থেকে অনায়াসে গেয়ে উঠি- ‘তোমার সৃষ্টি যদি হয় এত সুন্দর, না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর...।

No comments

Powered by Blogger.