ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চাইলেন ১৪ বিবৃতিদাতা

অবমাননার দায়ে বৃটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের দন্ড হওয়ার পর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয়া ৫০ নাগরিকের মধ্যে ১৪ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ  ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বিবৃতিদাতাদের ২৭শে জানুয়ারির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের আচরণের ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিকসহ ১৪ জন মঙ্গলবার ক্ষমার আবেদন করেন। এছাড়া, স্বাস্থ্য অধিকারকর্মী জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ দশজন নিজেদের পক্ষে নিজেরাই শুনানি করবেন বলে আদালতে ব্যাখ্যা দাখিল করেছেন। ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ পাওয়া বাকি ২৫ জন এই রুলের শুনানির জন্য আইনজীবী আনিসুল হাসানের মাধ্যমে সময় চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত ১৪ জনের আবেদন ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়েছে। ২৫ জনের মধ্যে বিদেশে অবস্থানরত ১১ জন ই-মেইলের মাধ্যমে সময়ের আবেদন করায় তাদের আবেদন আদালত আমলে নেয়নি। এ বিষয়ে ‘সঠিক মাধ্যমে’ আবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের। এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করতে ‘উদ্দেশ্যমূলক প্রচার চালানোর’ দায়ে গত ২রা ডিসেম্বর সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। সাজা হিসেবে এই নাগরিককে ওইদিন আদালতের পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় তাকে। এরপর ২০শে ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলো ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। একই আদলে ২৩শে ডিসেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমসও একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। ওই সংবাদগুলো ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি কটাক্ষ’ বলে মনে হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল প্রথম আলোর কাছে ওই বিবৃতির ‘পূর্ণাঙ্গ কপি’ দেখতে চায়। সে অনুযায়ী প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ ওই ৫০ নাগরিকের পক্ষে বিবৃতি পাঠানো হানা শামস আহমেদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ও ঠিকানা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে। প্রথম আলো জানায়, গত ১৮ই ডিসেম্বর হানা শামসই ই-মেইলের মাধ্যমে ওই বিবৃতি পাঠায়। আদালতের নির্দেশে বিবৃতিদাতা ৫০ নাগরিকের মধ্যে ৪৯ জনের পরিচয় ও ঠিকানা গত ১৪ই জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক। ৫০ নাগরিকের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী খুশি কবির পরে বিবৃতির বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন জানিয়ে নিজের নাম সরিয়ে নেন। নাম-ঠিকানা পাওয়ার পর বিচারক বিবৃতিদাতাদের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে শাহদীন মালিক এবং সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের পক্ষে ব্যাখ্যা দাখিল করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবী এম শামসুল হক। অপর ১২ জনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ক্ষমার আবেদন করেন তাদের আইনজীবী। ওদিকে, নিজের ব্যাখ্যার শুনানি নিজেই করবেন জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আদালতের নিকট বিবৃতির বিষয়ে নিজেরাই ব্যাখ্যা করবো। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাক-স্বাধীনতার অধিকারে বিবৃতি প্রদান করেছি।

No comments

Powered by Blogger.