ভারত সফর শেষ- সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় তুলে ওবামার বিদায় by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

তিন দিনের সফর শেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারত ছাড়লেন, এখানকার শেয়ারবাজারও চড়চড় করে বেড়ে গেল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওবামার বিমান সৌদি আরবের দিকে উড়তে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই মোদি টুইট করলেন, ‘বিদায় হোয়াইট হাউস, আপনার এই সফর ভারত-মার্কিন সম্পর্ককে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেল, এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।’ হোয়াইট হাউসও প্রত্যুত্তর দিল, ‘এই স্মরণীয় সফরের জন্য নরেন্দ্র মোদি আপনাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ ভারতের জনগণকে, উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য।’
দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং দুই নেতার ব্যক্তিগত রসায়ন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এই টুইট, মার্কিন প্রেসিডেন্টকে মোদির ‘বারাক’ বলে সম্বোধন, বারবার দুজনের দুজনকে বুকে জড়িয়ে ধরা, একে অন্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া এসবের মধ্য দিয়ে বেশ বোঝা গেছে। যে দেশের প্রেসিডেন্ট নিরাপত্তার কারণে কখনো পৌনে এক ঘণ্টার বেশি খোলা আকাশের নিচে থাকেন না, সেই মানুষটি ঝাড়া দুই ঘণ্টা সোয়া লাখ মানুষের সঙ্গে বৃষ্টিতে একরকম ভিজলেন। এটাও তো অভূতপূর্ব! এর বাইরে গতকাল মঙ্গলবার সকালটা ভারতবাসী মোহিত থাকল ওবামার বাক চাতুর্যে। দিল্লির সিরি ফোর্ট অডিটোরিয়ামে পৌনে এক ঘণ্টার এক অলিখিত ভাষণে তিনি সেই কথাগুলো বললেন, যা শুনতে ভালোবাসে সবাই। স্বামী বিবেকানন্দ থেকে শুরু করে ওবামা উল্লেখ করলেন শাহরুখ খান (এমনকি শাহরুখের সিনেমার হিন্দি সংলাপ পর্যন্ত আউড়ে গেলেন অবলীলায়) ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা সিং ও অলিম্পিক পদকজয়ী মেরি কমের নাম। শুধু তাই নয়, মন্তব্য করলেন ভারতের সাফল্যের মূল এ দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মের সংঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন না হলে ভারতের সাফল্য আটকানো যাবে না।
ওবামার সফর ঘিরে আবেগের পাত্র অবশ্যই টইটম্বুর। কিন্তু বাস্তবের লাভ-লোকসানের হিসাব? ওবামা এই যে খুশি মনে সৌদি পাড়ি দিলেন, তার নেপথ্যে অবশ্যই থাকছে পরমাণু দায়বদ্ধতার হাত থেকে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে অব্যাহতি দেওয়া। তিন দিনের সফরের সব থেকে রাখঢাক করার বিষয় এটিই। আইনটা ছিল, দুর্ঘটনা ঘটলে চুল্লি বা জ্বালানি সরবরাহকারীকে দেড় হাজার কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাশ কাটানো ফর্মুলাটা হলো, ওই দেড় হাজার কোটির অর্ধেক দেবে ভারত সরকার, বাকি অর্ধেক দেবে ভারতের ‘জেনারেল ইনস্যুরেন্স কোম্পানির’ (জিআইসি) অধীন চারটি সাধারণ বিমা সংস্থা। বিরোধীদের সম্মিলিত দাবি, আইনকে কেন এভাবে পাশ কাটানো হলো এবং দায়বদ্ধতা কেন ভারতের করদাতাদের ঘাড়ে পড়বে? নরেন্দ্র মোদিকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে আজ বা কাল।
কিন্তু এর বাইরে মোদির হাসি চওড়া হওয়ার উপাদান যথেষ্টই। অবকাঠামো ক্ষেত্রে ওবামা ৪০০ কোটি ডলারের সাহায্য ঘোষণা করেছেন। নবায়নযোগ্য শক্তি ক্ষেত্রে ২০০০ কোটি ডলার এবং ছোট ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে ১০০ কোটি ডলারের ঘোষণাও উল্লেখযোগ্য। সামরিক ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ এবং উৎপাদনের অঙ্গীকারও ওবামা করে গেলেন। মোদি ও ওবামা দুজনেই বলেছেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একে অন্যের সেরা ‘সহযোগী’। এই সহযোগিতার চরিত্র কী রকম, ওবামাকে তার পরিচয় মেয়াদ শেষের আগে আগামী দুই বছরের মধ্যেই রাখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.