বিতর্কিত বিশেষ বিধানের মেয়াদ চার বছর বাড়িয়ে বিল পাস

দরপত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কেনাকাটার জন্য বিতর্কিত বিশেষ বিধানের মেয়াদ আরও ৪ বছর বাড়ানো হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে এসংক্রান্ত বিল ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০১৫’ পাস হয়েছে। এ ছাড়া সংসদে ‘বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল আইন-২০১৫’ পাস হয়েছে। যে আইনের আওতায় স্বতন্ত্র জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল গঠন করা হবে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলা সংসদ অধিবেশনে বিল দু’টি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। পরে বিল দু’টি কণ্ঠভোটে পাস হয়। বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যরা বিল দু’টি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করলেও তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলাসহ এই খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে বলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সংসদে দাবি করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বড় ধরনের  বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’ পাস করেছিল। এই আইনের আগে সরকারি সকল কেনাকাটা দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে করতে হতো। বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবিলায় জরুরি প্রয়োজনে ২০১০ সালের ১২ই অক্টোবর থেকে এই আইন কার্যকর হয়েছিল। যার মেয়াদ পরে আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। সর্বশেষ নতুন আইন পাসের মাধ্যমে এই আইনের মেয়াদ আরও  চার বছর বাড়ানো হলো। সংশোধিত আইনটিতে বিদ্যুৎ জ্বালানি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া ও প্রক্রিয়াকরণ কমিটির মাধ্যমে পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায় থেকে চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক বা ক্রয় বিষয়ক ধারা রয়েছে। এই আইনের আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ কিনতে এ পর্যন্ত ২০টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ১৫টি কুইক রেন্টাল ও ৫টি রেন্টাল বিদ্যুৎ কোম্পানির ২২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তি হয়েছে। যার মধ্যে ১৩টি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ৫ বছর করে বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ১৫টি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট) স্থাপনের চুক্তি করেছে পিডিবি। জ্বালানিখাতে এই আইনের আওতায় রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্যাস ক্ষেত্রের ১০টি উন্নয়ন কূপ খননের চুক্তি করেছে পেট্রোবাংলা। আর গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ৮টি চুক্তি করেছে। সর্বশেষ এই আইনের আওতায় চলতি বছর কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক্সট্রা অয়েল অ্যান্ড এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে অনুস্বাক্ষর করেছে পেট্রোবাংলা। এদিকে সংসদে পাস হওয়া বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিল আইনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ে একটি গবেষণা কাউন্সিল গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও গবেষণা ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। জাতীয় চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যোগোপযোগী গবেষণা পরিচালনা এবং বিদ্যমান গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহের সমন্বয় সাধন অত্যাবশ্যক। এজন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব গবেষণার পাশাপাশি দেশে বিদেশে বিদ্যমান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় সাধনসহ গবেষণায় প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অর্থ সংগ্রহ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.