শান্তিরক্ষীদের অবদান কি ম্লান হবে! by ইকতেদার আহমেদ

জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নামটি উচ্চারিত হওয়ার সাথে সগর্বে যে দেশের কথা চলে আসে, সেটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দেশ হিসেবে নবীন হলেও বিশ্বশান্তি রক্ষায় অনন্য অবদান রেখে চলেছে। ইরাক-কুয়েত যুদ্ধপরবর্তী সর্বপ্রথম ১৯৮৮ খ্র্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাতিসঙ্ঘের অধীন শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান এবং এর পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশ সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীর দেড় লাখের কাছাকাছি সদস্য বিদ্রোহ, কলহ ও সঙ্ঘাতে লিপ্ত দেশ ও জাতিগুলোর মধ্যে শান্তি স্থাপন ও স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। বর্তমানে জাতিসঙ্ঘ বাহিনীর অধীনে কর্মরত বাংলাদেশের চারটি বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ১০ সহস্রাধিক। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির চার হাজার ২৮৮ কিলোমিটার স্থল সীমানার মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের ১৯৩ কিলোমিটার ছাড়া অবশিষ্ট সীমানা ভারতের সাথে। দক্ষিণ-পূর্ব দিকের সীমানা মিয়ানমারের সাথে। বাংলাদেশের দক্ষিণ দিক সাগর দিয়ে উন্মুক্ত। আয়তন, লোকসংখ্যা, অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির দিক থেকে আমাদের এ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের অবস্থান অনেক সুসংহত। ভারতের সামরিক বাহিনীর শক্তি-সামর্থ্যরে কাছে আমাদের সামিরক বাহিনীর কোনো তুলনা হয় না। ভারতকে সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে আমরা যদি আমাদের প্রতিরক্ষানীতি গ্রহণে উদ্যত হই, সে ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিনষ্টসহ আমাদের সম্পদের ক্ষতি হবে। তা ছাড়া এর মাধ্যমে আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। তাই বলে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য অত্যাধুনিক সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রয়োজন নেই, এ কথা বলা যাবে না। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্মের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, ভারতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া আমাদের মুক্তি বা স্বাধীনতা সংগ্রাম দীর্ঘায়িত হতো; তবে কত দীর্ঘায়িত হতো সেটি বোধকরি হিসাব করে বলা মুশকিল।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত ও পাকিস্তানের বিভাজন ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে হলেও ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের বিভাজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম জাতিগত জাতিসত্তার ভিত্তিতে। ধর্মীয় জাতিসত্তা পাকিস্তানের অখণ্ডতা অক্ষুণœ রাখতে না পারায় বহু জাতিতে বিভক্ত ভারত শুধু ধর্মীয় জাতিসত্তার ওপর ভর করে যদি সম্মুখপানে এগিয়ে চলতে চায়, তবে ভারতের অখণ্ডতা রক্ষায় যে তা হুমকি হয়ে দেখা দেবে, এ কথা ভারতের ধর্মান্ধ রাজনীতিবিদেরা বিশ্বাস না করলেও প্রগতিশীলেরা বিশ্বাস করেন।্ আর ভারতের অখণ্ডতা যেকোনা রাজনৈতিক কারণে হুমকির মুখোমুখি হলে সে ক্ষেত্রে ভারত তার প্রতিবেশীদের চেয়ে সামরিক বা অর্থনৈতিক দিক থেকে যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তা অখণ্ডতা রোধে খুব একটা সহায়ক হবে না। এ কারণেই যেকোনা দেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রয়োজন গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তন। ভারত রাষ্ট্রটিতে শুরু থেকে কেন্দ্র ও রাজ্যে গ্রহণযোগ্য এবং অর্থবহ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হওয়ায় শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এ রাষ্ট্রটি তার অখণ্ডতা ধরে রেখে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলছে। ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে দেখা যায়, শুরু থেকে দেশটিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় বিভিন্ন অপশক্তির মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সেখানে বারবার গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে ব্যর্থ হয়েছে।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী পূর্ব পাকিস্তানভিত্তিক আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানের শাসনক্ষমতা পরিচালনার ভার দেয়া হলে রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামের আবশ্যকতা দেখা দিত না। বাংলাদেশ জন্মের পর বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে আমরা ৪৩ বছর অতিক্রম করেছি। এ ৪৩ বছরে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হলেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তা হতাশাব্যঞ্জক। পাকিস্তানের মতো আমাদের বাংলাদেশেও গণতন্ত্র বারবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এর প্রত্যেকটিতেই ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হয়েছে। অপর দিকে অন্তর্বর্তী, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে নির্বাচনের অব্যবহিত আগের ক্ষমতাসীন সরকারের পরাজয় ঘটেছে। আমাদের ক্ষমতাসীন দলগুলো কখনো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারায় আমাদের দেশে এখনো ক্ষমতাসীন দল সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করে বিজয়ীদের কাছে পরাজয় মেনে নেবে, এমন আস্থা সৃষ্টি করতে পারেনি।
বাংলাদেশের যে চারটি বাহিনী শান্তিরক্ষী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন সঙ্ঘাতপূর্ণ দেশে নিয়োজিত তারা সঙ্ঘাতপূর্র্ণ দেশের মানুষসহ বিশ্ববাসীর কাছে যে বাংলাদেশের সুনাম উজ্জ্বল করেছে, এ বিষয়ে কারো মধ্যে দ্বিমত নেই। কিন্তু বাংলাদেশের সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য দেশের অভ্যন্তরে অপারেশন কিন হার্টসহ বিভিন্ন অভিযান পরিচালনাকালীন এবং র‌্যাবের সদস্য হিসেবে ক্রসফায়ারে মৃত্যুর ঘটনা সংঘটনসহ অপহরণ, গুম, খুন, চাঁদাবাজি প্রভৃতি জঘন্য অপরাধের সাথে জড়িত হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে এসব বাহিনীর ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ুণœœ হয়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই এসব বাহিনীকে রাজনৈতিক সরকার পরিচালনা করে থাকে। আমাদের দেশে এসব বাহিনীর যেসব সদস্য অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, তা যে রাজনৈতিক সরকারের সমর্থন ছাড়া সম্ভব নয়, এ প্রশ্নে কোনো বিতর্ক নেই। আমাদের দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো ধরনের জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হলে র‌্যাব ও পুলিশ নিজ নিজ অবস্থান থেকে পৃথকভাবে তদন্তকার্য পরিচালনা করে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, তদন্তের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব ক্রিয়াশীল থাকায় তা সুষ্ঠুভাবে তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচারে সোপর্দ করতে সক্ষম হয় না। এ দু’টি বাহিনীর বেশির ভাগ কার্যক্রম এবং দেশের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম যখন শুধু রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত হওয়ার কারণে দেশের অভ্যন্তরে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না, তখন এসব বাহিনীর সদস্যদের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শুধু প্রশংসিতই নয়, বরং বিশ্বস্ত ও আন্তরিক হিসেবে বিবেচিত। বিদেশে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করেছেন এসব বাহিনীর একাধিক সদস্যের সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, বিদেশে তাদের সফলতার মূলে রয়েছে কোনো ধরনের প্রভাব ছাড়া স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ, যা আন্তরিক হতে ও বিশ্বস্ততা অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
বাংলাদেশের যে চারটি শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন সঙ্ঘাতপূর্ণ দেশে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে তারা সঙ্ঘাত নিরসনসহ শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপন এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশগুলোকে স্থিতিশীল করার ব্যাপারে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন। আমাদের শান্তিরক্ষীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম যখন সমুজ্জ্বল, তখন আমরা দেখি আমাদের দেশে সর্বশেষ যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটিকে কোনোভাবেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বলার সুযোগ নেই। এ কথা সত্য, নির্বাচনকালীন দলীয় সরকার ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায় পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে আমাদের কোনো দলীয় সরকারই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারেনি। এসব নির্বাচনে শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য হিসেবে এ চারটি বাহিনীর যেসব সদস্য নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানসহ আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত ছিলেন রাজনৈতিক সরকারের ইচ্ছার কাছে তাদের স্বাধীনতা, ব্যক্তিত্ব ও বিবেক পরাভূত হওয়ায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তারা কেউ-ই তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি। বিদেশের মাটিতে শান্তিরক্ষার দায়িত্বকালীন বাংলাদেশের প্রায় দেড় শতাধিক সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। সর্বাধিকসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৫ ডিসেম্বর। ওই তারিখে সিয়েরালিয়ন ও লাইবেরিয়া থেকে দেশে আসার সময় বেনিনে বিমান দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর ১৫ জন কর্মকর্তা প্রাণ হারান। এ সেনা কর্মকর্তাদের লাশ দেশে আনা হলে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তাদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ জানাজায় দেখা গিয়েছিল দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষের অংশ নেয়ার মাধ্যমে মাঠ পরিপূর্ণ। নামাজে জানাজায় দেশের জনগণের ব্যাপক উপস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সাফল্যের জন্য তাদের প্রতি সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশে গৌরব বৈ অন্য কিছু নয়। সে দিন যেভাবে বিদেশে সংঘটিত ঘটনায় আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিহত হওয়ার কারণে সমগ্র দেশবাসী একতাবদ্ধ হয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল আমরা কি পারি না আমাদের এ দেশ ও জাতিকে সম্মুখপানে এগিয়ে নেয়ার জন্য অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সরকার পরিবর্তনের একটি চিরস্থায়ী ব্যবস্থার জন্ম দিতে। আর তা করতে গেলে এ চারটি বাহিনীর সদস্যসহ শৃঙ্খলাবাহিনীর অপর সদস্যদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে হবে এটি অনস্বীকার্য।
বেনিনে মৃত্যুজনিত দুর্ঘটনার ১১তম বার্ষিকীতে বাংলাদেশে ইউএনপিএফ এবং সেনা সদরের সহায়তায় রাওয়া কাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ওই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে বলেনÑ আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা বিদেশের মাটিতে সফল কিন্তু দেশের মাটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সফল নন কেন। ওই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমারও বক্তব্য দেয়ার সুযোগ হয়েছিল। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমার সাথে সভায় উপস্থিত অনেকে একমত পোষণ করেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত ভারতের ভূখণ্ড বিচ্ছিন্নতাবাদীদের, তাদের দিয়ে সংঘটিত যেকোনো হামলা-পরবর্তী, আশ্রয়স্থল হিসেবে স্থান পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের প্রধান অন্তরায় দূরীভূত হবে না। আমাদের দেশের কিছু কিছু রাজনীতিবিদ এবং একশ্রেণীর জনগণ দেশের বিপুল কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর জন্য অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসহ অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের বিরোধী। তাদের অভিমত, আমরা আমাদের চতুর্দিকে যে প্রতিপক্ষ দিয়ে বেষ্টিত আমাদের পক্ষে কখনো তাদের সমকক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। আর আমাদের এসব সমরাস্ত্র ও অস্ত্রশস্ত্র বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে, যা একাধিকবার দেশের স্থিতিশীলতা ক্ষুণœœ করেছে। তাদের এ বক্তব্য অনেকাংশে সঠিক হলেও আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের বিদেশে শান্তিরক্ষী হিসেবে যখন সাফল্যের কথা শোনা যায়, তখন অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ও অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় যৌক্তিক বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সঙ্ঘাতপূর্ণ দেশে গিয়ে শুধু বিরোধের নিরসন করে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন তা নয়, বরং স্কুল স্থাপনসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ দেখা যায়, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ সিয়েরালিয়নে ‘বাংলা’ সরকারি ভাষা হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার পর ৪৩ বছর পার হলেও যতটুকু সমৃদ্ধি অর্জনের কথা ছিল আমরা তা করতে না পারার পেছনে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই মুখ্য কারণ। আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্মের পেছনে যে কারণ রয়েছে তা হলো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ. প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে ব্যর্থতা। আমাদের এ ব্যর্থতার জন্য ভবিষ্যতে জাতিসঙ্ঘে শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা আলোচিত হচ্ছে। আর সত্যিই যদি ভবিষ্যতে জাতিসঙ্ঘ বহুজাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর তত্ত্বাবধানে আমাদের আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে তা যে ইতোমধ্যে বিদেশে শান্তিরক্ষা কাজের মাধ্যমে আমাদের অর্জিত সুনামকে ম্লান করে দেবে অন্তত সে কথাটি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের রাজনীতিবিদেরা, বিশেষত ক্ষমতাসীনেরা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন, এটাই হোক আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান ও রাজনৈতিক  বিশ্লেষক
iktederahmed@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.