এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা

৫ দিন পর শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সঙ্গে দুশ্চিন্তা সরকারেও। ৬ই জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া বিএনপির নেতৃত্বাধীন  ২০ দলের টানা অবরোধে এখন পর্যন্ত ৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অবরোধের মাঝেও আবার বিভাগ ও জেলা ভিত্তিক হরতালের ডাক দেয়া হচ্ছে জোটের পক্ষ থেকে। পরীক্ষার সময় অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহারের হবে এমন কোন লক্ষণও নেই। এই অবস্থায় পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার। পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তা চেয়ে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া আজ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ৩০০ গজ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ গজ এলাকা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করার প্রস্তাব দেয়া হবে। শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, পরীক্ষার দিন ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের পাশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিপি) মোতায়েন রাখার মতো বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি-জামায়াত যেভাবে সহিংসতা চালাচ্ছে সেখানে আমাদের কঠোর হওয়া ছাড়া উপায় নেই। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীর নিরাপত্তায় যা করা দরকার তাই করবো। এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সারা দেশ থেকে স্কুলে অতিরিক্ত নিরাপত্তা চেয়ে আমাদেরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এরপরই গত রোববার আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের লক্ষ্যে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থাও নিতে বোর্ডগুলোকে নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। পরীক্ষার সরঞ্জাম নির্বিঘ্নে নিতে রেলপথ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে পৃথক পত্র নির্দেশনা পাঠানো হয়। এতে কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার দিনই উত্তরপত্র এবং ওএমআর ফরমসহ গোপনীয় কাগজপত্র শিক্ষা বোর্ডগুলোতে যাতে পাঠানো যায়, সে জন্য এগুলো ডাকঘরে বা রেলস্টেশনে না পৌঁছা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। এর বাইরে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান নিজেও সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) আলাদা পত্র দিয়েছেন। এতে উত্তরপত্রসহ পরীক্ষার সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ৮ দফা নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া হলেও যেদিন হরতালের কর্মসূচি থাকবে সেদিনের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হতে পারে। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবরোধের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, একসঙ্গে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেয়ার মতো লোকবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে নেই। তবে অবরোধের মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে সেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষার মধ্যে অবরোধ প্রত্যাহার হবে না এমনটি ধরে নিয়েই পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি হয়েছে। তবে আমরা তাকিয়ে আছি, ইংরেজি মাধ্যমের মতো এসএসসি পরীক্ষাও বিএনপি অবরোধের আওতামুক্ত রাখে কি না। মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়ার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অবরোধ ও হরতালের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার বেশিরভাগ বোর্ডের প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষার খাতা জেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের বাসাবাড়ি থেকে ২-৩ কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত একটি না একটি পরীক্ষা কেন্দ্র আছে। সুতরাং অবরোধে পরীক্ষা নেয়া কোন সমস্যা হবে না। তবে অবরোধের পাশাপাশি যেদিন হরতাল থাকবে, সেদিনের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হরতালের আগের দিন সন্ধ্যায় পরীক্ষা স্থগিতের বিষয় ও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে সারা দেশে ৭৫ ভাগের মতো পরীক্ষার সরঞ্জামাদি পৌঁছে গেছে। তাই অবরোধসহ রাজনৈতিক কোন কর্মসূচি থাকলেও আপাতত পরীক্ষা পেছানোর কোন চিন্তা-ভাবনা তাদের নেই। জানতে চাইলে এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর মানবজমিকে বলেন, পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। যথাসময়ে পরীক্ষা নেয়া ছাড়া বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আগামী ২৮ তারিখ আইনশৃঙ্খলার সভা ডাকা হয়েছে। এরপর ২৯ তারিখ সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষার বিস্তরিত তথ্য তুলে ধরা হবে। তবে কোন বিভাগ ও জেলায় যদি আলাদা করে হরতাল ডাকে কেবল ওই সংশ্লিষ্ট এলাকার বোর্ডের পরীক্ষা স্থগিত করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা এসএসসি ও সমমানের ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীকে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাদের সঙ্গে অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন। আর লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির কারণেও বিঘ্ন ঘটছে পরীক্ষার প্রস্তুতিতে। অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। পরীক্ষা যথাসময়ে ও নির্বিঘ্নে দেয়া যাবে কি-না, তা নিয়েও ব্যাপক অনিশ্চয়তা কাজ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে। এর আগে গত বছর ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। গতবার পরীক্ষা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হলেও এর আগের বছর (২০১৩ সালে) বিরোধী দলের কর্মসূচির কারণে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছিল। সেবার বিএনপি-জামায়াতের হরতালের কারণে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া গত বছরের শেষ দিকে জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা  পিছিয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.