যৌথবাহিনী নিষ্ঠুর অপারেশনের প্রতিষ্ঠান -বিএনপি

বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি এখন যৌথবাহিনীর নিষ্ঠুর অপারেশনের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, প্রখ্যাত রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হ্যারল্ড লাস্কির এই বহু উদ্ধৃত উক্তিটি হচ্ছে- ‘রাষ্ট্রের চরিত্র কেমন তা বোঝা যায় রাষ্ট্রের কর্মচারীরা কেমন তার ওপর’। লাস্কি’র উক্তিটি যে কতটা কার্যকর তা এখন বাংলাদেশের প্রত্যেকে বুঝতে পারছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি যে এখন বর্বর, নিপীড়ক, দমন-পীড়ন, হত্যা, গুম, খুন ও যৌথবাহিনীর নিষ্ঠুর অপারেশনের প্রতিষ্ঠান তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা যথার্থভাবেই সকলকে টের পাইয়ে দিচ্ছেন। একেকদিন একেকজন কর্মকর্তার বক্তব্য শুনলে মনে হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অস্ত্র যেন আওয়ামী লীগের তহবিল থেকে কেনা। সুতরাং তারা মনে করেন, এই অস্ত্র ব্যবহারে কোন জবাবদিহিতার দরকার নেই। রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগপন্থি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানরা ছাড়পত্র দিয়েছেন তাদের জওয়ানদের। অস্ত্র গোলাবারুদ কেন অকেজো করে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করেছেন র‌্যাবের ডিজি। কেন অস্ত্রশস্ত্র খেলার উপকরণ হিসেবে ফেলে রাখা হয়েছে। কেন যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে না। র‌্যাবের মহাপরিচালক আরও বলেছেন- বিচারবহির্ভুত হত্যা বলে নাকি কিছু নেই। রিজভী আহমেদ এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে বলেন, তাহলে খিলগাঁও ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনিকে কোন বিচারের আওতায় প্রাণদ  দেয়া হয়েছে? কোন আদালতের রায়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর স্বামীকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়? সপ্তাহ খানেক আগে দলের চারজন কর্মীকে ধরে নিয়ে গিয়ে টার্গেট হত্যা করা হয় কোন বিচারে?  রোববার খুলনায় র‌্যাবের মহাপরিচালকের দেয়া বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দর্শন, চিন্তা, নীতি ও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ধারণ করার অপরাধে জনগণের টাকায় কেনা বুলেট দিয়ে এই বিচার বহির্র্ভূত টার্গেট হত্যা করা হয়। এগুলো যদি বিচার বহির্ভূত হত্যা না হয় তাহলে এগুলো কোন বিচারের অন্তর্ভুক্ত হত্যা? এসব দেশবাসী জানতে চায়। রিজভী বলেন, খাল-বিল, নদী নালায় এত লাশ পড়ে আছে কার বিচারে? আজকেও নরসিংদীর তিন কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে আশেপাশে সাতটি লাশ পাওয়া গেছে। এগুলো কিসের আলামত? দুঃশাসন টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্র এখন ভয়াল ঘাতকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারহীন একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকারি কর্মচারীদের দলের আনুগত্য করা বাধ্যতামূলক করা হয়। সেখানে নিরপেক্ষতার ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন করা যায় না। বিএনপি এ নেতা বলেন, বাংলাদেশে চোখের ইশারাও যদি সরকারবিরোধী মনে হয় তাহলেও নিপীড়নের শিকার হতে হবে, সেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এখন বাংলাদেশে বিরাজমান। অমানবিক নাশকতার বিভৎস ঘটনা ঘটানো হচ্ছে সারাদেশ জুড়ে। পেট্রল বোমা মেরে মানুষকে দগ্ধ করার বিরামহীন দৃশ্য দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনে। বার্ন ইউনিটের অমানবিক দৃশ্যকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের আন্দোলনের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে হাইপার প্রচারাভিযান। রিজভী বলেন, কয়েকদিন ধরেই জনশ্রুতি ছিল- সরকার নিজেই একটা বড় ধরনের নাশকতা করবে। যেটির বিদেশ থেকে পরিচালিত একটি পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যাতে পুরো দায়টা বিরোধী দলের ওপর চাপানো যায়। ২৩শে জানুয়ারি রাতেই ডেমরায় বাসে আগুন দিয়ে ৩৫ জন বাসআরোহীদের অগ্নিদগ্ধের ঘটনা ঘটানো হলো। আর পরের দিন শোকে কাতর সন্তানহারা মা খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা দেয়া হলো। সমগ্র ঘটনাটাই একটা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ বলে সর্বসাধারণ বিশ্বাস করে। রিজভী আহমেদ বলেন, পেট্রল বোমা, গান পাউডার, গাড়িতে আগুন লাগিয়ে মানুষ পোড়ানো, লগি-বৈঠার তা বে লাশের ওপর নৃত্য ইত্যাদি সর্বনাশা মরণখেলা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। সুতরাং এই সমস্ত নাশকতাকারীদের পৃষ্ঠপোষকরাই জানে কিভাবে নিজেদের স্বার্থে অমানবিক ঘটনা ঘটাতে হয়। তার প্রমাণ হলো- বিএনপি’র শাসনামলে হোটেল শেরাটনের সামনে বাসে গান পাউডার দিয়ে নয়জনকে পুড়িয়ে মারা এবং ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আকরামকে হত্যা করার পর লাশ পোড়ানোর বীভৎস ঘটনা। রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা অব্যাহত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিএনপি’র ঘোষিত নীতিমালাই হচ্ছে বহু দল ও মতে বিশ্বাস করা, মানবতা ও মানুষের মানবিক সাম্য ঊর্ধ্বে তুলে ধরা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুম আর গুপ্তহত্যা যাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি, পেট্রল বোমা ছুড়ে নাশকতার মতো বন্য ও আদিম হিংস্রতার মানবতাবিরোধী কাজ তারাই সংঘটিত করছে যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।

No comments

Powered by Blogger.